দুলাল দে: সবুজ তোতা ফের মোহনবাগানে! ব্যাপারটা সরাসরি বলে দেওয়াই ভাল। সোমবার থেকে বেইতিয়াদের কোচিং করাতে মোহনবাগান মাঠে নেমে পড়ছেন আর কেউ নন, হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো!
এই পর্যন্ত পড়ে যাঁদের চক্ষু চড়কগাছ, যাঁরা ভাবছেন, কলকাতা লিগ, ডুরান্ড কাপের পর বাংলাদেশে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক কাপেও ব্যর্থতার কারণ হিসাবে সবুজ-মেরুন কোচের পদ থেকে ভিকুনার চাকরিটা গেল, তাঁরাও ভুল ভাবছেন। ঘটনাটা হল, ভিকুনার সঙ্গী হিসাবেই বেইতিয়া, ফ্রান গঞ্জালেজদের ছ’দিন প্র্যাকটিস করাবেন ব্যারেটো। মানে, আপাতত ‘অতিথি’ কোচ হিসাবে মোহনবাগানে ব্যারেটোর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হচ্ছে বলা যায়। ভবিষ্যতে কী হবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।
কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সবুজ-মেরুনের ভগবান? ছ’দিনের এই সংক্ষিপ্ত কোচিং অভিযানের পিছনে তাহলে কি অন্যরকম কিছু ভাবনা রয়েছে সবুজ-মেরুনে? এদিনই মুম্বই থেকে কলকাতায় চলে আসা মোহনবাগানের প্রাণভোমরা হাসতে হাসতে বলছিলেন, “প্লিজ, এরমধ্যে আবার অন্যরকম কিছু ভাববেন না। এখন আমি কোচিংয়ের অনুগত ছাত্র। তাই সুযোগ পেয়েছি যখন, যতটা সম্ভব শিখে নিতে চাইছি।” ব্যারেটো ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারেটোর মতো করে। কিন্তু এর পিছনে আসল কারণটা কী?
মুম্বইয়ে রিলায়েন্স অ্যাকাডেমির সহকারী কোচ হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি এএফসির ‘বি’ লাইসেন্সটা ইতিমধ্যে শেষ করে ফেলেছেন সবুজ তোতা। ইচ্ছে, নতুন বছরের শুরুতেই শেষ করে ফেলবেন ‘এ’ লাইসেন্স। মাঝের এই সময়টায় যেহেতু কিছুদিনের জন্য ছুটি পেয়েছেন, ঠিক করে ফেলেছেন, ‘ঘরের ক্লাবে’ কোচিংটা ঝালিয়ে রাখবেন। ৪-৯ নভেম্বর পর্যন্ত বেইতিয়াদের কোচিং করিয়ে ফের মুম্বই গিয়ে যোগ দেবেন রিলায়েন্স অ্যাকাডেমিতে।
মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ছ’দিনের কোচিং করানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে ব্যারেটোর ব্যখ্যা হল, “ধরুন, আমি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করেছি। এবার কোথাও চাকরি করার আগে যদি নিজেদের কোনও জানাশোনা হোটেল থাকে, তাহলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য কিছুদিন শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতেই পারি। মোহনবাগানে আমার এই সংক্ষিপ্ত কোচিং পর্বটা এভাবেই দেখতে পারেন। কারণ, মোহনবাগান আমার ঘরের ক্লাব। কর্মকর্তারা আমার পরিবারের সদস্যর মতো। তাই আমি যদি নিজের কোচিং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য কোনও ক্লাবে কিছুদিন ‘অতিথি’ কোচ হিসাবে কাজ করতে চাই, সেই ক্লাব মোহনবাগান ছাড়া আর অন্য ক্লাব হতেই পারে না। আমি যখনই কিছু সাহায্য চেয়েছি, মোহনবাগান সব সময় আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।’’
সবুজ-মেরুন হৃদয়ে ব্যারেটোর স্থান কোথায়, তা জানে একমাত্র মোহনবাগান জনতা আর কর্মকর্তারাই। তিনি যে ভূমিকাতেই ক্লাবের সঙ্গে জড়িত হতে চান না কেন, মোহনবাগানের দরজা সবসময় খোলা। তাই ছুটির সময়ে ব্যারেটো যখন কর্তাদের কাছে প্রস্তাব দিলেন, ছ’দিনের জন্য ভিকুনার কোচিং স্টাফে থেকে বেইতিয়াদের কোচিং করাবেন, আপত্তি করেননি কেউই। বরং ভবিষ্যতের কোচ হয়ে ওঠার পথে উৎসাহই দিয়েছেন সবাই। তবে একইসঙ্গে সতর্কতাও অবলম্বন করছে মোহনবাগান। বাগানে এটাই প্রথম মরশুম হওয়ায় সবুজ-মেরুনে ব্যারেটোর অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার কোনও ধারণা নেই অত্যন্ত ভদ্রলোক কিবু ভিকুনার। তাই হঠাৎ করে সোমবার থেকে ব্যারেটো মাঠে নেমে পড়লে ভিকুনা যেন অন্যরকম কিছু না ভাবেন। তাই ঠিক হয়েছে, শনিবার কোনও একটা সময় ভিকুনার সঙ্গে বসিয়ে দেওয়া হবে সবুজ তোতাকে। যাতে ভিকুনাকে নিজের পরিকল্পনাটা সরাসরি বোঝাতে পারেন ব্যারেটো। তারপর ক্লাব তো আছেই। অর্থাৎ ব্যারেটোর মাঠে নামা নিয়ে যাতে কোনওরকম বিতর্কের সৃষ্টি না হয়, সেদিকটাও মাথায় রাখছেন সবাই। উদাহরণ হিসাবে পাশের ক্লাবে বাইচুংয়ের অবসর নিয়ে বিতর্ক দেখেছেন সবাই। ক্লাব কর্তারা ঘোষণা করে দিয়েছেন, এই মরশুমে লিগের একটা ম্যাচ কিছুক্ষণের জন্য খেলে অবসর নেবেন লাল-হলুদের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা বাইচুং ভুটিয়া। কিন্তু কোচ আলেজান্দ্রো পুরো লিগ ধরে সময়ই পেলেন না, বাইচুংকে একটা ম্যাচ খেলানোর। ফলে ঘোষণার পরেও অবসর নেওয়া হয়নি। মোহনবাগান কর্তারা চান না, ব্যারেটোর ক্ষেত্রে এরকম কিছু পরিস্থিতি তৈরি হোক। তাই সোমবার মাঠে নামার আগে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভিকুনার সঙ্গে।
তবে ঘটনা হচ্ছে, হাতে এখনও দুটো দিন থাকলেও ফের সবুজ-মেরুন মাঠে বল নিয়ে নামবেন বলে এখন থেকেই উত্তেজিত ব্যারেটো। বললেন, “সত্যিই তর সইছে না। আবার মোহনবাগান মাঠে নামব। তবে এবার নতুন ভূমিকায়। তবে ভিকুনা যেভাবে বলবেন, আমার ভূমিকা সেরমকই হবে। আমি এখন শিক্ষার্থী।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.