ফাইল ছবি
দুলাল দে: মোটামুটি প্রত্যেক ম্যাচেই রেফারি নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছে আইএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত। প্রতিবাদও জমা হচ্ছে। এরকমটা প্রত্যেক বছরই হয়। কিন্তু সমাধানের রাস্তা আর বের হয় না। সমস্যা সমাধানের জন্য রেফারি থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি সবাই চাইছেন, ‘ভার’ (VAR) প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে। কিন্তু ‘ভার’ প্রয়োগের জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, তার সংস্থান হবে কী করে? আর সেখানেই আটকে আছে ‘ভার’-এর প্রয়োগ।
শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়, আইএসএল চালাতে গিয়ে খোদ এফএসডিএল (FSDL) আর্থিক লোকসানের মুখে। কিন্তু ফুটবলের প্রসারের জন্য এই আর্থিক ক্ষতি নিয়েই আইএসএল (ISL 2021) চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর এফএসডিএল। কিন্তু কতদিন? স্টার যেহেতু আইএসএল চালাতে গিয়ে এফএসডিএলের সঙ্গে অন্যতম শেয়ার হোল্ডার, তাই টেলিকাস্ট রাইটস থেকে আলাদা করে কোনও অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ম্যাচ দেখিয়ে বিজ্ঞাপন বাবদ যে টাকাটা স্টার পায়, তার শেয়ার এফএসডিএলকে দেয় স্টার কর্তৃপক্ষ। আই লিগে বিমান ভাড়া থেকে হোটেল খরচের বেশ কিছুটা অংশ ক্লাবগুলিকে দেয় ফেডারেশন। কিন্তু আইএসএলের ক্ষেত্রে উলটো। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিকেই হোটেল ভাড়া থেকে বিমান খরচ, সব দিতে হয়। তবে লিগ শেষে প্রত্যেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সেন্ট্রাল স্পনসরশিপ থেকে প্রায় ১৫ কোটি করে টাকাও দেয় এফএসডিএল। যা আই লিগে ফেডারেশন (AIFF) দেয় না। এতে কিছুতেই লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছে না আইএসএল কর্তৃপক্ষ। এই আর্থিক ক্ষতির মুখ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, তা নিয়ে ঘন ঘন মিটিং চালাচ্ছেন এফএসডিএল কর্তারা। ফলে আইএসএলের মানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘ভার সিস্টেম’ প্রয়োগ করতে চাইলেও পারছেন না তাঁরা।
ভার প্রয়োগ করতে চাইলে, এক-একটি ম্যাচে প্রায় ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। এই অতিরিক্ত টাকা আসবে কোথা থেকে? তাছাড়া ‘ভার’ প্রয়োগের জন্য ‘ভার’-এর ট্রেনিং প্রাপ্ত রেফারির পাশাপাশি আলাদা পরিকাঠামোও রাখতে হবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (English Premier League) প্রত্যেকটি মাঠে ‘ভার’-এর পরিকাঠামো না রেখে শুধু লন্ডনে ‘ভার’-এর পরিকাঠামো রাখা হয়েছে। সেখানে বসে ‘ভার’-এর রেফারিরা ম্যাচ পরিচালনা করা রেফারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এবার যেহেতু আইএসএল গোয়াতে হচ্ছে, তাই শুধু গোয়াতে একটি কেন্দ্র ‘ভার’-এর পরিকাঠামো তৈরি করলেই হয়ে যেত।
‘ভার’ সিস্টেমে মূলত দেখা হয় অফসাইড, লাল কার্ড, পেনাল্টি। আর এগুলি নিখুঁত ভাবে দেখার জন্য মাঠে প্রচুর ক্যামেরার দরকার হয়। আপাতত ২০টি বা তার কিছু বেশি ক্যামেরা দিয়ে ম্যাচ সম্প্রচার হচ্ছে। ‘ভার’ হলে প্রচুর ক্যামেরা লাগবে। বল গোললাইন অতিক্রম করেছে কি না, তা দেখার জন্য লাগবে গোললাইন টেকনলজি। সেক্ষেত্রেও আলাদা ক্যামেরা লাগবে। ফলে ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত বাজেট লাগবে।
এবারের আইএসলের সঙ্গে যুক্ত কর্তারা বলছেন, “শুধু শুধু রেফারিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ২০টার উপর ক্যামেরা দিয়ে মাঠের বিভিন্ন কোন থেকে ম্যাচ দেখানো হচ্ছে। যে কোণ থেকে রেফারি দেখতে পাচ্ছেন না, তা ক্যামেরা ধরে ফেলছে। তার উপর অন্যান্য বার কিছু ক্যামেরা গ্যালারির দর্শকদেরও ধরা হয়। দর্শক না থাকায় সব ক্যামেরাই এখন ম্যাচের দিকে। ফলে রেফারিদের ছোটখাটো ভুলও চোখে পড়ে যাচ্ছে, যে ভুলগুলো আগেও হত।”
এই সব কারণেই বিতর্ক এড়ানোর জন্য রেফারিরাও চাইছেন, ‘ভার সিস্টেম’ চালু করতে। তাতে রেফারিদের পক্ষে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত আইএসএলে সেটা হবে কী করে? তার উপর সার্ভিসেসের একজন মাত্র রেফারি ‘ভার’ সিস্টেমের পুরো ট্রেনিং নিয়েছেন। ফলে শুধুই অর্থই নয়। তার নিয়ম জানা রেফারিও দরকার হবে। সব মিলিয়ে আইএসএলে ‘ভার’ সিস্টেম প্রয়োগ এখনও বিশ বাঁও জলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.