দীপক পাত্র: এখনও পুরো ঘটনাটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে তাঁর। ডার্বি নিয়ে উন্মাদনা বহুবার চাক্ষুষ করেছেন। ছোট বয়সে মোহনবাগান (Mohun Bagan) জুনিয়র দলে খেলতেন। তাই সবুজ-মেরুন জার্সির প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ বরাবর ছিল। কিন্তু শনিবার এভাবে যে এটিকে মোহনবাগানকে বিজয়ী করতে পারবেন তা বোধহয় কল্পনাও করেননি। বিশেষ করে ডার্বি ম্যাচে। আবার দল যখন পিছিয়ে ছিল।
৬১ মিনিটে নেমেছিলেন। ৬৪ মিনিটে তাঁর গোলের জয়যাত্রা শুরু। বাকি দু’টি গোল করেন খেলার একদম অন্তিম লগ্নে। তাই শনিবারের নায়ক কিয়ান নাসিরি (Kiyan Nassiri) ডার্বিতে হ্যাটট্রিক প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানিয়ে দিলেন, “এখনও পুরো ঘটনাটা স্বপ্নের মতো। সকলের মতো আমিও চাইতাম ডার্বিতে গোল করতে। উইঙ্গার বা স্ট্রাইকারদের প্রধান কাজই হল গোল করা। তাই যা করেছি তার মধ্যে নতুনত্ব কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ আমি যে পজিসনে খেলি সেখানে গোল করাই তো প্রধান কাজ।”
কিয়ানের আগে বাইচুং ভুটিয়া ও এডে চিডির ডার্বিতে হ্যাটট্রিক রয়েছে। তবে দু’জনই যথেষ্ট সিনিয়র ফুটবলার হিসেবে নাম করে ফেলেছিলেন, যখন হ্যাটট্রিক করেন। তারচেয়েও বড় কথা, এঁরা দু’জন প্রথম একাদশে থেকে খেলা শুরু করেন। তাই তাঁদের কাছে হ্যাটট্রিক করাটা একদিক দিয়ে সহজ ছিল। কিন্তু কিয়ান?
নামলেন দীপক টাংরির জায়গায় ৬১ মিনিটে। আরও বড় বিষয় হল, এই প্রথম ডার্বিতে খেলার জার্সি পেয়েছিলেন। তাছাড়া তিনি যখন নামেন তখন কিনা দল ১–০ গোলে পিছিয়ে। এসসি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে সিডল গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। এমন পরিস্থিতিতে কোনও কোচ একজন জুনিয়রের উপর ভরসা করতে চাইবেন না। কিন্তু কোচ ফেরান্দো ঝুঁকি নিয়েও নামিয়ে দেন কিয়ানকে। জামশিদ নাসিরির ছেলে কিয়ান বলছিলেন, “কোচের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। এইসব ম্যাচে সাধারণত কোনও কোচ জুনিয়রদের খেলাতে চান না। কিন্তু কোচ এমন সময় আমাকে নামিয়ে ছিলেন যখন দল পিছিয়ে রয়েছে। সেই সময় তিনি যে আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন তা কখনও ভুলতে পারব না।”
কিয়ানের এখন একটাই লক্ষ্য, দলে নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠা। এমনিতেই আইএসএল (ISL) খেলা দলগুলোর কোচ জুনিয়রদের উপর তেমন ভরসা করতে পারেন না। তার উপর এটিকে মোহনবাগানে তারকার ছড়াছড়ি। তাই কিয়ান জানিয়ে দিলেন, ২৪ ঘন্টা আগেকার ঘটনা তিনি ভুলে গিয়েছেন। কিয়ান বলেন, “ডার্বিতে হ্যাটট্রিকের ঘটনা আর মনে রাখতে চাই না। এখন আমার একটাই লক্ষ্য, দলে নিয়মিত খেলা। যাতে মাঠে বেশি সময় কাটাতে পারি। এমনিতেই আমাদের দলে তারকার অভাব নেই। এমন শক্তিশালী দলে জুনিয়রদের ঠাঁই পাওয়ার কাজটা বেশ কঠিন। তবে বুঝে গিয়েছি, এই দলে জায়গা পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে।”
কিয়ান জানিয়ে দিলেন, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর চেয়ে তাঁর কাছে বড় কাজ হল, আরও ভাল খেলা। যাতে সুযোগ পেলে তাকে যেন সদ্ব্যবহার করতে পারেন তিনি। ডার্বি জিতলেও পুরো দল কিন্তু উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে যায়নি। আর পাঁচটা ম্যাচ জেতার মতোই হোটেলে গিয়ে ডিনার সেরে দল ঠাঁই নিয়েছে বিছানায়। কিয়ানও তার ব্যতিক্রম হতে পারেননি। তাই বাবা তথা জীবনের প্রথম ‘কোচ’ জামশিদ নাসিরির সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ পাননি। তবে রবিবার সকালে মা–র সঙ্গে কথা হয়। “বাবা ট্রেনিং করাতে মাঠে গিয়েছিলেন বলে কোনও কথা হয়নি। তবে মায়ের সঙ্গে হয়েছে। বাবার খেলা দেখিনি কখনও। তবে জানতাম, ডার্বিতে প্রচুর গোল রয়েছে বাবার। প্র্যাকটিস করেছি বাবার সঙ্গে। কোনওদিন বাবা আমার সামনে কোনও লক্ষ্য স্থির করে দেননি। তবে একটা কথাই বলে আসতেন, ‘পরিশ্রমের বিকল্প হয়না।’ এই প্রথম নয়, শিবিরে বা বাইরে থাকাকালীন বাবার সঙ্গে আমার কোনওদিন তেমন কথা হয় না।”
বেশ কিছু বছর আগে কিয়ান বাংলা অনূর্ধ্ব ১২ দলে প্রথম ডাক পান। তারপর চলে আসেন অনূর্ধ্ব ১৩ মোহনবাগান দলে। মহামেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে জুনিয়র আই লিগে ২০১৬-তে খেলেছেন। পরে যোগ দেন সিসিএফসি দলে। সেখানে তিনি সিনিয়রদের সঙ্গে খেলেন। তারপর আসেন মোহনবাগান অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। সেই বছর কোচ ভিকুনা বেশ কয়েকজন জুনিয়র ফুটবলারকে সুযোগ দিয়েছিলেন সিনিয়র দলে। শুভ ঘোষ, সেখ শাহিলদের সঙ্গে সিনিয়র দলে নেওয়া হয় কিয়ান নাসিরিকেও।
ডার্বিতে জুনিয়র ফুটবলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করা নায়ক বলছিলেন, “আমার এখন একটাই লক্ষ্য ভারতীয় দলে ঢোকা। জানি, কাজটা কঠিন। তবে এখনই এসব নিয়ে ভেবে কোনও লাভ নেই। জানি নিয়মিত ভাল খেললে একদিন না একদিন ঠিক ডাক পাব।” অনেকেই মনে করছেন, সেই দিনটা বেশি দূরে নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.