গোলের পর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন নন্দকুমার। ছবি: X হ্যান্ডেল।
সব্যসাচী বাগচী: মেগা ডার্বি (Derby Match) তো শুধু আবেগের মহা বিস্ফোরণ ঘটায় না, নতুন নায়কেরও জন্ম দেয়। অবশ্য এবারের ডার্বি যুদ্ধের অন্যতম নায়ক নন্দকুমার শেখর (Nandhakumar Sekhar) নিজের জাত অবশ্য ডুরান্ড কাপেই (Durand Cup) চিনিয়েছিলেন। সেটা ছিল ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। ভেন্যু কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। এবার সেই ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার আরও একবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের (Mohun Bagan) বিরুদ্ধে জ্বলে উঠলেন। এবারের মঞ্চ সুপার কাপ (Kalinga Super Cup)। দেখতে দেখতে তিনটি ডার্বি ম্যাচে দুটি গোল করে ফেললেন নন্দ।
চলতি মরশুমে নতুন ভাবে ধরা দিচ্ছেন লাল-হলুদের নন্দ। ২০১৭ সালের ১২ মার্চ। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আই লিগের ম্যাচে ক্লাব কেরিয়ারের প্রথম গোল করেছিলেন। চেন্নাই সিটি-র সেই স্ট্রাইকার এবার কার্লেস কুয়াদ্রাতের (Carles Cuadrat) দলের প্রাণ ভোমরা হয়ে গেলেন। গত বছর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর দুরন্ত গোলে ১৬৫৭ দিন পর লাল-হলুদের শাপমুক্তি ঘটেছিল। ১-০ গোলে মোহনবাগানকে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। আর এবার সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে গোল, সবুজ-মেরুনকে প্রতিযোগিতা থেকেই ছিটকে দিল।
এহেন নন্দ ম্যাচের শেষে বলছিলেন, “মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে এই নিয়ে দুবার গোল করতে পারলাম। নিজেকে সৌভাগ্যবান বলেই মনে করছি। ডুরান্ড কাপ ও সুপার কাপ একেবারে ভিন্ন মঞ্চ। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নতুন বছর প্রথম গোল পেয়ে আলাদা অনুভূতি হচ্ছে।” গতবারের ‘বড় ম্যাচ’-এ গোল করার পর দুই হাত প্রসারিত করে সেলিব্রেশন করেছিলেন নন্দ। এবারও ঠিক তেমনভাবেই নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ১১ নম্বর জার্সিধারী স্ট্রাইকার। কেন এভাবে সেলিব্রেশন করেন? নন্দকুমারের প্রতিক্রিয়া, “সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য এভাবে দুহাত খুলে সেলিব্রেশন করেছিলাম। কারণ এত দূর থেকে ওরা শুধু আমাদের জন্য এসেছিল। তাই এই গোল সমর্থকদের উৎসর্গ করলাম।”
!
Nandha’s post-match thoughts. #KalingaSuperCup #KolkataDerby #JoyEastBengal #EastBengalFC pic.twitter.com/cqheDcmSD3
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) January 19, 2024
ইস্টবেঙ্গলে বাঁদিক থেকে আক্রমণে ওঠেন নাওরেম মহেশ। কিন্তু তিনি জাতীয় দলে থাকায় নন্দকুমারকে বাঁদিক থেকে আক্রমণে ওঠার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। একবার গোল করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও ব্যর্থ হন। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ৬৩ মিনিটে সেই আক্ষেপ মিটিয়ে ফেলেন নন্দ। ডানদিকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ক্লেটন সিলভা (Cleton Silva)। তিনি কিছুটা এগিয়ে বাঁ পায়ে শট করেন। বিপক্ষের গোলকিপার অর্শ আনোয়ারকে পরাস্ত করে বল বারে লাগে। ক্লেটনকে অনুসরণ করে গোলের কাছেই উঠে আসেন নন্দ। বল বারে লেগে ফিরতেই ফাঁকা জালে বল জড়িয়ে দেন। এবং গোল করেই দৌড়ে যান লাল-হলুদ সমর্থকদের দিকে। এর পর দেখা যায় সেই চেনা সেলিব্রেশন।
ম্যাচের শেষেও যেন নন্দকুমারের ঘোর যেন কিছুতেই কাটছে না। কথাবার্তায় বারবার ফিরে আসছিল কুয়াদ্রাতের প্রসঙ্গ। ফের বলেন, “বিরতির সময় ফলাফল ১-১ থাকার সময় কোচের বার্তা ছিল, ‘হারার আগে হারব না’। আমরাও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তাই আগ্রাসী মনোভাব বজায় রেখে খেলতে পেরেছিলাম বলেই এল জয়।”
১৯৯৫ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নন্দকুমার। ভারতের এই পেশাদার ফুটবলার চলতি মরশুমে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন। জাতীয় ফুটবল দলের জুনিয়র স্কোয়াডেও তাঁর খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে চেন্নাই সিটি এফসি-র জার্সি গায়ে চাপিয়ে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন। মাস খানেক বাদে পেশাদার ফুটবলে প্রথম গোলটা করেছিলেন। মজার ব্যাপার হল, সেই গোলটাও ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে তিনি গোল করেছিলেন। ওই ম্যাচের ৫৭ মিনিটে চেন্নাই সিটির হয়ে সমতা ফিরিয়েছিলেন নন্দকুমার। সেই ম্যাচে চেন্নাই ২-১ গোলে জয়লাভ করেছিল। তবে এহেন নন্দ ডার্বি যুদ্ধ এলেই লাল-হলুদের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা মিটিয়ে দিচ্ছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.