দুলাল দে: সময়টা নেহাত কম নয়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফের কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সিনিয়র ভারতীয় দলের ফুটবল (Indian Football Team) শিবির। তাও সেটা ৭-৮ দিনের জন্য নয়। বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে কাতার ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগে কলকাতায় (Kolkata) টানা ৩৫ দিনের জাতীয় শিবির করার পরিকল্পনা করেছেন কোচ ইগর স্টিমাচ। জুনে কলকাতা থেকেই সোজা কাতারে (Qatar) উড়ে যাবেন সুনীল ছেত্রীরা (Sunil Chhetri)।
ফিফা (Fifa) আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর (United Arab Emirates) বিরুদ্ধে ০-৬ গোলে হারার পর ময়নাতদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ফুটবলে। আরব আমিরশাহি শক্তিশালী দল। ফিফা ক্রমতালিকায় ভারত যেখানে ১০৪। আরব আমিরশাহি সেখানে ৭৪। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর শক্তি বোঝাতে এসব তথ্য নিয়ে কারও কোনও আপত্তি নেই। তবুও ৬ গোল খাওয়াটা যে অত্যন্ত খারাপ বিজ্ঞাপন, এটাও মানছেন সবাই।
মঙ্গলবার সকালেই দুবাই থেকে পুরো দল ফিরে আসার পর ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে কথাও হয় জাতীয় কোচ ইগর স্টিমাচের। প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো শক্তিশালী দল। তারপরেও ওমান ম্যাচের দলটা এভাবে কেন পরিবর্তন করে দিলেন স্টিমাচ? সরকারি ভাবে ৬ গোল খাওয়ার কোনও ব্যাখ্যা না দিলেও ফেডারেশন কর্তাদের কাছে হারের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, কাতার ম্যাচের আগে শিবিরের সব ফুটবলারকে দেখে নিতে চান। যে কারণে, দুবাইয়ের শিবিরে বেশি ফুটবলারকে ডাকা হয়েছিল।
জুনে কাতার ম্যাচের আগে আর কোনও ফিফা ফ্রেন্ডলি নেই। তাই কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফুটবলারদের দেখে নেওয়ারও আর সুযোগ পাবেন না জাতীয় কোচ। কাতার ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য নেপাল, ভূটানের মতো প্রতিপক্ষর সঙ্গে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেও কোনও লাভ হবে না। তাই ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্যাচ দুটো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ম্যাচ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ওমানের বিরুদ্ধে সন্দেশ, বিপিন, আশিকদের দেখে নেওয়ার পর শেষ ম্যাচে আমিরশাহীর বিরুদ্ধে আদিল খান, লিস্টন কোলাসোদের দেখতে প্রথম দলে রেখেছিলেন স্টিমাচ। দুটো ম্যাচ দেখে নেওয়ার পর স্টিমাচ বুঝতে পেরেছেন, কাতার ম্যাচের জন্য এর পরের জাতীয় শিবিরে কোন কোন ফুটবলারদের ডাকবেন।
তবে দুবাইয়ের সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে অন্য আরেকটি মারাত্মক সমস্যায় পড়েছিল ভারতীয় দল। হঠাৎই পরীক্ষায় ধরা পড়ে মাসুর এবং আশিক কোভিড পজিটিভ। মাথায় হাত পড়ে যায় ভারতীয় দলের। সেক্ষত্রে পুরো জাতীয় দলকেই আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়। কিন্তু দ্বিতীয় পরীক্ষাতে মাসুর, আশিক দু’জেনরই কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পায় ভারতীয় দল। শেষ ম্যাচে খেলেন মাসুর।
এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে ৬ গোল খাওয়ার প্রসঙ্গে ফেডারেশন কর্তারা এখনই ভেঙে পড়তে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য হল, ভারতীয় দল এখন একটা ডেভলপমেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলেছে। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে কম বয়সীদের একটা দল তৈরির চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতের দল তৈরির জন্য সবাইকে দেখে নেওয়ার জন্য একটু ঝুঁকি নিতেই হবে। তাছাড়া লিস্টন কোলাসোরা আইএসএলে যতই ভাল খেলুন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দলগুলো যে আরও বেশি শক্তিশালী এই ম্যাচগুলোর মধ্য থেকেই সবাই বুঝতে পারছেন। সেভাবেই এখন তৈরি হতে হবে ভারতীয় দলকে।
বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে কাতার, বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল যতই ভাল খেলুক না কেন, বিশ্বকাপের অভিযান শেষ হয়ে গিয়েছে। ইগর স্টিমাচ সহ জাতীয় দলের এখন মূল লক্ষ্য পরের ম্যাচগুলিতে ভাল ফল করে এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। তার জন্য জুনে শক্তিশালী কাতারের বিরুদ্ধে ভাল ফল করা ভীষণই জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, কাতার এই মুহূর্ত সংযুক্ত আরব আমিরশাহির থেকেও বেশি শক্তিশালী। তার জন্য ইগর স্টিমাচ ঠিক করেছেন, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে টানা ৩৫ দিনের জাতীয় শিবির করে সরাসরি কাতার চলে যাবেন। আর এক্ষেত্রে ইগর সহ ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ভাবনায় এই দীর্ঘ শিবির কলকাতায় করার ইচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.