দুলাল দে, দোহা: ৩৭ বছর বয়সে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিশ্বকাপ খেলতে আসা যেমন ‘অপরাধ’-গোত্রীয় পর্যায়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল, লুকা মদ্রিচের ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও নেই। বরং এক্ষেত্রে লোকজন ক্রোয়েশিয়ান অধিনায়কের বয়স নয়, স্টিয়ারিং হাতে পুরো ক্রোয়েশিয়া দলটাকে যেভাবে চালাচ্ছেন, সেটাই বেশি করে প্রচারিত হচ্ছে। আর কে না জানে, কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মঙ্গলবার রাতের লড়াইটা আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ক্রোয়েশিয়ার পাশাপাশি লিওনেল মেসির বিরুদ্ধে লুকা মদ্রিচেরও।
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে চোখের সামনে দিয়ে বিশ্বকাপ জার্মানিতে চলে যেতে দেখেছিলেন মেসি (Lionel Messi)। আর সেই একই দৃশ্য মাত্র চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের ঘরে চলে যেতে দেখেছেন লুকা। এবার কি আর সেই একই ভুল করবে ক্রোয়েশিয়া? তবে তার আগে মঙ্গলবার প্রথম বাধাটা পার হতে হবে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। আর আর্জেন্টিনার বাধা বলতে যে মেসিকে আটকানো, সেটা বলাই বাহুল্য। যে কারণে ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার ব্রুনো পেটকোভিচ বলছেন, ‘‘আপনারা শুধু মেসির কথা বলছেন। আমরা চাইছি পুরো আর্জেন্টিনা দলটাকে থামিয়ে দিতে। সেখানে মেসি একজন ফুটবলার মাত্র। আমরা শুধুই মেসিকে থামানোর জন্য মাঠে নামব না।’’
শুধু মেসি নন। আর্জেন্টিনার (Argentina) পুরো দলটাকে আটকানোর পরিকল্পনার কথা বলছেন ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড। কিন্তু যখন নিজের দলের লুকা মদ্রিচের কথা উঠছে, ঠিক তখনই পেটকোভিচ বলছেন, ‘‘লুকার কাছে বল দেওয়া মানে, আপনি ব্যাংকের সেফটি লকারে বল পাঠিয়ে দিলেন।’’ নিজেদের অধিনায়কের উপর এতটাই ভরসা তাঁর দলের ফুটবলারদের।
কার্ড সমস্যায় আর্জেন্টিনা দু’জন ফুটবলারকে পাবে না। ক্রোয়েশিয়ায় (Croatia) অবশ্য সেরকম কোনও সমস্যা নেই। ব্রাজিলকে হারিয়ে শেষ চারে পৌঁছে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে নামার আগে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী সবাই। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলারটির নাম যেহেতু লিওনেল মেসি, তাই শেষ চারের লড়াইয়ে নামার আগে বারবার করে নিজের দলের ফুটবলারদের সতর্ক করছেন লুকা মদ্রিচ। কারণ, রিয়াল মাদ্রিদ তারকা জানেন, ক্রোয়েশিয়ার মুহূর্তের অসাবধানতায় মেসি কী করে দিতে পারেন। তাই সতীর্থদের উদ্দেশে মদ্রিচ বলেছেন, ‘‘মেসিকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না। মুহূর্তের ভুলে মেসি অনেক পার্থক্য করে দিতে পারে।’’
ক্রোয়েশিয়া বললে বিশ্বফুটবলের সবাই দ্রুত লুকা মদ্রিচের (Luka Modric) নাম নেবেন। কিন্তু যে কোচ ২০১৭-তে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন দেশের ফুটবলের নকসাটাই, সেই ক্রোয়েশিয়ান কোচ জ্লাটকো দালিচের কথাও বলতে হবে। এক্ষেত্রে মেসিদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে ক্রোট কোচের সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্লান্তি। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে দালিচ বলেন, ‘‘জাপানের পর ব্রাজিল ম্যাচেও আমাদের অতিরিক্ত সময় খেলতে হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ফুটবলাররা ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। তবে এখানে থেমে গেলে হবে না। দ্রুত নিজেদের রিকভারি করে আগের ম্যাচগুলোর মতোই আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’’
আর ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়েই ক্রোয়েশিয়ান কোচ দেখতে পাচ্ছেন, প্রতিপক্ষ দলে মেসি নামক বিরাট বটগাছটাই ফাইনালে যাওয়ার পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে। কারণ তিনি জানেন, সামান্য সুযোগ পেলে মেসি কী করে দিতে পারেন। দালিচ বলছিলেন, ‘‘নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার ম্যাচটা ভালভাবে দেখেছি। মেসি কিন্তু এই বিশ্বকাপে বেশ ভাল শেপে রয়েছে। আর এই আর্জেন্টিনা দলে মেসি হচ্ছে অনেকগুলো অস্ত্রের মধ্যে একটা। শুধু মাঠের লড়াই নয়। মাঠের বাইরে গ্যালারিতেও প্রচুর দর্শক আর্জেন্টিনার সমর্থনে গলা মেলাবে। জানি এটা আমার ফুটবলারদের উপর মারাত্মক চাপ। কারণ, আমরা সেমিফাইনাল খেলতে নামব এমন একটা দলের বিরুদ্ধে, যারা এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট। ফলে সেমিফাইনাল লড়াইটা আমাদের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।’’
সে দালিচ না বললেও সবাই বুঝে গিয়েছেন, লুকা মদ্রিচ বনাম মেসির লড়াই কতটা রোমহর্ষক হতে চলেছে। প্রশ্ন হল, মেসিও কি চার বছর আগের হারের অপমান মেনে নেবেন? শোধ নেবেন না? আচ্ছা, রাশিয়া বিশ্বকাপে এই ক্রোয়েশিয়াই গ্রুপ ম্যাচে মেসির আর্জেন্টিনাকে তিন গোল দিয়েছিল না?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.