দুলাল দে: পর পর তিন ম্যাচে জয় নেই এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan)। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মতো বোধহয় এটিকে মোহনবাগান কোচ হাবাসও (Antonio Lopez Habas) বিশ্বাস করতে পারছেন না। কিন্তু কেন এই অবস্থা? যে হাবাস মানেই, তাঁর দলের ডিফেন্স মারাত্মক আটোসাঁটো। প্রতিপক্ষ দল গোল করতে মারাত্মক ভাবে নাজাহাল হয়ে যায়, সেই হাবাসের দল এখন প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল খাচ্ছে! ব্যাপারটা সকলের কাছে শুধু বিস্ময়ের নয়। রীতিমতো অবিশ্বাস্যও। এক সন্দেশ দল ছাড়তেই এরকম অবস্থা!
শুধু ডিফেন্সই বা বলি কেন? ডার্বির পর ফরোয়ার্ডে সেই রয় কৃষ্ণকেও যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এবারের আইএসএলে পারফরম্যান্সের গ্রাফ ক্রমশ নীচের দিকে বেঙ্গালুরুর তারকা স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীরও (Sunil Chhetri )। ফর্মের ধারে কাছে নেই বেঙ্গালুরু এফসি অধিনায়ক। দলের পারফরম্যান্স ধরলেও তো দুটো দলের এই মুহূর্তে প্রায় একই অবস্থা। শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে কোনওমতে ড্র করেছেন এটিকে মোহনবাগান। আর ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সফল ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি শেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে মাত্র একটিতে! এই অবস্থায় দুটো দল বৃহস্পতিবার একে অপরকে হারানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে।
অনেকে বলছেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন থেকে দল তৈরি করছে বেঙ্গালুরু। যে কারণে, দল গঠনের সময় নিজেদের জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম থেকেই এবার বেশি ফুটবলার নিয়েছে সুনীলের দল। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানে তো সেই প্রসঙ্গ নেই। একই দল ধরে রেখে হুগো বুমোস আর কাউকোকে নিয়ে এবার আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে সবুজ—মেরুন। তাহলে এরকম খারাপ ফর্মে কেন এটিকে মোহনবাগান? হাবাস অবশ্য নিজেদের দলের এই খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে এখনই ভেঙে পড়তে রাজি নন। বরং অন্যান্য সময়ে যা বলেন,
এবারও তাই বললেন, “দলের খেলায় ভারসাম্য রাখতে হবে। কোনও দল সাময়িক ভাবে ফর্ম হারাতেই পারে। তবে এক গোলে জয় আর পাঁচ গোলে জয়। দুটো ক্ষেত্রেই তিন পয়েন্ট পাওয়া যাবে। আমাদের সেই জয়টাই পেতে হবে। সেরকম বেঙ্গালুরুকে নিয়েও হাল্কা ভাবে দেখার কিছু নেই। বললাম না, ফর্ম চলে যাওয়াটা সবই সাময়িক। ওদের কোচ থেকে ফুটবলার, সবাই ভাল। হয়তো কিছুদিনের জন্য ফর্ম হারিয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে জিততে গেলে আমাদের মাঠেই প্রমাণ করতে হবে। মাঠের বাইরের তথ্যর উপর নির্ভর করে হবে না।’’
একে তো ডার্বির পর ফর্ম হারিয়েছেন। তারউপর বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের জন্য ফিজির জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন রয় কৃষ্ণ। যদিও হাবাস বললেন, “আইএসএল ছেড়ে কৃষ্ণর ফিজির হয়ে খেলতে যাওয়া নিয়ে এখনও পর্যন্ত আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। যেটা এখনও পর্যন্ত আমি জানি না, তা নিয়ে কথা বলব কি করে?” কিন্তু ফর্ম? এক্ষেত্রেও হাবাস তাঁর সেরা স্ট্রাইকারের ব্যর্থতার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। ‘‘আমি মনে করি না কৃষ্ণ ফর্ম হারিয়েছে। প্রতিটি ম্যাচে গোল না পাওয়া মানেই যে, আমাদের সেরা স্ট্রাইকার ফর্ম হারিয়েছে, সেরকমটা নয়। শুরুতে যা বলেছি, এখনও তাই বলছি, রয় কৃষ্ণ আইএসএলের অন্যতম সেরা ফুটবলার। আমার দলেরও অন্যতম ভরসা।”
ফরোয়ার্ড নিয়ে না হয় প্রশংসা করছেন। কিন্তু ডিফেন্স? প্রতিদিন যে গোল খেয়ে চলেছে, তাতে শেষ চারে যাওয়া নিয়েও রীতিমতো সংশয় তৈরি হতে পারে। আর হাবাস যে এই সংশয় তৈরি হওয়া অনুধাবন করতে পারছেন না, সেরকমটা নয়। বলছিলেন, “হাতে এখনও তো অনেকগুলো ম্যাচ আছে। যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জিততে হবে। ২০১৯—এ চেন্নাইয়ন এফসি শুরুতে একের পর এক ম্যাচে হেরেছিল। শেষ পর্যন্ত কিন্তু ওরাই ফাইনাল খেলে। তাই আমাদের সব সুযোগ শেষ হয়ে গিয়েছে, এখনই বলা যাবে না।’’ তবে পাশাপাশি এদিনও রেফরিং নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা গোপন রাখেননি তিনি। দাবি জানান, ভিআর সিস্টেম চালুর জন্য।
সুনীলদের বিরুদ্ধে হাবাসের টিম এখন জয়ের সরণীতে ফিরতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.