হুয়ান ভেরন: আপনি স্বীকার করুন বা না করুন, এই বিশ্বকাপটা লিওনেল মেসির। ’৮৬-র বিশ্বকাপ বলতেই যেমন সবার চোখে মারাদোনার (Diego Maradona) মুখটা ভেসে ওঠে, এখন থেকে কাতারের নাম কানে এলেই সবাই মেসির হাসি হাসি মুখটা দেখতে পাবেন। মেসি এখন শুধু আর্জেন্টিনার নয়, গোটা ফুটবলবিশ্বের প্রতিনিধি। ড্রেসিংরুমে, মাঠে যেমন দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তেমনই মাঠের বাইরেও। গোল করছে। করাচ্ছে। নিচে নেমে এসে ডিফেন্সকে সাহায্য করছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করছে। কাতারে মেসির যে রূপ দেখছি, তা কখনও দেখিনি। মেক্সিকো বিশ্বকাপে মারাদোনার মধ্যে যে ক্ষিদে, তাগিদ, উৎসাহ, প্যাশন ছিল। এই মেসির মধ্যেও সেগুলো খুঁজে পাচ্ছে গোটা আর্জেন্টিনা। আমাদের দেশ বিশ্বাস করছে এবার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হবে। হবেই। মাঝে শুধু আর একটা ম্যাচ।
কেন দেশবাসী এতটা আত্মবিশ্বাসী? ক্রোয়েশিয়া ম্যাচটাই দেখুন। নিজেদের নতুন ঘরানা মেনে বলের কন্ট্রোল রাখছিল মদ্রিচরা। আর্জেন্টিনা কিন্তু সেই রাশ নিজেদের দখলে তুলে নিতে একেবারেই সময় নেয়নি। মোলিনা, রোমেরো, ডি’পলরা শুরু থেকেই গত কয়েকম্যাচে তৈরি হওয়া ক্রোট গোলকিপারের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাচ্ছিল। দুই দলের কেউই অহেতুক ঝুঁকি না নিয়ে, বল নিজেদের কন্ট্রোলে রেখে খেলা শুরু করল। দশ মিনিট গড়াতেই ক্রোয়েশিয়া বল পজেশন নিয়ে নিতে থাকল। পরপর কয়েকটা ক্রস আর একটা কর্নার পেয়ে আমাদের ডিফেন্ডারদের বারবার ডিস্টার্ব করতে শুরু করল। এরপরই আলভারেজের সেই স্বপ্নের দৌড়। কী অসাধারণ কন্ট্রোল। পেনাল্টি থেকে মেসির শটটাও অসাধারণ। ওর ওই জোরালো উঁচু শট রোখা অসম্ভব ছিল ডমিনিকের পক্ষে।
তবু কিন্তু ক্রোয়েশিয়া (Croatia) দমেনি। বারবার প্রেস করতে থাকল। কাউন্টার অ্যাটাকে আবার আলভারেজের দৌড়। ক্রোট ডিফেন্ডারদের দোষ থাকলেও ওই দৌড়টাকে সেলাম করতেই হয়। ওই গোলটা মদ্রিচদের মানসিক দিক থেকে প্রায় শেষ করে দিল। হাফ টাইমে ড্রেসিংরুমে কোচের পেপটকের পর ক্রোয়েশিয়া ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। পজেশন রেখে, পেনিট্রেট করে, গোলমুখ খোলার চেষ্টা করতে থাকল। ঠিক যখন মনে হচ্ছিল, এবার না ক্রোয়েশিয়া কিছু একটা করে দেয়, তখনই জ্বলে উঠল মেসি। ভার্ডিয়লকে যেভাবে বোকা বানাল, সেটা হোটেলে ফিরে নিশ্চয়ই বারবার রিপ্লে করে দেখেছে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার। আলভারেজও ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে গিয়েছিল। তাড়াহুড়ো না করে ঠান্ডা মাথায় দারুণ ফিনিশ করল ও। গোটা ম্যাচটা অসম্ভব পরিশ্রম করল। দৌড়, দৌড় আর দৌড়। একদিকে মেসির স্কিল, অন্যদিকে আলভারেজের দৌড়। এই দুইয়ের মিশেলেই পুরো ঘেঁটে গেল ক্রোট ডিফেন্স।
মেসির সঙ্গে প্রায় বছর পাঁচেক খেলেছি। আমাদের সম্পর্ক বেশ ভাল। দুনিয়ার সব অ্যাথলিটের মধ্যেই হার না মানা মনোভাব থাকে। তবে মেসির মধ্যে সেটা যে কী পরিমানে, তা বোঝাতে পারব না। মনে রাখতে হবে, ছেলেটাকে আজীবন মারাদোনার ছায়ার সঙ্গে লড়াই করে যেতে হয়েছে। দেশের জন্য মেসিও তো কম কিছু করেনি। কিন্তু সবসময় মারাদোনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ওকে। বাচ্চা বয়সে সেটা উৎসাহিত করলেও একটা সময়ের পর থেকে নিশ্চয়ই বিষয়টা ও ভালভাবে নিতে পারেনি। সেই তুলনাকে চিরতরে শেষ করে দিতে ও আর মাত্র এক কদম দুরে। আমার বিশ্বাস, এই সুযোগ আর কিছুতেই হাতছাড়া করবে না মেসি। ও বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার। ষোলকলা পূর্ণ করতে বাকি শুধু বিশ্বসেরার তাজ। সেটা নিয়েই ছাড়বে লিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.