সোম রায়: রাত তখন আটটা। রবিবাসরীয় যুবভারতী ছেড়ে স্রোতের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোচ্ছেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। কেমন যেন ঘোর-ঘোর চেহারা সব, আনন্দ-আবেগের যাবতীয় বহিঃপ্রকাশ যেন মতো আবদ্ধ একটাই শব্দে। জ-বি, জ-বি! টিমকে ডার্বি জেতানো মহানায়ককে নিয়ে সমর্থকদের আবেগের লেখচিত্র যে এমন হবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু উৎসব সরিয়ে বাস্তব যদি বিচার্য হয়, তা হলে পরপর দু’টো ডার্বির নায়ককে নিয়ে যে আলোচ্য বিষয়টা এবার ওঠা উচিত, সেটাই তুলে দিলেন আইএম বিজয়ন। পরিচয়ে যিনি জবি জাস্টিনের গুরু।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকাকালীন এই জবিকেই খেলাতেন না খালিদ জামিল। ম্য়াচের পর ম্য়াচ মাঠের বাইরেই বসে থাকতে হত তাঁকে। আলেজান্দ্রোর জমানায় ক্লাব ফুটবল কাঁপাচ্ছেন তিনি। নিয়মিত পারফর্ম করছেন। ডার্বির চাপ সামলে ক্লাবকে জেতাচ্ছেন। দেশের হয়ে আর কবে নামবেন তিনি? ডার্বিটা দেখতে পাননি আইএমভি। কিন্তু ছাত্রের খেলা নিয়ে খবরাখবর ঠিকই রেখেছেন। সন্ধেয় কেরল থেকে ফোনে বলছিলেন, “শুনলাম জবি নাকি দারুণ খেলেছে। আমার একটাই প্রশ্ন। আর কী করলে ও জাতীয় দলে সুযোগ পাবে?” সঙ্গে দ্রুত যোগ করলেন, “দেখুন, সুনীল ছাড়া ভাল স্ট্রাইকার আমাদের নেই। সেখানে ছেলেটা দিনের পর দিন নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছে। এরপরও সুযোগ না পেলে ওর প্রতি অন্যায় করা হবে।” আর ছাত্র? জবি নিজে কী বললেন? কী করলেন?
সাধারণত ম্যাচের সেরার সম্মান পেলে খুশিতে ডগমগ হন ফুটবলাররা। তবে জবি কোনওমতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ করে সেরার ট্রফি নিয়ে দৌড় দিলেন গ্যালারির দিকে। যে গ্যালারিতে ততক্ষণে লাল-হলুদ আবির উড়ছে, দেখে ভ্রম হচ্ছে লাল-হলুদ সমুদ্র বুঝি। আর শুধু উদ্বেল সমর্থককুলেরই নয়, জবি মন রাখলেন ফটোগ্রাফারদেরও। সেসব পোজও দেখার মতো! কখনও বাঁ হাতে ট্রফি নিয়ে উসেইন বোল্টের মতো পোজ দিলেন গ্যালারির দিকে তাক করে। কখনও আবার চালালেন অদৃশ্য স্টেনগান। কখনও কোলাডোর সঙ্গে ভাংরা নাচলেন। কখনও গোঁফে তা দিতে দিতে উরুতে সপাট চাপড়, যেন শিখর ধাওয়ান! ড্রেসিংরুমে ফিরেও থামেনি সেলিব্রেশন। জলের বোতলকে শ্যাম্পেন বানিয়ে একে অন্য়ের গায়ে ঢেলে দেন ফুটবলাররা। ছিলেন আলেজান্দ্রোও।
কোচ না বললেও কাজ যে এখনও শেষ হয়নি, তা ভালই জানেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। তাই সব আনন্দ, উত্তেজনা রেখে এলেন ড্রেসিংরুমের চার দেওয়ালে। জবি পঞ্চম ভারতীয়, যিনি টানা দু’টি বড় ম্যাচে গোল করলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ওঠে সেই প্রসঙ্গ। লাজুক হেসে বলেন, “এসব তথ্য জানতাম না। শুরুতে চেষ্টা করতাম সব ম্যাচে গোল করতে। আর ডার্বি গোল তো সবসময়ই স্পেশাল।” তাঁর কানে তোলা হল বিজয়নের প্রশ্ন। বিতর্ক এড়াতে প্রসঙ্গে এড়িয়ে গেলেন। বললেন, “বিজুভাই আমায় ভালবাসেন। তাই হয়তো বলেছেন। জাতীয় দলে খেলা তো সবারই স্বপ্ন। তবে এখন এসব মাথায় রাখতে চাই না। আমার লক্ষ্য আই লিগ জেতা।” আর স্টেনগান সেলিব্রেশন? ওটা কি সোনির বদলা? বললেন, “হঠাৎ করেই করে ফেলেছি। কোনও বদলা-টদলা নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.