প্র্যাকটিসে আনোয়ার-দিমিত্রি। ছবি: সোশাল মিডিয়া।
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য: আমি মোটামুটি দুই দশক ডার্বি খেলেছি। তারপর কোচ, দর্শক আর বিশ্লেষক হিসাবে বহু ডার্বির সাক্ষী থেকেছি। তবে এই প্রথম একটা ডার্বি(Kolkata Derby) হচ্ছে, যার আগে ইস্টবেঙ্গলের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
আইএসএলে টানা চার ম্যাচে হার। জাতীয় স্তরে শেষ কবে ইস্টবেঙ্গল এমন পারফর্ম করেছে মনে করতে পারছি না। তবে শুধু ফলাফলটাই নয়, যেভাবে দলটা একটার পর একটা ম্যাচ হারছে সেটা বেশি অবাক করছে আমাকে। ফুটবলারদের মধ্যে যেন কোনওরকম তাগিদই নেই জেতার। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম গোলটা খাওয়ার পর প্রথমার্ধের বাকিটা মোটামুটি ভালোই খেলেছিল ফুটবলাররা। কিন্তু দ্বিতীয়র্ধে পরপর দুটো সুযোগ নষ্টের পর আবার সেই পুরনো ছবি। বারবার মনে হচ্ছে, এই দলটার মধ্যে কোনও নেতা নেই যে খারাপ পরিস্থিতিতে সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। কঠিন সময়ে যে ত্রাতা হয়ে উঠবে দলের। ডার্বির আগে এই সমস্যাটা মেটাতে হবে।
অথচ এবার দলটাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম। কারণ আইএসএলে এই প্রথমবার বলার মতো ভালো একটা স্কোয়াড তৈরি করেছে ইস্টবেঙ্গল। বেশ কয়েকজন ভালো ফুটবলারকে নেওয়া হয়েছে। কয়েকজন ভালো ফুটবলারকে ধরে রাখা হয়েছে। আর যাদের নেওয়া হয়েছে তারা তাদের প্রাক্তন ক্লাবের হয়ে ভালোই খেলেছে বলে ইস্টবেঙ্গল নিয়েছে। যেমন, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস শেষ মরশুমে আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। মাদিহ তালাল সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছিল লিগে গতবার। জিকসন সিং, আনোয়ার আলিরা জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য। ফলে দলটা এবার আরও ভালো খেলবে বলেই আশা করেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে, এখনও এই ফুটবলারদের দেখে আমি হতাশই হয়েছি। ভালো খেলার কোনও তাগিদই যেন নেই ওদের মধ্যে। গত মরশুমে এত ভালো পারফর্ম করার পর এবার যেন ওরা খেলাটাই ভুলে গিয়েছে! আমাদের সময়ে তো এমন অবস্থায় নিজেরাই নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতাম।
এই দলটার সবচেয়ে বড় সমস্যা ডিফেন্স। বিশেষত দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। প্রচণ্ড স্লথ। অথচ দলটা খেলছে হাইলাইন ডিফেন্সে। প্রতিপক্ষ কাউন্টার অ্যাটাকে উঠলে ওরা দ্রুত নেমে আসতে পারছে না। ফলে রক্ষণে যে ফাঁকফোকর তৈরি হচ্ছে, তা কাজে লাগাচ্ছে প্রতিপক্ষ। টিমের থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে এই জায়গাটা ঠিক করতে হবে ডার্বির আগে। কারণ আগেই বলেছি, দলটায় কোনও নেতা নেই যে দিশা দেখাবে। গোল খেয়ে গেলে তা শোধ করারই লোক নেই, দুটো দেওয়াটা তো পরের কথা। তাই ডিফেন্সিভ আর্গানাইজেশন ঠিক করার উপর নজর দিতে হবে। কারণ মোহনবাগানে কিন্তু গোল করার লোক অনেক। ওদেরও ডিফেন্স ভালো নয়। তবে সেটা পুষিয়ে দেবে আক্রমণ। ইস্টবেঙ্গলে কিন্তু সেই উপায় নেই, সেটা ভুললে চলবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.