নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার ফাইনালের নির্ধারিত সময়ে ফল ছিল ১-১। শিবানি দেবীর গোলে এগিয়ে গেলেও লিড ধরে রাখতে পারেনি ভারত। মীমাংসা হয়নি টাইব্রেকারেও। পরে সাডেন ডেথে ফল দাঁড়ায় ১১-১১। ম্যাচ কমিশনার ডি’সিলভা জয়সূর্য ডিলানের টস করার সিদ্ধান্ত নেন। টসে জিতে উৎসব শেষে মাঠ ছাড়ে ভারত। এরপরই টস নিয়ে বাংলাদেশ প্রশ্ন তোলে। ভুল মেনে নিয়ে ফের সাডেন ডেথের সিদ্ধান্ত নেন ডিলান। ভারত তাতে রাজি না হলে দীর্ঘ আলোচনা হয়। শেষে এবারের অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে (Under 19 SAFF Championship) যুগ্মজয়ী ঘোষণা করা হয় ভারত ও বাংলাদেশকে। পাঁচ ঘণ্টা ধরে ‘নাটকে’র পর ভারতীয় দলের কোচ শুক্লা দত্ত এই সিদ্ধান্তে বেজায় চটেছেন। ঢাকা থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে কী বললেন তিনি, শুনল ‘সংবাদ প্রতিদিন’।
প্রশ্ন : আপনারা কি হোটেলে ফিরেছেন? না এখনও মাঠেই?
শুক্লা : এই সবে হোটেল ফিরলাম। ম্যাচ শেষ হয়ে গেলেও তো দীর্ঘক্ষণ মাঠেই থাকতে হয়েছে। মেয়েরা খুব ক্লান্ত। এখনও ডিনার করেনি। আর মাঠে যা হল, তারপর আর কারও খাবার তেমন ইচ্ছাও করছে না।
প্রশ্ন : ম্যাচের ফলটা কীভাবে দেখছেন?
শুক্লা : আমরা আজ প্রতিপক্ষের তুলনায় ভালো ফুটবল খেলেছি। ফলে যুগ্মজয়ীর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কোনও কারণই নেই আমাদের কাছে।
প্রশ্ন : টসের সিদ্ধান্তে প্রথমে তো বাংলাদেশ আপত্তি জানায়নি…
শুক্লা : (প্রশ্ন শেষের আগেই) একেবারেই তাই! ম্যাচ কমিশনার যখন এসে বললেন, এবার ফলাফল টসের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে, তখন ওদের কেউই কোনও আপত্তি জানায়নি। বরং একসঙ্গে পাশে দাঁড়িয়েই টস করল। কিন্তু টসে হারার পরই ওদের রং বদলে গেল। তখন হঠাৎ করে ওদের সব আইন মনে পড়ল! কিন্তু যদি উল্টোটা হত, যদি বাংলাদেশ টসে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত, আয়োজকরা তখন আমাদের কোনও কথাই শুনতেন না। আর সত্যি বলতে, টসে হারলে আমরা কোনও প্রতিবাদ জানাতেও যেতাম না। কেনই বা যাব?
প্রশ্ন : এতক্ষণ ধরে কী আলোচনা হয়েছিল?
শুক্লা : আয়োজকরা বারবার আমাদের ফের সাডেন ডেথ চালু করার জন্য বলছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে আমরা একদফা জয়ের উদযাপন করে ফেলেছি। মেয়েদের ফোকাস নড়ে গিয়েছে। একটা ফাইনালে এমনিই অত্যন্ত চাপে থাকে ফুটবলাররা। সেখানে ফোকাস নড়ে যাওয়ার পর খেলা সম্ভব হয় না। বিশেষত পেনাল্টি শুটআউটে। এটা এমন একটা কাজ, যেখানে সামান্য ভুলেরও ক্ষমা হয় না। তার উপর আমাদের ফেডারেশনের এক কর্তাও বারবার বললেন, বিদেশের মাঠে মেয়েদের নিরাপত্তার কথাটা মাথায় রেখে যুগ্মজয়ীর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য।
প্রশ্ন : সত্যিই কি নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা হয়েছিল?
শুক্লা : হয়েছিল। শুরু থেকেই আমাদের উপর মৌখিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছিল গ্যালারি থেকে। আর ম্যাচ শেষে টসের পর আমাদের জয়ী ঘোষণা করার পর রীতিমতো বোতল, ইট ছোঁড়া হয় মেয়েদের লক্ষ্য করে। যেজন্য বেশিক্ষণ আমরা উদযাপন করতে পারিনি মাঠে। দ্রুত মেয়েদের নিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে যাই। তবে পরিস্থিতি দেখে আমাদের হাইকমিশনের কর্তারা দলের সঙ্গে দেখা করেন। ওঁরা মেয়েদের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের যুগ্মজয়ীর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়।
প্রশ্ন : অর্থাৎ এখনও মন থেকে এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি?
শুক্লা : এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমার মেয়েদের বঞ্চিত করা হয়েছে। জয়ী ঘোষণার পরও ট্রফির মালিকানা ভাগ করে নিতে হয়েছে বিপক্ষের সঙ্গে। ট্রফি নেওয়ার সময় উপস্থিত থাকার কোনও ইচ্ছাই আমার ছিল না। শুধুমাত্র মেয়েদের কথা ভেবে আমি সেখানে যাই। এটুকুই বলব, আমাদের প্রাপ্য ট্রফি কেড়ে নেওয়া হল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.