ট্রফি হাতে ইস্টবেঙ্গলে নতুন ইনিংস শুরু করলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। ছবি: X হ্যান্ডেল
প্রসূন বিশ্বাস, ভুবনেশ্বর: তিনি হাসছেন। প্রাণ খুলে হাসছেন। এই হাসিতে নেই কোনও খাদ। গ্যালারির কাছে গিয়ে দু হাত মুঠো করে নিজেকে ঝাঁকিয়ে নিয়ে সমর্থকদের যেন বলতে চাইছেন, “দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটল। নাও তোমাদের উপহার।”
কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)। ম্যাচ শেষে উল্লাসের স্রোত তরঙ্গে যিনি ভেসে যাচ্ছিলেন। ততক্ষণে সাউথ স্ট্যান্ডে জ্বলে উঠেছে লাল-হলুদ মশাল। সেখানে একটি দীর্ঘ ব্যানারে ইংরাজিতে লেখা, যার তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘বারো বছরের অপেক্ষার শেষ, চ্যাম্পিয়নরা এখন এখানে।’ এই সাউথ স্ট্যান্ডের হাজার হাজার লাল-হলুদ সমর্থকের উল্লাসধ্বনি আর ‘জয় ইস্টবেঙ্গল, আমরা আছি তোমার সাথে’- এই শ্লোগান বহু বছর মনে রাখবেন ওড়িশা এফসির (Odisha FC) সমর্থকরা। অন্যরাজ্যে এসেও এই উল্লাস করা যায় যদি ক্লেটন সিলভার (Cleton Silva) মতো নায়করা এভাবেই বড় মঞ্চে মেলে ধরতে পারেন নিজেদের। যদি কুয়াদ্রাত নামক অভিভাবক বার্তা দেন– ‘ভয় কি! আমি তো আছি।’
ভেসে আসা এই উল্লাস তরঙ্গের ঢেউ সারা রাত আছড়ে পড়বে ওড়িশা এফসির পতাকা বাহকদের কানের কাছে। তাঁদেরই মাঠে, তাঁদেরই ডেরায় এসে সুপার কাপ ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে ইস্টবেঙ্গল। এমন ভাবনা বোধহয় ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও করেননি সের্জিও লোবেরা। যিনি কি না এই মরশুমের শুরুতে আগ্রহ হারিয়েছিলেন এই ইস্টবেঙ্গলের কোচ হতে। তাঁর জায়গায় কোচ হয়ে এসে সমর্থকদের মন আর আস্থা দুই-ই জয় করেছেন কুয়াদ্রাত। হয়তো এই উল্লাসভিড়ে থাকা লাল-হলুদের কেউ কেউ ভাবছেন, ‘ভাগ্যিস লোবেরা আসেননি।’
It’s not just a win, it’s a statement!🔥
জিতেছে জিতবে ইস্টবেঙ্গল! ❤️💛#KalingaSuperCup #JoyEastBengal #EastBengalFC #EBOFC #BattleForBengalsPride pic.twitter.com/4InnZKWy4I
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) January 28, 2024
তাইতো ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ হয়ে যাওয়ার কত পরেও কলিঙ্গ স্টেডিয়ামের সাউথ স্ট্যান্ডের সামনে সুপার কাপটাকে ধরে বার বার ঝাঁকিয়ে সমর্থকদের দিকে ছুঁড়ে দিতে চাইছিলেন কুয়াদ্রাত। একসময় তিনি বলেই ফেললেন, “এটা ওঁদের অপেক্ষার উপহার। বারো বছর কম কথা নয়। এই দিনটা দেখার জন্য কত কষ্ট করে না সমর্থকরা ঘুমিয়ে বাসে, ট্রেনে করে চলে এসেছেন ভুবনেশ্বরে। এই উপহার ওঁদেরই প্রাপ্য।” সামনেই ডার্বি। সেই প্রসঙ্গ আসতেই ইস্টবেঙ্গল কোচের একটাই উক্তি, “আমরা ডার্বির জন্য তৈরি। এখন একটু আনন্দ করতে দিন।”
কোচের সুরে অধিনায়ক ক্লেটনও বলেন, “এই সুপার কাপ জয় পুরোটাই প্রাপ্য সমর্থকদের। কত খারাপ সময়ে পাশে থেকেছে ওরা।” সুপার কাপ জয়ের অন্যতম নায়ক, প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকতা দেখানো শৌভিক চক্রবর্তীও সমর্থকদের ধন্যবাদ দেওয়ার পাশপাশি কৃতিত্ব দিলেন কোচকে। তিনি বলেন, “এই জয়ের পিছনে কোচের বিশাল বড় ভূমিকা রয়েছে। ওঁর জন্যই জয়টা এল।” মাঠে দাঁড়িয়ে লাল-হলুদ কর্তা দেবব্রত সরকারও বলছিলেন, “ছেলেদের এবার বলব আগামী ডার্বির প্রস্তুতি নাও। সমর্থকরা খুব খুশি।” ইস্টবেঙ্গল সহসভাপতি রাহুল টোডিও এসেছিলেন ম্যাচ দেখতে।
অন্যদিকে ম্যাচ হেরে আর কথা বলতে চাননি ওড়িশা কোচ লোবেরা। তিনি আসেননি বলেই ইস্টবেঙ্গলে কোচ পেরেছেন কুয়াদ্রাত। এদিন সেই লোবেরাকে হারানোর পর বার্সেলোনায় একসঙ্গে কাজ করা ওড়িশা কোচকে নিয়ে ওঠা প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। এদিকে ম্যাচ চলাকালীনই এক ওড়িশা সমর্থক মাঠে ঢুকে গিয়েছিলেন আহমেদ জাহুর সঙ্গে সেলফি তুলবেন বলে। তার জন্য কিছুক্ষণ খেলাও বন্ধ ছিল। কিন্তু ম্যাচ শেষে তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার কেউ নেই। বরং এদিন প্রায় মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও লাল-হলুদ সমর্থকরা গ্যালারিতে স্লোগান তুলে, উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিলেন কুয়াদ্রাত, ক্লেটনদের সঙ্গেই। আসলে প্রতীক্ষাটা যে দীর্ঘ, তার সেলিব্রেশনও তো হবে
একটু বেশিই।
ক্লেটনরা কখন কলকাতায় পা রাখছেন তা জানার জন্য খোঁজ শুরু করে দিয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। সোমবার দুপুরের পর কলকাতায় পা রাখবেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। তবে সবাই নয়, বিদেশিরা থাকলেও কিছু ভারতীয় ফুটবলারকে ভুবনেশ্বর থেকেই দু দিনের ছুটি দিতে পারেন কুয়াদ্রাত। বিমানবন্দরে ভিড় জমানোর সম্ভাবনা লাল-হলুদ সমর্থকদের। কলকাতায় দল ফেরার পাশাপাশি সুপার কাপ জয়ের জন্য ক্লাবেও পতাকা তোলা হবে সোমবার বিকাল চারটের সময়। অবশ্য কলকাতায় হিজাজি মাহেররা পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ডার্বির উত্তাপ বেড়ে যাবে হু-হু করে। ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার কোচ কুয়াদ্রাতকে জড়িয়ে ধরেন। রবিবার ওড়িশা ম্যাচ জেতার পর মধ্যরাত পেরিয়ে স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পৌঁছান লাল-হলুদ ফুটবলাররা। হোটেলে পৌঁছানোর পর কেক কেটে সেলিব্রেশন করা হয় সুপার কাপ জয়ের। তবে এদিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেল বোরহা হেরেরা চলে যেতে পারেন এফসি গোয়াতে। এই ঘটনাতে যেন তাল কাটল সামান্য। যদিও কোন কর্তাই এই বিষয়ে কিছু বলেননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.