স্টাফ রিপোর্টার: আই লিগের শেষ পর্বে এসে এত রোমাঞ্চকর পরিস্থিতির অবতারণা হয়েছে যা উত্তেজনায় হারিয়ে দেবে হিচককের কোনও সিনেমার প্লটকেও। সবাই সব জানেন। বুঝতে পারছেন পরিস্থিতি। কিন্তু কেউ কিছু বলার জায়গায় নেই। উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ মিলেমিশে একাকার। ম্যাচের আগের দু’রাত চার কোচই যে বিনিদ্র রজনী যাপন করবেন এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও প্রত্যেকেই জনসমক্ষে দেখাতে চাইছেন প্রয়োজনের তুলনাতেও বেশি শান্ত এবং স্থির। কিন্তু সত্যিই কি সেটা সম্ভব? না হলে বিকেলে বিমানবন্দরে নেমেই কেন সোজা ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে চলে আসবেন কোচ খালিদ জামিল? যে মাঠে সকালেই ফুটবলারদের প্র্যাকটিস করিয়ে গিয়েছেন নেরোকা কোচ গিফট রয় খান।
সবকিছু থেকে দূরে আর ভাবলেশহীন থাকার চেষ্টা করছেন মোহনবাগান কোচ শংকরলাল চক্রবর্তী। তাঁর ট্রফি পাওয়ার সম্ভাবনা এখন মিনার্ভার পরেই দ্বিতীয় স্থানে। খালিদ, শংকরলাল, গিফটরা যেখানে প্রতি মুহূর্ত প্রতিপক্ষকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করছেন, সেখানে মিনার্ভা কোচ খোগেন সিংয়ের অত বালাই নেই। লাইসেন্স থাকার জন্য কোচের ভূমিকায় খোগেন। কিন্তু শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে চার্চিলের বিরুদ্ধে মিনার্ভার স্ট্র্যাটেজি ঠিক করছেন মালিক রঞ্জিত বাজাজ। খোগেনকে পাশে নিয়ে তিনি ক্লাসরুমে বোর্ডে আঁকিবুঁকি কেটে বোঝানোর চেষ্টা করছেন শেষ ম্যাচে কী হবে তাঁর প্ল্যানিং। চণ্ডীগড় থেকে যখন ফোনে কথা বলছিলেন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল রঞ্জিত বাজাজের উত্তেজনাটা, “মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। এই চাপ আর নেওয়া যাচ্ছে না।”
ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় খালিদ জানান, গত ম্যাচে তিনি কখনওই ফুটবলারদের বলেননি, গোল করার পর ডিফেন্সিভ খেলতে। প্রতিটা ম্যাচে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার পর ফুটবলাররা হঠাৎ করে নিজেরাই প্রতিপক্ষের চাপ ঘাড়ে নিয়ে নিচ্ছে। তবে মেহতাব সিংকে খেলিয়ে যাওয়াটা তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত স্বীকার করে নেন তিনি।
কিন্তু শংকরলাল? চুপিসাড়ে পিছন থেকে উঠে এসে ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছেন। লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের পুরো পরিস্থিতিটা এতটাই ঘেঁটে দিয়েছেন যে ফেডারেশনের কর্তারা বুঝতে পারছেন না ৮ মার্চ কোন মাঠে নিয়ে যাবেন আই লিগ ট্রফি? যদি মোহনবাগান-গোকুলাম ম্যাচে ট্রফি হাজির থাকে আর সেক্ষেত্রে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয় তা হলে ইস্টবেঙ্গল আর মিনার্ভা একযোগে দাবি জানাতে পারেন ফেডারেশন কী করে আগাম বুঝল মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হতে পারে? একই সমস্যা হতে পারে মিনার্ভা কিংবা ইস্টবেঙ্গল ম্যাচেও ট্রফি নিয়ে গেলে। রেপ্লিকা নিয়ে যাবে সেই পরিস্থিতিও নেই। কারণ আই লিগের ট্রফির তুলনায় রেপ্লিকাগুলো করা হয়েছে অনেক ছোট। তাই যেখানে আই লিগের ট্রফি যাবে অন্য ক্লাবগুলো গোলমাল শুরু করে দিতে পারে। তাই ঠিক হয়েছে, যে চ্যাম্পিয়ন হবে পরে সেই ক্লাবে গিয়ে আই লিগ ট্রফি দিয়ে আসা হবে। সমস্যা শুধু ট্রফিতে নয়। কর্তাদের উপস্থিতিতেও। ফেডারেশন সচিব কুশল দাস এবং আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর কোন মাঠে থাকবেন তাও ঠিক করতে পারছেন না দু’জনে। এদিকে, ক্রীড়াসূচি নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার।
নেরোকা কোচ গিফট রয় খান বলছিলেন, “এই প্রথম আমরা আই লিগ খেলার সুযোগ পেয়েছি। আর প্রথমবারেই চ্যাম্পিয়নশিপের হাতছানি। আমাদের উপর কোনও প্রত্যাশার চাপ নেই। খোলামনে বৃহস্পতিবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে নামব।” যা হওয়ার হবে। এই আপ্তবাক্যেই থেমে থাকতে চাইছেন না মিনার্ভা কোচ খোগেন সিং। রঞ্জিত বাজাজের হাতের পুতুল হলে কী হবে। চণ্ডীগড় থেকে তিনিও হুঙ্কার ছাড়লেন, “এতদূর যখন চলে এসেছি আর পিছনে তাকাতে চাই না। ইতিহাস গড়তে চাইছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.