সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৩০? ৩২? নাকি ৩৩? মনে করতে পারলেন না মজিদ বাসকর।পারলেন না জামশিদ নাসিরিও। ঠিক কত বছর পর আবার দেখা হল দুই বন্ধুর?মাঝে ইরানে গিয়ে বন্ধুর মোবাইলে জামশিদের সঙ্গে মজিদের কথা হলেও দেখা হয়নি। তাড়াহুড়োয় সেই বন্ধুর থেকে মজিদের নম্বর নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাই দুই বন্ধুর কথা বার্তায় বিরতি। শেষে মজিদের যখন ব্যক্তিগত নম্বর পাওয়া গেল, তখন ফিরে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বসে ফোনে কথা। কিন্তু দেখা? সেই কতদিন পর। তাই রবিবার দুই বন্ধুর দেখা হতে জড়িয়ে ধরলেন একে অপরকে। জামশিদ বলছেন, “কতদিন পরে দেখা হল? ৩০ হবে হয়তো। না, মনে হয় ৩২ বছর।’’ শুনে হাসছেন মজিদ।
এক সংবাদমাধ্যমের অনুরোধে জামশিদ গিয়েছিলেন মজিদের হোটেলে। যেহেতু সংবাদমাধ্যমের অনুরোধে যাওয়া, তাই চাইছিলেন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য আলাদা কোনও জায়গা। সেটা হয়েও গেল। বন্ধুকে বললেন, সিসিএফসি ক্লাবে যেতে। ফুটবলের বাদশা ফুটবল থেকে দূরে থাকবেন এমন হয় না কি? সিসিএফসিতে চলছিল, ডুরান্ড খেলতে আসা বেঙ্গালুরু এফসির অনূর্ধ-১৮ দলের সঙ্গে সিসিএফসির ফুটবল ম্যাচ। বন্ধুকে সেখানেই নিয়ে গেলেন জামশিদ। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার আলভিটো ডি’কুনহা তখন প্রদর্শনী ম্যাচ খেলছেন সিসিএফসি-র হয়ে। হঠাৎ হাতের সামনে মজিদকে দেখে অবাক সিসিএফসি-র সদস্যরা। সুযোগ আসতেই যে পারলেন মজিদের সঙ্গে ছবি তোলার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লেন।
মাঠের ধারে চেয়ার টেনে বসলেন বাদশা। কফি এল। পাশে এসে বসলেন জামশিদ। মজিদের মাথার পাকা চুল দেখে বললেন, “আমাদের দু’জনের শেষ যখন কলকাতায় দেখা হয়েছিল, তখন আমাদের মাথার চুল কালো ছিল।” হাসতে হাসতে মজিদ বললেন, “আমরা দু’জনেই এখন বুড়ো হয়ে গিয়েছি।’’ জামশিদ বললেন, “ফুটবল ম্যাচের পর আমি টেনিস খেলব। এক রাউন্ড খেলবে!” মজিদ বললেন, “ফুটবল ম্যাচটা দেখে হোটেলে ফিরব। সেখানে ক্লাবের ঠিক করে দেওয়া কিছু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ক্লাবের কয়েকজনের আবার আসার কথা আছে। দেখছি, যদি সব কিছু তাড়াতাড়ি হয়, তাহলে ডিনারে আসব।”
আমার ইচ্ছে, একদিন তোমাকে লাঞ্চে বাড়িতে নিয়ে যাই। মজিদ বললেন, “এখনও জানি না পরের দু’দিন কোথায় যেতে হবে। তবে দেখে ভাল লাগছে, তুমি কিন্তু এখনও বেশ ফিট।’’ “তোমারও তো পেটে মেদ নেই।” মজিদকে বললেন জামশিদ। পাশের চেয়ারে যখন কেউ থাকছেন না, তখন নিজেদের ভাষায় কথা বলছেন মজিদ-জামশিদ। পাশে স্থানীয় কেউ এলে ইংরাজিতে। পরে জামশিদ তর্জমা করে দিলেন নিজেদের আলোচনা। এবার মজিদ জানতে চাইলেন, সোমবার ক্লাবের অনুষ্ঠানে জামশিদ আসছেন কী না। হেসে জামশেদ বললেন, “এখনও ঠিক করিনি। নাও যেতে পারি। দেখা যাক কী হয়। তবে গেলে তোমাকে আগে জানিয়ে দেব। ’’
বেঙ্গালুরু আর সিসিএফসির ফুটবলাররা ম্যাচ শুরুর আগে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে পড়লেন। অনুরোধ গেল মজিদ—জামশিদের কাছে, দু’জনে যেন ফুটবলারদের সঙ্গে করমর্দন করেন। সেই সব পর্ব সারার পর মাঠের বাইরে বসে পুরো ম্যাচটা দেখলেন মজিদ। মাঠ ছাড়ার আগে জামশিদকে মজিদ বললেন, “সোমবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে ফুটবল নিয়ে মাঠে নামব। এখানে এসে ফুটবল থেকে কী করে দূরে থাকব! বল দেখলেই আমার মাঠে নামতে ইচ্ছে করে। একসময় চুটিয়ে খেলেছি। এখন কী করে সেই ফুটবলকে দূরে সরিয়ে রাখি বলো।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.