দীপক পাত্র: নিজের দেশে চলছে মৃত্যুমিছিল। আত্মীয় পরিজনদের অনেকের মুখ তাঁর চোখের সামনে থেকে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। সমবেদনা জানাতে যে ছুটে যাবেন তারও উপায় নেই। তিনি অসহায়। এখন তিনি কলকাতায় ‘গৃহবন্দি’। তিনি, মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনা (Kibu Vicuña)। সরকারি ঘোষণা না হলেও, আই লিগ জয় হয়ে গিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মরশুমে তিনি আইএসএল খেলা কেরল ব্লাস্টার্সের কোচ। সবুজ-মেরুন জনতার কাছে তিনিও রীতিমতো সুপারস্টার। লকডাউন না চললে এতদিনে স্পেনে চলে যেতেন। নদার্ন স্পেনের জিজিরকুলে কিবুর জন্ম। সেখানেই নেমে পড়তেন আর্তদের সাহায্য করতে। অসহায় স্প্যানিশদের পাশে দাঁড়াতেন। কিন্তু ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। কলকাতায় থেকেই দেখালেন মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বুঝিয়ে দিলেন কোচ হিসাবে তিনি শুধু বড় নন, আর্তদের সেবায় কীভাবে দাঁড়াতেতে হয় সেটাও তিনি ভালমতো জানেন।
আসল ঘটনায় আসা যাক। কিছুদিন আগে মোহনবাগান ফুটবলার শেখ সাহিল নিজের গ্রাম ডাঙাদিঘিলায় গরিব মানুষদের সাহায্য নেমে পড়েন। দু’দিন ধরে চাল-ডাল-আলু-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিলি করেছেন। বিলি করার কিছু ছবি ইনস্টাগ্রামে ফেলেছিলেন সাহিল। এবং তা ভিকুনার নজরে পড়ে। তিনি যোগাযোগ করেন সাহিলের সঙ্গে। অনুরোধ করেন তাঁকে যেন কর্মকান্ডে সামিল করা হয়। কোচের কথা ফেলতে পারেননি সাহিল। তারপর নিজের সাহায্য সাহিলের কাছে পাঠিয়ে দেন ভিকুনা।
মোহনবাগান (Mohun Bagan) মিডফিল্ডার বলছিলেন, “টিটাগড়ের কাছে ডাঙাদিঘিলা গ্রামে আমি থাকি। সেই গ্রাম-সহ আশপাশে থাকা গরিব মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তুলে দিয়েছি। তার কিছু ছবি ইনস্টাগ্রামে ফেলেছিলাম। কোচ ভিকুনা সেই ছবি দেখে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, তিনিও এই লড়াইয়ে সামিল হতে চান। মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। প্রথমে আমি রাজি হইনি।ভিকুনা জানতে চান, কেন পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি? বলি, আপনি কেন সাহায্য করবেন? আমাদের এখানে অনেকেই আর্থিক সাহায্য করছে। তা নিয়ে আমি এগোচ্ছি। তিনি বলেন, ‘অনেকের সাহায্য যখন নিতে পারছ, তখন আমার কাছে থেকে নিতে অসুবিধে কোথায়?’ এরপর না করতে পারিনি। পরে তিনি আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে দেন। তিনি হয়তো চাননি তাঁর সাহায্যের কথা বাইরে বেরিয়ে পড়ুক। তাই এতদিন আমিও কিছু বলিনি।”
দু’দিন খাবার বিলি করার পর সাহিল গুটিয়ে ছিলেন। আবার মাঠে নামছেন। বললেন, “এবার লক্ষ্য, বারাকপুর, টিটাগড়, খড়দহে যাব। এই সব জায়গার স্টেশন চত্বরে মানুষরা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের পাশে কেউ নেই। আমি যাব। মানবিক ভিকুনা স্যরকে দেখে আমার ভাল লাগছে। ওঁর মনটা কত বড় ভাবুন তো। তিনি না থাকলে আমার হয়তো সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে নামা হতো না। তিনি যেমন ফুটবল মাঠে জুনিয়রদের তুলে এনেছেন, পাশাপাশি আর্তের সেবায় নিজেকে কীভাবে তাদের পাশে দাঁড় করাতে হয়, সেটাও দেখার। স্পেনে অনেকেই মারা যাচ্ছেন। এমনিতেই তাঁর মন খারাপ। তারই মধ্যে ভারতীয়দের পাশে তিনি। এ নিয়ে দু’বার ভাবেননি।”
সত্যি, ভিকুনা বোঝালেন, জাতি, ধর্ম সব কিছুর উপর আসল হল মানুষ। সেই মানবকূল যখন বিপন্ন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে তখন নিজেকে আটকে রাখবেন কেন ভিকুনা?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.