আইএসএল ফাইনালের আগে সাংবাদিক বৈঠকে হাবাস। ছবি-সোশাল মিডিয়া থেকে
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শহরের শ্বাসপ্রশ্বাস জুড়ে এখন শুধুই মোহনবাগান। ত্রিমুকুট জেতার সন্ধিক্ষণে সবুজ-মেরুন শিবির। ডুরান্ড কাপ, আইএসএলের লিগ শিল্ড জেতা হয়ে গিয়েছে আগেই। বাকি কেবল আইএসএল খেতাব। ত্রিমুকুট জয়ের থেকে আর ঠিক এক কদম দূরে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের মোহনবাগান।
সবুজ-মেরুনের প্রতিপক্ষ আবার মুম্বই সিটি এফসি। দিনকয়েক আগে যুবভারতীতে এই মুম্বই সিটিকে হারিয়ে লিগ শিল্ড ঘরে তুলেছে মোহনবাগান। ফাইনালের আগের দিনের সাংবাদিক বৈঠকে আন্তোনিও হাবাস শান্ত। একেবারেই উত্তেজিত নন। প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়াও নয়। তাঁর গলায় বরং প্রতিপক্ষর প্রতি সমীহই ধরা পড়েছে।
বছর তিনেক আগে মুম্বইয়ের কাছে আইএসএল ফাইনালে হেরে গিয়েছিল মোহনবাগান। তবুও এই ফাইনাল কি প্রতিশোধের ম্যাচ নয়? হাবাসের চটজলদি উত্তর, ”এই শব্দটা মাফিয়ারা ব্যবহার করতে পারে। আমার কাছে কোনও ম্যাচই প্রতিশোধের নয়। প্রতিটি ম্যাচই নতুন।”
ফাইনালে মুম্বই সিটিকে হারিয়ে সবুজ-মেরুন কোচ একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চান। শনিবার আইএসএলের মেগা ফাইনালের আগে স্পেনীয় কোচের মুখে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করার কথাই ঘুরে ফিরে এল।
দিনকয়েক আগে এই যুবভারতীতে মুম্বই সিটিকে হারিয়েই লিগ শিল্ড খেতাব জিতেছে মোহনবাগান। মোহনবাগান-মুম্বই ফাইনালের আগেরদিন সাংবাদিক বৈঠকে হাবাস বলছেন, ”আগামিকাল আমাদের বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে হবে। এবং চলতি মরশুমের টার্গেট পূর্ণ করতে হবে। আমি দলে যোগ দিয়েছিলাম যখন, সেই সময়েই ছেলেদের বলেছিলাম লিগ এবং আইএসএল ট্রফি জিততে হবে। ছেলেরা ওদের কাজটা জানে। ফাইনাল জিতে বৃত্ত সম্পূর্ণ করার সুযোগ পাচ্ছি আগামিকাল।”
হাবাস মানেই ম্যাজিক। তিনি যা ধরেন, তাতেই সোনা ফলান। আইএসএলের সফলতম কোচ তিনিই। এবার নিয়ে চতুর্থ বার আইএসএল ফাইনাল খেলতে নামবেন তিনি। চার বারের মধ্যে দুবার খেতাব জিতে ফেলেছেন। একবার রানার্স হয়েছেন।এবারের মেগাফাইনাল জিতে নিলে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবেন হাবাস। টানা দুবার আইএসএল খেতাব জয়ের হাতছানিও সবুজ-মেরুনের সামনে। ফাইনালে নামার আগে মোহনবাগান কোচ বলছেন, ”স্টাফ এবং প্লেয়ারদের সামনে আরও একটা সুযোগ। ভক্ত-অনুরাগীদের অভিনন্দন জানাই। ওদের ছাড়া ফাইনালে পৌঁছনো সম্ভবই ছিল না। আরও একটা ম্যাচ জেতার, আরও একটা খেতাব জেতার জন্য ছেলেদের আরও উচ্চাকাঙ্খী হতে হবে।”
প্রথমবার ঘরের মাঠে আইএসএল ফাইনাল খেলতে নামছেন হাবাস। যুবভারতীতে জনগর্জন উঠবে শনি-সন্ধ্যায়। সমর্থকদের প্রবল জনসমর্থন দ্বাদশ ব্যক্তির কাজ করবে। মোহনবাগান কোচ বলছেন, ”মুম্বইয়ে একটা ফাইনাল আগে খেলেছি। গোয়ায় আরও একটি ফাইনাল খেলেছি। তবে এবারের ফাইনাল সব অর্থেই আলাদা। আমরা ঘরের মাঠে খেলব। আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন সমর্থকরা। এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।”
কাজটা এবার সহজ ছিল না হাবাসের। জুয়ান ফেরান্দো সরে যাওয়ার পরে মাঝ মরশুমে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন স্প্যানিশ কোচ। দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের ভোলবদলে দিয়েছেন হাবাস। অশক্ত শরীরে মুম্বই সিটিকে হারিয়ে লিগ শিল্ড জিতেছেন তিনি। সেই জয়ের পরে অনেকেই মনে করছেন ফাইনালে ফেভারিট মোহনবাগানই। সেমিফাইনালের প্রথম সাক্ষাতে ওড়িশার কাছে হেরে গিয়ে যুবভারতীর দ্বিতীয় সাক্ষাতে ঝড় তুলে জিতেছে সবুজ-মেরুন। স্প্যানিশ মায়েস্ত্রোর পা তবু বাস্তবের রুখা সুখা জমিতে। তিনি বলছেন, ”ফাইনালে কেউই ফেভারিট থাকে না। আমরাও ফেভারিট হতে চাই না। প্রতিটি ম্যাচই চরিত্রগত দিক থেকে আলাদা। প্রথম মুহূর্তে একটা মুভমেন্ট ম্যাচের গোটা ইতিহাসটাই বদলে দিতে পারে। আমার মতে কোনও একটা দলকে ফেভারিট হিসেবে বলা সত্যিই কঠিন। বিশাল সংখ্যক দর্শকদের উপস্থিতির জন্য আমাদের অ্যাডভান্টেজ এটা ঠিক। তবে সমর্থকরা তো আর মাঠে নেমে খেলবেন না।”
আইএসএলের দশ বছর। এই দশ বছরে হাবাসের রেকর্ড ঈর্ষণীয়। তিনি গৃহস্থের গর্ব, পড়শির ঈর্ষা। আইএসএলের অন্যতম সফল কোচও তিনি। মোহনবাগান কোচ বলছেন, ”আমি বলিভিয়া জাতীয় দলের কোচ ছিলাম। লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়া ক্লাবকে কোচিং করিয়েছি, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও সাফল্যের সঙ্গে ক্লাব কোচিং করিয়েছি। গত দশ বছর আমি ভারতের মাটিতে কোচিং করাচ্ছি। ম্যানেজমেন্টের উপরে আমি সন্তুষ্ট। ম্যানেজেরিয়াল কেরিয়ারের শেষ অধ্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি আমি। কোচিং কেরিয়ারেরও শেষ পর্বে আমি। ভারতের মাটিতে ট্রেনিং করিয়ে আমি খুব খুশি।”
মুম্বই সিটিকে হারিয়েই লিগ শিল্ড খেতাব জিতেছে মোহনবাগান। চেনা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আগে হাবাস বলছেন, ”দুটো ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আগের ম্যাচ আর এই ম্যাচের মধ্যে কোনও মিলই নেই। আইএসএল খেতাব জিততে হলে আমাদের হারানোর সুযোগ ওদের সামনে রয়েছে। আবার আমাদেরও সুযোগ থাকছে। দুটো ম্যাচ কখনওই এক নয়। প্রতিটি ম্যাচের চরিত্রই আলাদা। ফাইনালের প্রথম মিনিট থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত আমাদের ফোকাস রাখতে হবে। ফোকাস সরিয়ে নিলে চলবে না।”
কিন্তু লিগ শিল্ড আর ফাইনালের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? বিচক্ষণ কোচ বলছেন, ”লিগ শিল্ড জেতা অনেক কঠিন। কারণ লিগের সেরা দলই শিল্ড জেতে। প্রতিপক্ষের সংখ্যাও অনেক বেশি থাকে। লিগ শিল্ড এবং ফাইনাল অবশ্যই স্পেশাল ম্যাচ। পয়েন্টের মাধ্যমে লিগ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হয়। কিন্তু ফাইনাল তো আর পয়েন্টের খেলা নয়। খেতাবের জন্য ম্যাচ জিততে হয়।”
ফাইনালের আগেরদিন হাবাসের মুখে বাস্তবের ছোঁয়া। বাস্তববাদী কোচই মোহনবাগানকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.