কৃশানু মজুমদার: ”জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দল কাতার। বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে পৌঁছলে ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা পাবে ওরা।” কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলছিলেন আফগানিস্তানের ফুটবলার ফয়জল শায়েস্তে (Faysal Shayesteh)।
ভারতের ক্লাব শ্রীনিধি ডেকানের খেলোয়াড় ফয়জল শায়েস্তে। সেই ফয়জল আরও বলছেন, ”কোচ ফেলিক্স স্যানচেজের কোচিংয়ে কাতার ভাল ফুটবল তুলে ধরছে।” বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে কাতারের মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান। কাতার ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল আফগানরা। প্রথম সাক্ষাতে হাফ ডজন গোল হজম করতে হয়েছিল আফগানিস্তানকে। পরের পর্বের ফলাফল হয়েছিল অনেকটাই ভদ্রস্থ। কাতার ১-০ গোলে হারিয়েছিল ফয়জল শায়েস্তের আফগানিস্তানকে। খুব কাছ থেকে কাতারকে দেখার পরে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে শায়েস্তে বলছেন, ”জাতীয় ফুটবল দলের উন্নতির জন্য কাতার গত ১০ বছরে অনেক অর্থ খরচ করেছে। পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি করেছে। বাইরে থেকে দারুণ সব কোচকে এনেছে। অন্য দেশ থেকে বেশ কিছু প্লেয়ারকে এনে তাঁদের দেশের নাগরিকত্ব দিয়েছে।” সব মিলিয়ে কাতার এখন ফুটবলে ফুল ফোটাচ্ছে।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই কাতার মুখোমুখি দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের। কাতারের ফিফা র্যাঙ্কিং ৫০। অন্যদিকে ইকুয়েডর ফিফার ক্রমতালিকায় ৪৪ নম্বরে। ফলে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫০-এর সঙ্গে লড়াই ৪৪-এর।
প্রথম ম্যাচের বল গড়ানোর আগে থেকেই দারুণ আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে কাতারকে নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র জল্পনা ইকুয়েডর ম্যাচ ছেড়ে দেবে কাতারকে। ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার জন্য আট জন ইকুয়েডরের ফুটবলারকে অর্থ দেওয়া হয়েছে বলেও খবর। বিশ্বকাপ আয়োজন করার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কাতারকে নিয়ে তীব্র বিতর্ক। বিশ্বকাপ শুরুর আগেও নানা বিতর্ক তাড়া করেছিল কাতারকে। কিন্তু স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স স্যানচেজের ছেলেদের ফুটবল নিয়ে কারও মনে কোনও দ্বিধা দ্বন্দ্ব নেই। বরং তাদের ফুটবল নিয়ে শ্রদ্ধাশীল আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের ফুটবলার ও কোচ। বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বে কাতারের মোকাবিলা করতে হয়েছিল তাদের। গ্রুপে কাতার ছাড়াও ছিল বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারত, ওমান।
বাংলাদেশের প্রাক্তন কোচ জেমি ডে (Jamie Day) সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বলছেন, ”কাতারের ফুটবলাররা খুবই শক্তিশালী। সেই সঙ্গে অ্যাথলেটিক। আমাদের বিরুদ্ধে ওরা ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে নেমেছিল। খুবই শক্তিশালী দল। যে কোনও দলকে ওরা বেগ দেওয়ার ক্ষমতা ধরে।” তবে কি এবার ভাল ফুটবল দিয়ে বিতর্ক থামাবে কাতার?
বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রথম সাক্ষাতে ২-০ গোলে হেরে গিয়েছিল। দ্বিতীয় সাক্ষাতে কাতার ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বাংলাদেশকে। জেমি ডে বলেন, ”বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই নিজেদের তৈরি করেছিল কাতার। বিদেশ থেকে কোচ আনার পাশাপাশি দেশের ফুটবলারদের উন্নতি ঘটিয়েছে। ফুটবল পরিকাঠামো পুরোদস্তুর বদলে ফেলেছে। কাতারের ফুটবলাররা এখন আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল খেলছে।”
আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল, ভারত অবশ্য সম্মানের সঙ্গে লড়াই করেছিল। দোহার মাঠে গিয়ে শক্তিশালী কাতারের বিরুদ্ধে ড্র করে। একের পর এক কাতারের আক্রমণ এসে থমকে গিয়েছিল গুরপ্রীত সিং সান্ধুর (Gurpreet Singh Sandhu) গ্লাভসে। গোল করতে না পারায় কাতারের ফুটবলারদের হতাশ দেখিয়েছে। পরের সাক্ষাতেও কাতারের ঝড়ঝঞ্ঝা ধেয়ে এসেছিল ভারতের গোলমুখে। গুরপ্রীত ফের একার হাতে দুর্গ সামলেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ তিনি পরাস্ত হন। নব্বই মিনিটের লড়াইয়ের শেষে মাত্র এক গোলে ম্যাচ হারতে হয় ভারতকে।
বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে নামার আগে এএফসি এশিয়ান কাপ জিতেছে কাতার। ফয়জল বলছেন, ”এএফসি এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন কাতার। আর এই জয় দেখিয়ে দিয়েছে ঠিক পথেই এগিয়েছে কাতার। বিশ্বকাপে শক্তিশালী দলগুলোর মোকাবিলা করতে কাতার যে তৈরি, সেই ব্যাপারে আমার মধ্যে কোনও সন্দেহই নেই।”
একটু পরেই কাতার বিশ্বকাপে নামবে। ফয়জল, জেমি ডে-রা তাকিয়ে থাকবেন টিভির পর্দায়। ফেলিক্স স্যানচেজের দলকে থামানোর জন্য একদিন তাঁরা নেমেছিলেন। আজ তাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরের এক গ্রহ কাতার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.