সোহম দে: ধরা যাক, আপনি এখনও খেলছেন। উলটোদিকে সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)। সম্পর্কে যতই আপনার প্রিয় জামাতা হন, আপাতত ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ। সবে পদ্মাপার ছারখার করে মাঠে নেমেছেন, জোড়া গোল করে। তা, সুব্রত ভট্টাচার্য (Subrata Bhattacharya) কী করতেন? ফোনের ও প্রান্ত থেকে গলাটা শুনে মনে হল না জামাইষষ্ঠীর সপ্তাহখানেক আগে এ হেন বেমক্কা প্রশ্ন সুব্রত প্রত্যাশা করেছিলেন! প্রথমে চিলতে হাসি, তার পর সস্নেহ উত্তর, “জামাইষষ্ঠীর কথা তুললেনই যখন বলি, সুনীল আমাকে সেরা উপহারটা দিয়ে দিয়েছে! কী অসাধারণ পারফরম্যান্স!”
ময়দানি পাঠককে নতুন করে বলার দরকার নেই। তবে ফুটবল খেলাটার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা জনতার স্বার্থে বলে রাখা ভাল যে, মোহনবাগানের দিকপাল ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যর জামাতার নাম সুনীল ছেত্রী। সুব্রত—কন্যা সোনম স্ত্রী সুনীলের। কিন্তু সে সব ঠিক আছে। সুব্রত, আসল উত্তরটা দিন! আজ খেললে কী ভাবে আটকাতেন সুনীলকে? আপনি কড়া ডিফেন্ডার হলে সুনীলও তো দুঁদে স্ট্রাইকার! “কী আর করতাম? সুনীলের বিরুদ্ধে নামলে ডিফেন্ডার হিসেবে ওর রানটা ফলো করতাম। দ্রুত ফাইনাল ট্যাকলে যেতাম না। পেনাল্টি বক্স থেকে ওকে যতটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করতাম। আর একটা জিনিস করতাম। সুনীলকে বলের উপর সময় দিতাম না। ওর টার্নটা মারাত্মক,” টানা বলে যান অতীতে ডিফেন্সে দাঁড়িয়ে সাবলীল ভাবে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ইন্দার সিং থেকে শুরু করে মজিদ—জামশিদ—চিমা—কৃশানুকে সামলানো সুব্রত।
এরপরই সুনীলের শ্বশুর মহাশয়ের দ্রুত সংযোজন, “আসলে বহু বার দেখা গিয়েছে সুন্দর টার্নিংয়ে ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে দিয়েছে সুনীল। তাই সেই টার্নটা নিতে দিতাম না।” কিন্তু ডিফেন্সে পাশে কাউকে চাইতেন না? সুব্রত উত্তর দেন, “চাইতাম। প্রদীপ চৌধুরীকে চাইতাম। ওর সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেক ফরোয়ার্ডকে আটকেছি। প্রদীপকে বলতাম তুই মার্ক কর সুনীলকে। বাকিটা আমি দেখে নেব। মাঝমাঠে গৌতম সরকার থাকলেও ভাল হত। তবে বললাম না রোজ রোজ সুনীলকে থামানো মুশকিল।
এমনিতে সুনীলকে নিয়ে সুব্রতর শ্রদ্ধা—সম্মান পর্বতসম। ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাদ রেখেই সেটা। অক্লেশে সুব্রত বলে দেবেন, সুনীলের সর্বকালের সেরা ভারতীয় দলে থাকা উচিত। “চুনী—পিকের সঙ্গেই থাকবে ও টিমে। মনে রাখবেন, আন্তর্জাতিক ফুটবলে অ্যাক্টিভ ফুটবলারদের মধ্যে গোলের বিচারে সুনীল কিন্তু দু’নম্বরে।” বুঝিয়ে দেবেন, কেন বাইচুং ভুটিয়ার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন সুনীল। বলে দেবেন, “আসলে আউটসাইড দিয়ে একটা যে ড্রিবল করে সুনীল, তাকিয়ে দেখার মতো। তাই সুনীল এক, বাইচুং দুই।” বলবেন, কী ভাবে তিনি মোহনবাগান কোচ থাকাকালীন সুনীলকে প্রথম দর্শনে দেখেই বুঝেছিলেন, এ ছেলে অনেক দূর যাবে। বর্তমান ভারত অধিনায়কের জেদ দেখে, সাধনা দেখে। কিছুতেই মানতে চাইবেন না, সুনীল কলকাতা ফুটবলে সে ভাবে সফল হননি। তুরীয় মেজাজে বলবেন, “কে বলল পারেনি কলকাতায়? মোহনবাগান—ইস্টবেঙ্গল দুই প্রধানের হয়েই গোল করেছে। ভাল খেলেছে। মনে রাখবেন, ও খুব অল্প বয়সে মোহনবাগানে এসেছিল।” শুধু মনে হল, একটা জিনিস আজও করবেন না সুব্রত। মাঠে দেখা হলে স্ট্রাইকার সুনীলকে ছাড়বেন না। তা সে সুনীল ছেত্রী যতই তাঁর জামাতার নাম হোক! কী প্লেয়ার হিসেবে, কী কোচ হিসেবে! নইলে আর বলবেন কেন, “আমি বিপক্ষ কোচ হলে একজন মার্কার রেখে দিতাম সুনীলের জন্য।” অবশ্য ঠিকই আছে। সুনীল ‘বুনো’ স্ট্রাইকার হলে সুব্রতও তো ‘বাঘা’ ডিফেন্ডার বটে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.