সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সালটা ২০১৪। ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানায় বিশ্বজয়ের লড়াইয়ে জার্মানির মুখোমুখি আর্জেন্টিনা। নিন্দুকদের চোখ এঁটেছিল লিও মেসির দিকে। কিন্তু মুলার, গোৎজেরা সেবার চোখের জলে ভাসিয়েছিলেন ফুটবল ঈশ্বরকে। শুধু অনবদ্য পারফরম্যান্স দিয়ে পারেননি সমালোচনার মুখ বন্ধ করতে। বিশ্বের সমস্ত সম্পদের মালিক আরও একবার ‘দরিদ্র’ হয়েছিলেন। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ৭টা বছর। তবে ইতিহাস হয়তো ঘুরে ঘুরে আসে নতুন কোনও সৃষ্টির তরে। সেই মারাকানা স্টেডিয়াম। সেই ফাইনালের মহারণ। এবার আবার প্রতিপক্ষ হোম ফেভারিট ব্রাজিল। দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের এসপার-ওসপারের লড়াইয়ে এবার ইতিহাসের রং বদলে দিলেন মেসি (Lionel Messi)। দুঃস্বপ্নের রাতের রক্তক্ষয়ী স্মৃতিকে পালটে ফেললেন মধুর স্মৃতিতে। পারলেন তিনি পারলেন। ঐতিহাসিক মারাকানায় শাপমোচন ঘটিয়ে নিন্দুকদের জবাব দিলেন। যে কোপার (Copa America) পর অবসর ঘোষণা করেছিলেন, সেই টুর্নামেন্ট জিতেই গড়লেন ইতিহাস। এভাবেও দেশের জন্য নিজেকে উজার করে দেওয়া যায়, নিঃশব্দে বলে দিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
তাঁর বাড়িতে থরে থরে সাজানো ৩৪টি ট্রফি। দশটা লা লিগা, সাতটা কোপা ডেল রে, চারটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ছ-ছ’টা ব্যালন ডি অর ট্রফি-সহ বার্সেলোনার (Barcelona) জার্সিতে জেতা আরও কত খেতাব। কিন্তু ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক ঘটানো ওই গ্রহান্তরের ফুটবলারটির কেরিয়ারে দাগ ছিল একটাই। আর্জেন্টিনাকে ট্রফি না দিতে পারার দাগ। কষ্ট কি তিনিও কম পেয়েছেন? ‘ফুটবল ঈশ্বরে’র তকমা নিয়েও দেশবাসীর ‘চোখের বালি’ হয়ে তিনিও কি রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছেন? মারাদোনার উত্তরসূরি হয়ে নীল-সাদা জার্সি গায়ে চাপাবেন বলেই তো স্পেনের হয়ে খেলার প্রস্তাবে রাজি হননি। অথচ নিজেকে প্রকৃত ‘দেশপ্রেমী’ প্রমাণ করতে তাঁর হাজারো মহাজাগতিক পারফরম্যান্সও যথেষ্ট ছিল না। প্রয়োজন ছিল একটা ট্রফির। ২৮ বছর পর হাজির সেই কাঙ্খিত দিন। যেদিন সমস্ত তুলনাকে বিস্মৃতির অন্ধকারে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন তিনি। ‘গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম’ অর্থাৎ GOAT কে? এনিয়ে মনুষ্য-মনের সমস্ত দ্বন্দ্ব-ধন্দ, বিতর্কে ইতি টানলেন অহংকারহীন মাটির মানুষটি। উচ্ছ্বাসের কান্নায় ভেসে যাওয়া দু’টো চোখ যেন বলে দিল, রোনাল্ডো, নেইমাররাই নয়, আমিও পারি।
ঐশ্বরিক দুটি পায়ের জাদুতে দলকে ফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা নিখুঁতভাবে করেছিলেন মেসি। আর তারই শেষ অধ্যায় স্বর্ণাক্ষরে মুড়িয়ে দিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। খারাপ পারফরম্যান্সের দোহাই দিয়ে যাঁকে একাধিকবার বসানো হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চে। তাঁর একমাত্র গোলেই মেসির ফুটবল কেরিয়ারের বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। প্রথমবার কোপা ট্রফি হাতে নিয়েই চুমু খেলেন। চিরস্মরণীয় সেই মুহূর্তে যেন পূর্ণতা পেল কোপার ইতিহাসও। ‘ঈশ্বরে’র আনন্দাশ্রুতে প্রশস্তি ঘটল মারাকানার ঐতিহ্যেরও। এই মুহূর্তের সাক্ষী হতেই তো প্রহর গুনেছে আসমুদ্র-হিমাচল। স্প্যানিশ ক্লাবের লাল-নীল নয়, আজ মেসির গায়ে শুধুই নীল-সাদা গন্ধ।
¡ACÁ ESTÁ LA COPA! Lionel Messi 🔟🇦🇷 levantó la CONMEBOL #CopaAmérica y desató la locura de @Argentina
🇦🇷 Argentina 🆚 Brasil 🇧🇷#VibraElContinente #VibraOContinente pic.twitter.com/PCEX6vtVee
— Copa América (@CopaAmerica) July 11, 2021
গত বছর নভেম্বরেই ফুটবল বিশ্বকে নিঃস্ব করে চিরবিদায় নিয়েছিলেন মারাদোনা (Maradona)। সশরীরে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী তিনি হতে পারলেন না ঠিকই, কিন্তু প্রিয় মেসির সেলিব্রেশন দেখে হয়তো ঠোঁটের কোণে তাঁরও হাসি ফুটল।
🇦🇷🏆 Te alentaré donde sea…#VibraElContinente #CopaAmérica pic.twitter.com/4qDbkp98jL
— Copa América (@CopaAmerica) July 11, 2021
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.