সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রবি-জন্মদিনে কলকাতা ফুটবলের এক বিস্মৃতপ্রায় অধ্যায় প্রকাশ্যে এল। যে পর্বে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার সূর্য চক্রবর্তীর (Surya Chakraborty) সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) সম্পর্ক এবং কিংবদন্তি ফুটবলারের প্রতিভার স্ফুরণে স্বয়ং বিশ্বকবির অনুপ্রেরণার কাহিনি লেখা রয়েছে। সূর্য চক্রবর্তী রবিঠাকুরের স্নেহস্পর্শে পেয়েছিলেন। রবিঠাকুর তাঁকে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
বুধবার রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন সোশাল মিডিয়ায় ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) তরফে প্রকাশিত পোস্টে এই কাহিনির উল্লেখ রয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ”ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার সূর্য চক্রবর্তীর উত্থানের পিছনে এক সময়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন রবিঠাকুর। তাঁকে শুধু জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে থেকে পড়াশোনার জন্য ডেকেই নেননি, দুখীরাম মজুমদারের ফুটবল ক্লাবে তালিম নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে ১৯২৫ সালে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেন সূর্য চক্রবর্তী।” এবং সেটাও রবীন্দ্রনাথের পরামর্শেই। পোস্টের ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, সূর্য চক্রবর্তীকে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ”তুমি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলবে।”
এই পোস্ট ঘিরে সোশাল মিডিয়া সরগরম। রবীন্দ্রনাথের ফুটবলপ্রেমের কথা জেনে আজকের প্রজন্মও বিস্মিত। রবীন্দ্রনাথের বহুমুখী প্রতিভার কথা সবারই কম বেশি জানা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কিংবদন্তি ফুটবলারের প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর পিছনে যে বিশ্বকবির সদর্থক ভূমিকা রয়েছে, এই অধ্যায় আমজনতার কাছে আড়ালেই ছিল। সেদিনের সেই অনাবিষ্কৃত অধ্যায়ে আলো পড়ল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সৌজন্যে।
লাল-হলুদের মিডিয়া ম্যানেজার পারিজাত মৈত্র এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য লিখেছেন সোশাল মিডিয়ায়। ‘রবীন্দ্রনাথ ও ফুটবল এবং রবীন্দ্রনাথ ও ইস্টবেঙ্গল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে রবিঠাকুরের সঙ্গে সূর্য চক্রবর্তীর যোগাযোগের উল্লেখ করেছেন। পারিজাত লিখছেন, ”সূর্য চক্রবর্তীর বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরের কাইচল গ্রামে। পিতা ললিত মোহন চক্রবর্তী ছিলেন কুমিল্লার বিখ্যাত উকিল। কথিত আছে, একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ত্রিপুরা যাওয়ার পথে কুমিল্লাতে ললিত মোহন চক্রবর্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। ললিত মোহন চক্রবর্তীর দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন সূর্য চক্রবর্তী। কথা প্রসঙ্গে চক্রবর্তী মহাশয়ের পুত্রের ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ শুনে রবি ঠাকুর বলেন, সূর্য চক্রবর্তীকে যেন শান্তিনিকেতনে পাঠানো হয়। ওখানেই পড়াশুনার পাশাপাশি ফুটবলও খেলতে পারবেন সূর্য চক্রবর্তী।”
পারিজাতের লেখা থেকে জানা যায়, রবিঠাকুরের সঙ্গে কথামতো সূর্য চক্রবর্তী চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে সেই সময় রবি ঠাকুরের একটি নিজের ফুটবল টিম ছিল, যার নাম ছিল বিশ্বভারতী একাদশ। শান্তিনিকেতনে পড়াশুনার পাশাপাশি সূর্য চক্রবর্তী বিশ্বভারতী একাদশের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। ফুটবল খেলার পারদর্শিতার জন্য অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি রবি ঠাকুরের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। গরমের ছুটির সময় যখন শান্তিনিকেতনে পঠন পাঠন বন্ধ থাকতো রবীন্দ্রনাথ তাঁকে পাঠিয়ে দিতেন কলকাতার জোড়াসাঁকোতে তাঁর নিজের বাড়িতে।
সূর্য চক্রবর্তীর ক্রীড়া কুশলতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে কলকাতার বড় টিমে খেলতে পাঠানোর পরামর্শ দেন রবীন্দ্রনাথ। তার আগে দরকার ছিল আরও প্রশিক্ষণের। তাই তিনি সূর্য চক্রবর্তীকে বলেন, দুখীরাম মজুমদারের অধীনে কিছুদিন প্র্যাক্টিস করে কলকাতার বড় টিমে যোগদান করতে। তিনি এটাও বলে দেন সূর্য চক্রবর্তী ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেই যেন যোগ দেন। কলকাতায় এসে রবীন্দ্রনাথের কথা অনুযায়ী সূর্য চক্রবর্তী অনুশীলন শুরু করেন দুখীরাম মজুমদারের অধীনে কলকাতার এরিয়ান্স ক্লাবে। আর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল রবি ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। ১৯২৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে সূর্য চক্রবর্তী ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগ দেন।
একশো বছর আগের অকথিত কাহিনি এবং তার সঙ্গে জড়িত ঘটনাবলী ও তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সোশাল মিডিয়াতেই অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে সেই সময়ে ভিডিও, রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। এই সব তথ্যের সত্যাসত্য যাচাইয়ে সেই সময়ের নানা জনের লিখে রেখে যাওয়া নথির উপরেই আমাদের ভরসা করতে হয়। পারিজাতের দাবি, সূর্য চক্রবর্তীর ছেলের সঙ্গে কথা বলে তিনি এই সব মহামূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। তার ভিত্তিতেই পারিজাতের এই সোশাল মিডিয়া পোস্ট।
যিনি তাঁর অসংখ্য গান-কবিতা, সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে কালজয়ী হয়েছেন, সেই তিনিই যে সমকালীন ফুটবল নিয়েও ব্যাপক উৎসাহী ছিলেন এবং ফুটবলপ্রতিভাকে সঠিক দিশা দেখাতেন, তা নতুন করে প্রকাশ্যে এল। এই তথ্য জেনে রবিঠাকুর সম্পর্কে বাঙালির মুগ্ধতা যে আরও কয়েক গুণ গভীর হবে, তা বলাই বাহুল্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.