সোহম দে: ধিকিধিকি করে আগুনটা বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বলছিল। এ বার সেটা পূর্ণাঙ্গ দাবানলের আকার নিল। ফ্যাক্সে মাত্র দুটো লাইন লিখে বার্সেলোনা (Barcelona) প্রেসিডেন্ট জোসেপ বার্তোমিউকে পাঠালেন লিওনেল মেসি – ‘আমি আর বার্সেলোনায় থাকছি না। চুক্তি অনুযায়ী আমার যে বছর শেষে ক্লাব ছাড়ার ক্লজ আছে সেটাই অ্যাক্টিভেট করতে চাই।’ আর তাতেই বিশ্বফুটবলে বড় মাত্রার কম্পন ধরল। অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। অনেকের কাছে এটা নিছক গুজবও মনে হতেই পারে। কিন্তু মেসি আর বার্সেলোনার অবিচ্ছেদ্য প্রেমকাহিনিতে হঠাৎই দেখা দিয়েছে বিচ্ছেদের এই কালো মেঘ।
আসলে মেসির বার্সেলোনা ছাড়তে চাওয়ার প্রধান কারণ ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ বার্তোমিউ। বরাবরই বার্তোমিউর সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধ ছিল বার্সার সর্বোচ্চ গোলদাতার। বহুবার নিজের ঘনিষ্ঠমহলে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি অভিযোগ জানিয়েছেন যে, বার্তোমিউ বার্সার শীর্ষপদে থাকার যোগ্য নন। এ মরশুমে মেসি-বার্তোমিউ দ্বন্দ্ব যেন অন্য মাত্রা নেয়। জনসমক্ষে এসে ক্লাব প্রেসিডেন্টকে কটাক্ষ করেন মেসি। আবার পালটাও দেন বার্তোমিউ। এই মরশুমে ব্যর্থতার কারণ হিসাবে দলের সিনিয়র ফুটবলারদেরই দায়ী করেন বার্সা প্রেসিডেন্ট। মেসির ধৈর্যের বাধ ভাঙে। তিনি ঠিক করে নেন বার্তোমিউ প্রেসিডেন্ট থাকলে তিনি আর থাকবেন না।
এখানেই শেষ নয়। এরপর আরও একটি কারণ রয়েছে। যা হল বার্সার প্রাক্তন স্পোর্টিং ডিরেক্টর এরিক আবিদাল (Eric Abidal)। ভাবলেও অবাক লাগতে পারে যে, কয়েক বছর আগে মেসির সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর মধ্যে একজন ছিলেন আবিদাল। দু’জনে একসঙ্গে বহু ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু ফুটবলারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর থেকেই আবিদালের উপর চটে যান মেসি। প্রশ্ন তুলে দেন, ঠিক কোন যুক্তিতে দলবদলের বাজারে আঁতোয়া গ্রিজম্যান বা ঔসমান ডেম্বেলের মতো ফুটবলারদের বেশি দামে সই করানো হচ্ছে। যেখানে মেসি বারবার আবিদালকে অনুরোধ করেছিলেন যে, নেইমারকে ফেরানো হোক। কিন্তু আবিদাল পাত্তা দেননি। বরং এমন সমস্ত ফুটবলার কিনেছেন যাঁরা মানাতে পারেনি বার্সার সঙ্গে।
আর এসবের পাশাপাশি সদ্য ঘটে যাওয়া আরও একটি ঘটনা মেসির (Lionel Messi) বার্সা ছাড়ায় ইন্ধন জুগিয়েছে। আর তা হল, মেসির প্রিয় বন্ধু লুইস সুয়ারেজকে (Luis Suárez) দল থেকে কার্যত ছেঁটে ফেলা। সম্প্রতি পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছিলেন উরুগুয়ের তারকা ফুটবলার। হঠাৎই তাঁকে ফোন করেন বার্সার নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান। জানিয়ে দেন, তাঁকে ক্লাব থেকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। সুয়ারজের সঙ্গে এমন আচরণ দেখে ক্ষুব্ধ মেসি ঠিক করে ফেলেন তিনিও আর বার্সায় থাকবেন না। তার উপর আবার নতুন কোচ কোম্যানের সঙ্গেও বৈঠক শেষে মেসি বুঝেই গিয়েছিলেন বার্সার নতুন ডাচ কোচ হয়তো তাঁকে রাখতে অত বেশি ইচ্ছুক নন। সব মিলিয়ে তৈরি হয় বছরের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য শিরোনাম যে মেসি নিজের প্রিয় ক্লাব ছাড়তে চান।
শোনা যাচ্ছে, ম্যান ইউনাইটেড (Manchester United) ও ম্যান সিটি (Manchester City) দুটো ক্লাবই রয়েছে মেসিকে সই করানোর দৌড়ে। আর দুই ম্যাঞ্চেস্টার ক্লাব ছাড়াও ইন্টার মিলান (Inter Milan) ও PSG–ও তাদের স্বপ্নের ফুটবলারকে ক্লাবে আনতে চায়। তবে পাল্লা ভারী পেপ গুয়ার্দিওয়ালার সিটির দিকেই। শেষমেশ কোন জার্সি গায়ে নামবেন মেসি সেটা এখনও ঠিক নয়। তবে বার্সায় সর্বকালের সেরা রূপকথা যে শেষের দিকে। সত্যি এটা ২০২০-ই বটে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.