দুলাল দে: ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে যখন সারা দেশ জ্বরে আক্রান্ত তখন ভারতীয় ফুটবলে নেমে এল ঘন অন্ধকার। প্রথমে চুক্তিভঙ্গর হুমকি। পরে চুক্তির টাকা বন্ধ করে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে এফএসডিএল বুঝিয়ে দিল, শর্ত অনুযায়ী আই লিগ নয়, আইএসএলকে সেরা করতে হবে। এবং এই মরশুমেই। সঙ্গে হাস্যকর শর্ত, সুপার কাপ না খেলার জন্য আই লিগের ক্লাবগুলিকে শাস্তি দিয়েছিল শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। সেই শাস্তির বিরুদ্ধে খোদ ফেডারেশনকেই অ্যাপিল কমিটিতে গিয়ে ফের শাস্তি বাড়ানোর জন্য আবেদন জানাতে হবে। সেই সঙ্গে রয়েছে আরও অনেক শর্ত। পরিস্থিতি ভয়াবহ বুঝে আই লিগ ক্লাবগুলি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যাচ্ছে আদালতে। নতুন মরশুমে আইএসএল-আই লিগের ভবিষ্যত তাই অন্ধকার।
আরও পড়ুন: কুটিনহোর জোড়া গোলে দুর্দান্ত জয় দিয়ে কোপা অভিযান শুরু ব্রাজিলের
এফএসডিএলের প্রথম শর্ত ছিল, আইএসএল হবে দেশের এক নম্বর লিগ। যেহেতু ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলছিল না, তাই ফেডারেশন ছিল নিশ্চুপ। এই মরশুমেও দুই ক্লাব আই লিগ খেলায় ফেডারেশন ঠিক করে, যা ছিল তাই থাকবে। পরের মরশুমে আইএসএল হবে এক নম্বর লিগ। আগুনে ঘৃতাহুতি হয় সুপার কাপ না খেলা দলগুলির শাস্তি দেখে। ইস্টবেঙ্গলকে ৫ লক্ষ ও আই লিগের অন্যান্য ক্লাবকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। অ্যাপিল কমিটিতে পাঠানো হয়েছে মোহনবাগানকে। এতেই ক্ষুব্ধ হয় এফএসডিএল। ফেডারেশন সচিব কুশল দাসকে ডেকে এফএসডিএল বুঝিয়ে দিয়েছে, এরকম চললে চুক্তি ভাঙতে হবে । আইএসএল দলগুলি অপরাধ করলে দিতে হবে বিশাল অঙ্কর জরিমানা। আর আই লিগের ক্লাবগুলির বেলায় কেন ভিন্ন? তাই এফএসডিএল কর্তারা ফেডারেশনকে বলেছে, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে অ্যাপিল কমিটিতে যেতে হবে। জরিমানার পরিমাণ বা়ড়াতে চাই। সঙ্গে এই মাসেই আইএসএলকে এক নম্বর লিগ ঘোষণা করতে হবে। তাছাড়া, আইএসএল আর আই লিগ ক্লাবগুলি কেন স্টেডিয়াম ভাড়ার অর্থে পার্থক্য থাকবে? আই লিগের ম্যাচের জন্য যুবভারতী ভাড়া নেয় ১৫ হাজার টাকা। সেখানে আইএসএল খেলার জন্য কেন দিতে হবে ১৬ লক্ষ টাকা? মিনার্ভা কর্ণধার রঞ্জিত বাজাজকে কেন দেওয়া হচ্ছে না কড়া শাস্তি।
আরও পড়ুন: এটিকে নয়, ইস্টবেঙ্গলেই খেলতে হবে জবিকে, জানিয়ে দিল আইএফএ
ফেডারেশন চাইছে, এই মরশুমে আই লিগের দল বাড়াতে। মুম্বই থেকে রনি স্ক্রুওয়ালা এবং দিল্লির একটি দল আইলিগে আসতে পারে। এফএসডিএল জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অনুমতি ছাড়া কোনও নতুন দলকে আই লিগে নেওয়া যাবে না। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, বছরে চারটে কিস্তিতে ৫০ কোটি টাকা এফএসডিএল দেয় ফেডারেশনকে। অথচ এই বছরের প্রথম কিস্তি এখনও জমা পড়েনি। চুক্তি অনু়যায়ী প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার কথা এপ্রিলে। তাই রীতিমতো আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে ফেডারেশন। এফএসডিএল স্পষ্ট জানিয়েছে, আগে ইস্যুগুলির সমাধান হোক। তারপর দেওয়া হবে চুক্তির টাকা। তাই কার্যত বাধ্য হয়ে এই মাসেই মিটিং ডাকছে ফেডারেশন। আইএসএলকে এক নম্বর লিগ ঘোষণা করার পাশাপাশি অ্যাপিল কমিটিতেও ক্লাবগুলির শাস্তি বাড়ানোর জন্য আবেদন করছে ফেডারেশন। এফএসডিএল আরও জানিয়েছে, আই লিগের কোনও ম্যাচ সম্প্রচার করা চলবে না। তাই অস্তিত্ব হারাতে বসা আই লিগের ক্লাবগুলি ঠিক করেছে আদালতের দ্বারস্থ হবে। ফেডারেশন যেখানে হাত পা বাঁধা সেখানে আদালতই ভরসা। ফলে এই মরশুমে আইএসএল আর আই লিগ কী হবে কেউ জানে না। ঘোর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে ভারতীয় ফুটবল। যেখানে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে আই লিগের ক্লাবগুলির। একইসঙ্গে আইএসএলের চাপে না চাইলেও জবি জাস্টিন ইস্যুতে ঢুকে পড়ল ফেডারেশন। বিষয়টি যাচ্ছে প্লেয়ার্স স্টেটাস কমিটিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.