স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েও ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের টলাতে পারল না আই লিগের ক্লাবগুলি। মঙ্গলবার কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হল, গত মরশুমের মতো এবারও আইএসএলের চ্যাম্পিয়ন ক্লাবকে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলাতে এএফসির কাছে সুপারিশ করবে ফেডারেশন। আগে বলেও আই লিগের ক্লাবগুলির জন্য স্লট চেয়ে আবেদন করল না ফেডারেশন। যার অর্থ আই লিগকে সরিয়ে আইএসএলকে দেশের শীর্ষ লিগ ঘোষণা করল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। প্রশ্ন উঠছে, কী করবেন আই লিগের ছ’টি ক্লাবের কর্তারা? শোনা যাচ্ছে, ক্লাবগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চুক্তির শর্ত দেখিয়ে এফএসডিএলের চাপে ফেডারেশন এদিনই আইএসএলকে দেশের সেরা লিগ হিসাবে ঘোষণা করবে, এমন খবর ছিল আই লিগের কর্তাদের কাছেও। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়ে সোমবার ফেডারেশন এবং এএফএসডিএলের বিরুদ্ধে কয়েক দফা দাবি জানিয়ে চিঠি দেয় দুই প্রধান-সহ আই লিগের ৬ ক্লাব। ফেডারেশন সূত্রের খবর, পেরেন্ট বডির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানোটা ভালভাবে নিতে পারেননি ফেডারেশনের কর্তারা। তখন ঠিক হয়, এফএসডিএলের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আইএসএলকে শীর্ষ লিগ করা হবে।
ফেডারেশনের তরফে সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে জাতীয় দলের ফুটবলাররা আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর সঙ্গে ফেডারেশন দেখেছে, আইএসএলের ক্লাবগুলি গ্রাসরুট প্রোগ্রাম-সহ ইউথ ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামও দারুণভাবে করেছে। যে কারণে এএফসির কাছে ফেডারেশন সুপারিশ করেছে, এবার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন ক্লাবকে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ালিফাইং খেলতে দেওয়ার জন্য।
আই লিগের জন্য আলাদা করে স্লট না চাইলেও এএফসির কাছে ফেডারেশন অনুরোধ করেছে, আইএসএল আর আই লিগ নিয়ে ভারতীয় ফুটবলের একটি রোডম্যাপ ঠিক করে দেওয়া হোক। এএফসি সচিব দাতো উইন্ডসোরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যেন ভারতে আসে। যদিও এর আগে রোডম্যাপ ঠিক করতে এএফসি প্রতিনিধিরা ভারতে এসে আই লিগ, আইএসএলের পাশাপাশি এফএসডিএলের সঙ্গেও কথা বলেন। তবে সমাধান সূত্র বেরোয়নি। কিছুদিন আগে ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল প্যাটেলের সঙ্গে আই লিগের ক্লাবগুলির আলোচনার জানানো হয়, আই লিগের ক্লাবগুলির জন্য আলাদা স্লট চেয়ে এএফসির কাছে অনুরোধ করা হবে। কিন্তু কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না। ফেডারেশনের তরফে বলা হচ্ছে, “প্রফুল্ল প্যাটেল আলোচনায় যে সমাধান সূত্র দিয়েছিলেন, তা মেনে নিলে আই লিগের ক্লাবগুলোর জন্যও স্লট চেয়ে আবেদন করা হত। কিন্তু ক্লাবগুলিা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাল। শোনা যাচ্ছে, আদালতেও যেতে পারে। তাহলে আমরা কাদের জন্য এএফসির কাছে অনুরোধ করব?’’
পালটা জবাব দিলেন মোহনবাগানের অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত। বললেন, “পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা আলোচনা করছি। তবে ফেডারেশন সম্পূর্ন মিথ্যে কথা বলছে। ৩ জুলাই প্রফুল্ল প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলার পর আমরা সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ২৪ ঘন্টা সময় নিই। পরের দিন আমাদের দাবিগুলি শুধু ফেডারেশনকে নয়, এএফসিকেও জানিয়েছি। কিন্তু ৮ জুলাই পর্যন্ত ফেডারেশনের তরফ থেকে আমাদের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়নি। ভারতীয় ফুটবল নিয়ে আমরা কী চাইছি, তা লিখিত আকারে সবার কাছে পাঠিয়েছি। আমাদের সঙ্গে ফেডারেশন সভাপতি যা আলোচনা করেছিলেন, সবই মৌখিক। যদি কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেটা আমাদেরও লিখিত ভাবে পাঠান। মৌখিক আলোচনার কী কোনও গুরুত্ব রয়েছে?”
ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্তের পর বোঝা যাচ্ছে না, ভারতীয় ফুটবল কোন পথে চলবে। ফেডারেশন যে আর আই লিগের ক্লাবগুলোর দাবির কাছে মাথা নত করবে না, তা বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন ক্লাবগুলো তা মেনে নেবে? নাকি পালটা বিদ্রোহের পথে যাবে? এটা সময়ই বলবে। তবে এদিন নিজেদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তর বিরুদ্ধে ক্লাবরা আদলতে যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছে। তারপর সময়ই সব বলবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.