মেগা ডার্বিতে জয়ের খোঁজে লাল-হলুদ বাহিনী। ছবি: ইস্টবেঙ্গল
দুলাল দে, ভুবনেশ্বর: সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে উঠে যাচ্ছিলেন মোহনবাগানের (Mohun Bagan) কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্ডা (Clifford Miranda)। আর ঠিক তখনই প্রবেশ ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের (Carles Cuadrat)। সঙ্গী ক্লেটন সিলভা (Cleton Silva)। ক্লিফোর্ডকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরে অভিবাদন জানালেন কুয়াদ্রাত। সাংবাদিক সম্মেলন শুরুর আগেই মোহনবাগান কোচকে জড়িয়ে ধরলে কী হবে, শুরুতেই যে প্রশ্নটা ধেয়ে এল তা একটু আগে করা ক্লিফোর্ডেরই বক্তব্য ধরে। মোহনবাগান কোচ বলছেন, তাঁদের সাতজন ফুটবলার জাতীয় শিবিরে। তার উপর চোট-আঘাতের সমস্যা। যা ইস্টবেঙ্গল শিবিরে নেই।
প্রশ্নটা ভালোভাবে শেষও হল না। সঙ্গে সঙ্গে নিজের পক্ষে যুক্তি দিতে শুরু করে দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত। “জাতীয় দলে ফুটবলার যাওয়া নিয়ে আমাদের সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। আমাদের যে দু’জন ফুটবলার জাতীয় দলে গিয়েছে, সেই দু’জন আমাদের দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ফলে সমস্যা আমাদেরও হচ্ছে।” ফলে বেশ বোঝা যাচ্ছে চলতি সুপার কাপের (Kalinga Super Cup) মেগা ডার্বির (Derby Match) বল গড়ানোর আগেই উত্তেজনা চরমে উঠে গিয়েছে।
এমনিতে যে দলটা গত ক’বছর ধরে আইএসএলে (ISL 10) শেষতম স্থান এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, সেই ইস্টবেঙ্গলই এই মরশুমে বদলে গিয়েছে কুয়াদ্রাতের হাতে এসে। জয় পেয়েছে একটি ডার্বিতেও। এমনকী, এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ শুক্রবারের ম্যাচে মোহনবাগানের থেকে এগিয়ে রাখতে চাইছেন ইস্টবেঙ্গলকে। এর পিছনে অন্যতম কারণ, কুয়াদ্রাতের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। যাঁর সম্পর্কে কিছুদিন আগে ক্লেটন বলেছেন, তাঁর দেখা সেরা ট্যাকটিশিয়ান।
সেই কুয়াদ্রাত সুপার কাপের মাঝেই আইএসএলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “আইএসএলে আমরা এই মুহূর্তে যে পয়েন্ট পেয়ে রয়েছি, সেটা আমাদের পারফরম্যান্সকে ঠিকভাবে প্রতিফলিত করছে না। আরও বেশি পয়েন্ট পাওয়া উচিত ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা এখানে এসেছি, মোহনবাগানকে হারিয়ে শেষ চারে খেলা নিশ্চিত করতে।” ভাঙা দলেও মোহনবাগানে কিন্তু কামিংস, দিমিত্রি, হুগো বুমোসের মতো বিদেশিরা আছেন। কুয়াদ্রাত বললেন, “আমাদেরও ক্লেটন সিলভার মতো ম্যাচ জেতানো ফুটবলার রয়েছে।”
সুপার কাপে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ২ গোল করার পরই ক্লেটনের উপর যেন একটু বেশি মাত্রায় ভরসা করতে শুরু করেছে লাল-হলুদ। কিন্তু হায়দরাবাদ ম্যাচ আর ডার্বি সম্পূর্ণ আলাদা। পরপর গোল করে এমনিতেই ক্লেটন এখন ইস্টবেঙ্গলের তারকা। আর ডার্বিতে গোল করে জেতাতে পারলে, তিনি হবেন লাল-হলুদ জনতার নয়নের মণি। ক্লেটন হেসে বললেন, “আমি অতশত বুঝি না। আমার কাজ দলকে জেতানোয় সাহায্য করা। আমাদের একটাই লক্ষ্য, মোহনবাগানকে হারানো। এর বাইরে আর অন্য কিছু ভাবছি না।”
মোহনবাগানে যেরকম চোট-আঘাত রয়েছে, সেরকম কিছু চোট রয়েছে ইস্টবেঙ্গলেও। যেমন মন্দার রাও দেশাই এদিন অনুশীলনে নেমে পড়লেও, ডার্বিতে লাল-হলুদ জার্সি পরার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ইস্টবেঙ্গল যখন রাতের দিকে অনুশীলনে নামছে, কুয়াদ্রাতকে দেখে নিজেদের অনুশীলন থামিয়ে চলে এলেন নর্থ-ইস্টের কোচ। সৌজন্য সাক্ষাৎ করে গেলেন। কুয়াদ্রাতকে দেখা গেল আলাদা করে অনেকক্ষণ হিজাজির সঙ্গে আলোচনা করতে। ক্লেটনের পাশাপাশি হিজাজিও কিন্তু এখন লাল-হলুদের রীতিমতো তারকার সম্মান পাচ্ছেন। এদিন অনুশীলনের শুরুতে লাল-হলুদ ফুটবলাররা রীতিমতো খুশির মেজাজে ছিলেন। দেখে বোঝাই সম্ভব নয়, এই দলটাই গত তিন মরশুমে কীরকম চাপে ছিল। ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে ফুটবলারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজই বলে দিচ্ছিল, দলটা কতটা তৈরি। একটা ড্র করলেই দল চলে যাবে শেষ চারে। ক্লেটন এবং কুয়াদ্রাত দুজনেই উড়িয়ে দিলেন এই ড্রয়ের প্রসঙ্গটি। দুজনেই বললেন, “ড্র নয়। ভাবছি ম্যাচটা জেতা নিয়ে। আমরা মোহনবাগানকে হারিয়েই শেষ চারে যেতে চাই।” আর ক্লেটন বললেন, “মোহনবাগানের সঙ্গে আমাদের শক্তির কোনও পার্থক্যই নেই। যা হবে মাঠেই দেখা যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.