সাদা কটিবস্ত্র গায়ে বিমানবন্দরে হাজির স্বরূপানন্দ দাশগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: অমিত মৌলিক
স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতা বিমানবন্দরের ১বি গেটের ডানদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক দম্পতি। সেসময় গেটের বাইরে দাপট শুধু লাল-হলুদের। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সবারই গায়ে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) জার্সি, নয়তো মুখ-মাথা ঢেকেছে লাল-হলুদ আবিরে।
কিন্তু সমর্থকদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা ছিলেন সবার থেকে আলাদা। কারণ চর্মচক্ষেই দেখা যাচ্ছিল, সদ্য কোনও নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছেন তাঁরা। যুবকের পরনে সাদা কটিবস্ত্র, মুখে কয়েকদিনের না কামানো দাড়ি। সঙ্গে থাকা তরুণীও পরেছেন লালপাড় সাদা শাড়ি। হঠাৎ করে কেন লাল-হলুদের ভিড়ে হঠাৎ এই দম্পতি কী করছেন? প্রশ্ন করতেই জানা গেল, সদ্য পিতৃহারা হলেও লাল-হলুদের টানেই বিমানবন্দরে এসেছেন বিরাটির স্বরূপানন্দ দাশগুপ্ত। ছোটবেলা থেকেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। তাই প্রিয় ক্লাব এক যুগ পর কোনও জাতীয় স্তরের ট্রফি জেতার পর দলকে স্বাগত জানাতে আসা থেকে নিজেকে আটকাতে পারেননি। স্ত্রী বাবলিকে নিয়ে দুপুরের পর পরই হাজির হয়েছেন বিমানবন্দরে। কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat), ক্লেটন সিলভাদের (Cleton Silva) দেখবেন বলে।
শনিবারই মারা গিয়েছেন স্বরূপানন্দের বাবা। পেশায় ডাক্তার এই যুবকের বাড়ি বিরাটি স্টেশনের কাছেই। এমনিতে ইস্টবেঙ্গলের খেলা সেভাবে মিস করেন না। দলের খারাপ সময়েও ছুটে গিয়েছেন গ্যালারিতে। নিজের পিতৃবিয়োগের শোক কমাতে সেই প্রিয় ক্লাবের কাছেই হাজির হয়েছিলেন এদিন। বলছিলেন, “বিমানবন্দরে আসতে তো হতই। এতদিন পর আমরা সর্বভারতীয় পর্যায়ে কোনও ট্রফি জিতলাম (Kalinga Super Cup)। ফুটবলাররা এত ভালো ফুটবল খেলল। ওদের তো স্বাগত জানাতেই হবে।”
বাবাকে হারানোর একদিন পরই ইস্টবেঙ্গলকে ট্রফি জিততে দেখেছেন। পিতৃশোক কিছুটা কি কমেছে এই জয়ে? স্বরূপানন্দের জবাব, “এই অনুভূতির কোনও ব্যাখ্যা হয় না। তবে এটুকু বলতে পারি, বাবাকে হারানোর বেদনা একটু হলেও মিটল।” পাশে দাঁড়ানো স্ত্রী বাবলিও তখন নীরবে সম্মতি জানালেন স্বরূপানন্দকে। তিনিও যে শুধু স্বামীর সঙ্গী হওয়ার জন্য বিমানবন্দরে এসেছেন, এমনটা নয়। বাবলি নিজেও আদ্যোপান্ত লাল-হলুদ সমর্থক।
অতীতে নিকটাত্মীয়ের শোক সামলে প্রিয় ক্লাবের ম্যাচ দেখতে ছুটে আসার বহু নজির রয়েছে ময়দানে। বছর তিনেক আগে ফুটবলার আকাশ মুখোপাধ্যায় কলকাতা লিগের ম্যাচ খেলতে এসেছিলেন বাবার দেহ বাড়িতে রেখে। এবার সেই আবেগের স্রোতে মিশে গেলেন স্বরূপানন্দ-বাবলিরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.