দুলাল দে, দোহা: সৌদি আরব ম্যাচ থেকেই ব্যাপারটা সকলের চোখে পড়ছে। মেসি (Lionel Messi) খেললে ভিআইপি স্ট্যান্ডে দেখা যাচ্ছে তাঁর স্ত্রী অ্যান্তোনেলাকে। সঙ্গে তাঁদের তিন ছেলে। থিয়াগো, মাতেও এবং সিরো। বড়জনের বয়স ১০। তারপর মাতেওর সাত এবং ছোট ছেলে সিরোর বয়স মাত্র ৪। বিশ্বকাপ খেলার সময় পরিবার থেকে দূরে থাকায় মানসিকভাবে যাতে একাকিত্ব বোধ না হয়, তাই স্ত্রী, পরিবার সবাইকে দোহায় নিয়ে এসেছেন লিওনেল মেসি। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু এবার দোহায় চলে এলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়কের মা, সেলিয়া মারিয়াও।
পর পর খেলা থাকার জন্য বিশ্রাম নিতে পারছিলেন না আর্জেন্টিনার ফুটবলারা। তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন কোচ স্কালোনি। ফলে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের পর সুযোগ আসতেই ফুটবলারদের পুরোপুরি বিশ্রাম দিয়ে দেন আর্জেন্টিনা কোচ। সারাদিন বিশ্রাম থাকায় ফুটবলাররা যে যাঁর পরিবারকে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর নিজেদের শিবিরে ডেকেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই মেসিকে দেখা যায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। ঠিক তখনই সবার চোখে পড়ে, দোহায় চলে এসেছেন তাঁর মা।
রাশিয়া বিশ্বকাপের সময় এভাবে আর্জেন্টিনার শিবিরে দেখা যেত না অ্যান্তোনেলা-সহ পুরো পরিবারকে। তাহলে দোহাতে প্রথম ম্যাচ থেকে স্ত্রী-সন্তানদের কেন কাছে কাছে রাখছেন মেসি? তারপর মা’কেও উড়িয়ে নিয়ে চলে এলেন ? অনেক ফুটবলারেরই স্ত্রী, বান্ধবীরা দোহায় রয়েছেন। কিন্তু কারও মা এখনও আসেননি। শেষ কোপা আমেরিকাতেও মেসির পরিবারকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেলিয়া মারিয়াওকে মাঠের ধারে কাছেও দেখা যায়নি। তাহলে হঠাৎ কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস ম্যাচ থেকে মা’কে কেন মাঠে রাখতে চাইছেন মেসি?
স্ত্রী-বাচ্চাদের কেন কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup) সঙ্গে সঙ্গে রাখছেন, তা নিয়ে আর্জেন্টিনার সংবাদ মাধ্যমকে একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। এমনকী, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছবি পোস্টও করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু মা’র উপস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। স্ত্রী-বাচ্চাদের সঙ্গে রাখা নিয়ে মেসির বক্তব্য হল, ‘‘বাচ্চারা এখন একটু বোঝার জায়গায় পৌঁছেছে। কোপাতে আমার সঙ্গে থাকলেও, ভীষণভাবে চাইছিলাম বিশ্বকাপটা ওরা দেখুক। কারণ, বিশ্বকাপের পরিবেশের সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা চলে না।’’ প্রতিটা ম্যাচেই অ্যান্তোলেনার সঙ্গে তাঁর তিন ছেলেকে দেখা যাচ্ছে গ্যালারির ভিআইপি স্ট্যান্ডে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে মেসির স্ত্রী বাচ্চাদের পাশে এবার দেখা যাবে মা’কেও।
কিন্তু এরকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে মেসি মা’কে উড়িয়ে আনলেন, তা নিয়েই এদিন আর্জেন্টিনার সাংবাদিকদের দিনভর চর্চা। এদিন বিকেলে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মেসিরা যখন প্র্যাকটিস করছিলেন, উপস্থিত আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা বলছিলেন, ‘‘মেসি মুখে হয়তো কিছুতেই স্বীকার করবেন না। কিন্তু শেষ বিশ্বকাপ বলেই পরিবারের সকলকে কাছে রাখতে চাইছেন তিনি। যাতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের মুহূর্তে হৃদয়ের কাছাকাছি থাকা সকলকে পাশে রাখতে পারেন।’’ তাহলে কি কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস ম্যাচটাকে কঠিনতম ম্যাচ হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক?
আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা বলছেন, ‘‘কাতার বিশ্বকাপে আর তিনটে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন লিও। তাঁর হাতে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ শোভা পাবে কি না, তা নির্ধারিত হয়ে যাবে এই শেষ তিন ম্যাচে। সেই কারণেই ফুটবল কেরিয়ারের এরকম গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে স্ত্রী-বাচ্চার সঙ্গে মা’কেও সঙ্গে রাখতে চাইছেন তিনি। যাতে স্মরণীয় মুহূর্তটা পুরো পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে পারেন তিনি।’’ বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই নয় গোল করে অতিক্রম করেছেন দিয়েগো মারাদোনার ৮ গোলের রেকর্ড। এবার সামনে শুধুই বাতিস্তুতার ১০ গোল। যা নিয়ে ‘বাতিগোল’ এদিন নিজেই বলেছেন, শেষ ২০ বছর ধরে তিনি এই রেকর্ডটা ধরে রেখেছেন। মেসি যদি শেষ পর্যন্ত তাঁর বেশি গোলের রেকর্ড এই বিশ্বকাপেই ভেঙে দিতে পারেন, তাহলে সবচেয়ে খুশি হবেন তিনি। পাশাপাশি আবার আফশোসও ঝরে পড়েছে তাঁর গলায়, ‘‘খুব বেশি হলে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলার সুযোগ পেয়েছি। সেই কারণেই আর গোল বাড়াতে পারিনি।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.