জর্জ বুরুচাগা: কাতারে (Qatar World Cup 2022) পৌঁছে বেশ আশ্চর্যই হয়ে গেলাম। কত কিছু বদলে গিয়েছে! নতুন সব স্টেডিয়াম, দুর্ধর্ষ সব হোটেল। যানবাহনের ব্যবস্থাও আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। আমি ২০১১ সালে একবার এসেছিলাম কাতারে। তার পর ফের আসি ২০১৫ সালে। আর যে বিবর্তন এ বার কাতারে এসে দেখছি, তাতে বুঝতে পারছি কেন বিশ্বকাপ ওদের দেওয়া হয়েছে।
মূলত, উন্নত অর্থনীতির কারণেই বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে কাতার। বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করছে বলে কাতার দেশটাই পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। তার সঙ্গে একটা অফুরান ইতিবাচক এনার্জি চতুর্দিকে দেখতে পাচ্ছি। দোহা শহরটাও কত বদলে গিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, দোহা হয়তো অত বেশি পাল্টাবে না। এখন দেখছি, ভুল ছিলাম। আপনি কাতার না এলে বুঝতে পারবেন না, কতটা বদল হয়েছে এই দেশে। আশা করছি, এখানে সবাই বিশ্বকাপ ফুটবলের মহাযজ্ঞ পুরোদস্তুর উপভোগ করবেন।
আমার মতে, ব্রাজিল (Brazil) আর ফ্রান্সের (France) সঙ্গে আর্জেন্টিনাও (Argentina) টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে কাতারে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু তার বাইরেও অনেক এমন দল আছে, যারা কি না প্রাণপাত করবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। তাই কাতার বিশ্বকাপ খুব সহজ হবে না কোনও টিমের জন্য। প্রতিপক্ষ সহজ হোক বা কঠিন– বিশ্বকাপের প্রথম দু’টো ম্যাচ প্রতিটা টিমের জন্যই মহাগুরুত্বপূর্ণ। টিমগুলো দেখে নিতে পারে, তাদের শক্তি কোনটা, দুর্বলতা কোথায়। মাঠ কেমন, পরিবেশ কেমন, তার একটা আগাম আন্দাজ পেতে সুবিধে হয় যেমন, তেমন আত্মবিশ্বাসও পাওয়া যায়। আমার পরামর্শ হল– গ্রুপ পর্বটা সবাই দেখেশুনে খেলো। গ্রুপ পর্ব পেরোও। তার পর দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে আরও বিশ্বাসী হয়ে নামো।
লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট কোনটা জানেন? শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ। টিমটা এমনিতেই ভাল, টিমে প্রতিভাও প্রচুর। আর সবচেয়ে বড় কথা, একটাও ম্যাচ না হেরে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। স্কালোনি টিমটাকে বহু দিন ধরে চেনে, দীর্ঘদিন ধরে কোচিং করাচ্ছে। কিন্তু ওকে দুর্ভাগ্যজনক হার নিয়ে আগাম সতর্ক থাকতে হবে। এমন হতেই পারে, গোটা ম্যাচ দাপট নিয়ে খেলে শেষ মুহূর্তে ভুল করে বসল টিম। যত দূর ধারণা, আর্জেন্টিনা টিমের সবাই ইউরোপের ক্লাব ফুটবল খেলে এসেছে বিশ্বকাপে। তাতে টিমের সাহায্যই হবে। লিওনেল মেসিও ফরাসি লিগ খেলে আসছে, অতএব ও-ও খেলার মধ্যেই আছে। তা ছাড়া লিও জানে বিশ্বকাপের রেফারিরা কতটা কঠোর হন, জানে বিপক্ষ কতটা টাফ হয়। তাই নিজের বিশাল অভিজ্ঞতা দিয়ে লিও পারবে সব সামলে নিতে।
আমার আর আমার অতীত সতীর্থদের কাছে ছিয়াশি বিশ্বকাপটা বেশ কঠিন ছিল। আমরা প্রবল চাপ নিয়ে মেক্সিকো গিয়েছিলাম। কিন্তু ছিয়াশি বিশ্বকাপের চেয়ে ’৯০ বিশ্বকাপ অনেক বেশি আবেগের ছিল আমাদের কাছে। আমরা বিধ্বস্ত হয়ে পৌঁছেছিলাম বিশ্বকাপে, চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে। কিন্তু তার পরেও ফাইনালে উঠি আমরা, যেখানে অন্যায় ভাবে আমাদের হারানো হয়। সেই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে আমাদের যে সমস্ত প্লেয়ারদের কার্ড দেখানো হয়েছিল, তারা যদি ফাইনালে থাকত, রেজাল্ট অন্যরকম হতে পারত। সে দিক থেকে দেখলে মেসিরা এবার বিশ্বকাপে আসছে, কোপা আমেরিকা জিতে। আর খুব বেশি চোট-আঘাতও নেই টিমে। লিওকে একটাই কথা বলব আমি।
লিও তুমি দিয়েগোর জন্য বিশ্বকাপটা জেতো। আর জিতে কাপটা উৎসর্গ করে দাও দিয়েগোকে। সেটা পারলে দিয়েগোকে সেরা শ্রদ্ধার্ঘ্যটা দেওয়া হবে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলা একজন প্লেয়ারের কাছে যেমন বিশাল গর্বের ব্যাপার, তেমনই সেটা তার কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তও। অর্থের কোনও গুরুত্বই নেই এখানে। যে কোনও অঙ্কের অর্থের চেয়ে ওই নীল-সাদা জার্সির মর্যাদা বেশি। সমগ্র আর্জেন্টিনার সঙ্গে আমারও স্বপ্ন ছত্রিশ বছর পর বিশ্বকাপ জেতার। সেটা পারলে, দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা নামের চিরশ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে সেরা শ্রদ্ধার্ঘ্য দেওয়া হবে, যে কি না দু’বছর আগের এমনই এক নভেম্বরে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
(চিভাচ স্পোর্টস)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.