দুলাল দে: দু’জনেই স্প্যানিশ। কিন্তু ফুটবল দর্শনে পার্থক্যের মতোই স্প্যানিশ হয়েও কেরালা ব্লাস্টার্স কোচ কিবু ভিকুনা বেশি থাকেন পোল্যান্ডে। আর আন্তোনিও হাবাস (Antonio Lopez Habas) স্পেনেই।
বহু আগে হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে ইতালিয়ান কোচ আরিগো সাক্কির ছবি রাখতেন এটিকে-মোহনবাগান (ATK-Mohun Bagan) কোচ হাবাস। মিলানের সর্বকালের অন্যতম সেরা কোচের অন্ধ ফ্যান বললেও কম বলা হয়। তাই হয়তো স্প্যানিশ ফুটবলের হাওয়া-বাতাসে বেড়ে ওঠার পরেও ইতালীয় কোচের স্টাইলেই ডিফেন্স, ডিফেন্স করে কোচিং স্টাফকে পাগল করে দেন। সাক্কির বিখ্যাত একটা উক্তি ছিল। তিনি বলতেন, চ্যাম্পিয়ন জকি হয়ে ওঠার জন্য সবার আগে ভাল ঘোড়া দরকার। যা অক্ষরে অক্ষরে মানেন হাবাস। দল, দল, আর দল। একটা ভাল দল তৈরি করার জন্য আইএসএলের (ISL) সব দলের আগে এটিকে-মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে বসে পড়েছিলেন। ফিরিয়ে এনেছেন তিরিকে। এনেছেন এই মুহূর্তে দেশের সেরা ডিফেন্ডার সন্দেশকে। প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাসরা তো গত মরশুম থেকেই আছেন। এই মরশুমের আইএসএল অন্য মরশুমের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। নিভৃতাবাস, জৈব সুরক্ষা বলয়, কত সব শব্দ। নিভৃতাবাসের জীবন নিয়ে অনেক ক্রীড়াবিদই অনুযোগ জানাচ্ছেন। আর এই অবস্থায় আইএসএলের প্রথম ম্যাচটাই খেলতে নামতে হচ্ছে এটিকে মোহনবাগানকে।
সবদিক থেকে নতুনত্ব। এর আগেও জনসমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু এবার সঙ্গী হয়েছে অগণিত সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সমর্থন। যদিও করোনা আবহে গ্যালারি থেকে শব্দব্রহ্মর সাহায্য পাওয়ার কোনও উপায় নেই।
তাতে অবশ্য বিন্দুমাত্র হতাশ হয়ে পড়ছেন না আইএসএলের সফলতম কোচ। হাবাসের ব্যাখ্যা হল, “গতবারই গোয়াতেই আইএসএল ফাইনালে দর্শকশূন্য অবস্থাতেই কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। শুরুর দিকে কয়েক মিনিট পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়তো সমস্যা হয়। তারপর আর মাথায় থাকে না, গ্যালারিতে লোক আছে না নেই।”
হাবাস যেরকম মাঠের বাইরে আচরণে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক এবং আবেগপ্রবণ সেখানে মাঠে কী মাঠের বাইরে সবক্ষেত্রে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করেন ভিকুনা (Kibu Vicuña)। আচরণ কী মাঠের ফুটবল ট্যাকটিক্স, সব কিছুতে ভিকুনার দশর্ন হল, ব্যালান্স করা আর পজেশনাল ফুটবল। অর্থাৎ যখন আক্রমণে যাবে ৩-৫-২ সিস্টেম। সেটাই ডিফেন্স করার সময় হয়ে যায়, ৪-৫-১ সিস্টেম। প্রথম ম্যাচেই প্রবল শক্তিশালী হাবাসের এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে ভিকুনা তাই পই পই করে ফুটবলারদের বুঝিয়েছেন, “যত বেশি সম্ভব বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দিতে হবে। এটিকে-মোহনবাগান বল না পেলেই তাড়াহুড়ো করবে।” উলটোটা হলে কী হবে, সবচেয়ে ভাল ভিকুনাই জানেন।
ভিকুনা যখন মোহনবাগান কোচের জার্সি গায়ে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন, তখন এটিকে-মোহনবাগান নামে নতুন দলের নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ফলে বেশ কয়েকবার আই লিগ জয়ী কোচ নিয়ে মন্তব্য করতে হয়েছিল হাবাসকে। সময়ের নিয়মে সেই ভিকুনা আর হাবাস এবার পরস্পরের মুখোমুখি প্রথম ম্যাচেই। যে প্রসঙ্গে হাবাস বলছেন, “ওঁর কোচিংকে সত্যিই আমি সম্মান করি।’’ আর ভিকুনা বলছেন, “মোহনবাগান আমার কাছে সব সময় স্পেশ্যাল থাকবে।’’
বায়ো বাবলের মধ্যে থেকেও অন্যান্য সব দল যেখানে একটা, দুটো হলেও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে, হাবাসের এটিকে-মোহনবাগান সেখানে ব্যতিক্রম। ভিকুনার কেরালা (Kerala Blasters) এসসি ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারলেও জিতেছে হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে। সেখানে হাবাস তো তাঁর দলকে পরীক্ষা করারই সময় পাননি। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে হাবাস বললেন, “মনে হয়েছে না খেললেও কোনও অসুবিধা নেই, তাই খেলিনি। প্রথমত যেখানে ট্রেনিং করছি, সেই মাঠেই খেলতে হত। দ্বিতীয়ত, ঠিকঠাক রেফারি ছাড়া ম্যাচ হয়েছে। এসব কারণেই মনে হয়েছে, প্রতিযোগিতায় খেলার আগে প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেললেও হবে। যা প্রস্তুতি হয়েছে, আমি খুশি।” আর ভিকুনা বলছেন, “প্রি-সিজন ট্রেনিংটা আরেকটু বেশি হলে ভাল হত। এরকমও হয়েছে, তিনদিন আগে আমার কিছু ফুটবলারের কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে।” তাহলে ভিকুনা কি তৈরি নন? ভিকুনা বললেন, “পরিস্থিতিকে অস্বীকার করি কী করে? ভিসা সমস্যায় বিদেশি ফুটবলররা এল দেরিতে। এতে শুধু ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের কথা বলছি না। ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়েও অনেক অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু এই দলটাই দেখবেন, পরের মাসে পুরো বদলে গিয়েছে।” বিদেশি ফুটবলারের ব্যাপারে হাবাসের কোনও সমস্যা না থাকার একটাই কারণ, রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়মস, এডু গার্সিয়ারা গত মরশুম থেকেই হাবাসের কোচিংয়ে রয়েছেন। তবে ভিকুনার স্বান্ত্বনার জায়গা, হাতে পেয়েছেন ইপিএল খেলা গ্যারি হুপারের মতো ফরোয়ার্ড। কিংবা দলের অধিনায়ক জিম্বাবোয়ের ডিফেন্ডার কোস্তা নামোয়েনসু। অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জর্ডন মারিও তো নতুন। আর ঠিক এই জায়গাতেই প্রথম ম্যাচের আগে সমস্যায় কিবু ভিকুনা। আর এগিয়ে হাবাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.