দুলাল দে: ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ বছরের জন্য অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের(AIFF) সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে এফএসডিএলের। স্বাভাবিকভাবেই ফেডারেশনে এই মুহূর্তে আলোচনার বিষয়, কবে কীভাবে দুই পক্ষ এফএসডিএল এবং ফেডরেশন নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে চুক্তি নবীকরণ করবে? তবে বিষয়টা যে ফেডারেশনের জন্য খুব সুখকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে এরকমটা নয়। শেষ ১৫ বছর ধরে চুক্তির শর্ত হিসেবে ফেডারেশনকে প্রতিবছর ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে এফএসডিএল। তার জন্য জাতীয় দল, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ, আই লিগ, সুপার কাপ-সহ ফেডারেশনের যাবতীয় প্রতিযোগিতার মার্কেটিং স্বত্ত্ব এফএসডিএলের অধীনে। যার অর্থ, এফএসডিএলকে অতিক্রম করে ভারতীয় ফুটবলে ছোট-বড় কোনও প্রতিযোগিতা করারই অধিকার নেই ফেডারেশন কর্তাদের। কিন্তু ১৫ বছর শেষে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে ভারতীয় ফুটবল থেকে এফএসডিএল যে মারাত্মক কিছু আর্থিক লাভ করেছে এরকম নয়। তবুও ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি নবীকরণ নিয়ে আগ্রহী তারা। কিন্তু যা শোনা যাচ্ছে, তাতে নতুন চুক্তিতে বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা আর সম্ভবত দিতে চাইবে না এফএসডিএল(FSDL)। তার পরিবর্তে অবশ্য আই লিগ-সহ ভারতীয় ফুটবলের বেশ কিছু প্রতিযোগিতার স্বত্ত্ব ছেড়েও দিতে পারে তারা। এই নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। যে কারণে, ফেডারেশন কর্তারাও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য স্পনসরশিপ খুঁজতে অনেকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন।
এফএসডিএলের সঙ্গে ফেডারেশনের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চুক্তি শেষে নতুন চুক্তি নবীকরণের জন্য সবার আগে এফএসডিএলেকই প্রস্তাব দিতে হবে। কোনও কারণে এফএসডিএল নতুন করে চুক্তি করতে রাজি না হলে তখন নতুন কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে ফেডারেশন। তবে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে চুক্তির জন্য আলোচনায় বসেন ফেডারেশন কর্তারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘শ্রাচি স্পোর্টস’ ছাড়া কোনও সংস্থা থেকেই ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু যতক্ষণ না সরকারি ভাবে এফএসডিএল তাদের থেকে সরকারি ভাবে কিছু জানাচ্ছে, ততক্ষণ অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গেও চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করতে পারছে না এআইএফএফ। আপাতত যা জানা যাচ্ছে, তাতে ৫০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে বার্ষিক ৪০ কোটি বা তারও কম টাকায় ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি করার ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারে এফএসডিএল। তার জন্য হয়তো শুধু আইএসএল এবং জাতীয় দলের মার্কেটিং স্বত্ত্ব নিজেদের অধীনে রাখবে এফএসডিএল। ছেড়ে দিতে পারে আই লিগ প্রথম ডিভিশন এবং আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনের স্বত্ত্বও। আবার এমনও হতে পারে শুধু আইএসএল এবং আই লিগের প্রথম ডিভিশনের মার্কেটিং স্বত্ত্ব রেখে জাতীয় দল সহ বাকি সব কিছু ছেড়ে দিতে পারে এফএসডিএল। কোনও কিছুই চূড়ান্ত না হওয়ায় ফেডারেশন কর্তারাও কোনও সংস্থার সঙ্গে কিছুই চূড়ান্ত করতে পারছে না। এরমধ্যেই ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে বেশ কয়েকবার শ্রাচির কর্ণধার রাহুল টোডির সঙ্গে মিটিং করেছেন, ফেডারেশনের সঙ্গে জড়িত হওয়ার জন্য।
এফএসডিএলের থেকে যেহেতু এখনও সরকারিভাবে কিছু জানা যায়নি, তাই ফেডারেশন এবং শ্রাচিও সরকারিভাবে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, আইলিগের তৃতীয় ডিভিশনের দল হায়দরাবাদের আব্বাস ইউনিয়ন-কে কিনে নিতে চলেছে শ্রাচি স্পোর্টস। আব্বাস ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য কিছুদিন আগে প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার সাব্বির আলি কলকাতায় এসে শ্রাচি স্পোর্টসের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সাব্বির আলির দলকে শ্রাচি স্পোর্টস কিনে নিচ্ছে এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
তবে একদিকে যেরকম আই লিগের তৃতীয় ডিভিশন দল কেনা হচ্ছে, আরেকদিকে আইএফএ-র সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি সম্ভবত ভেঙে ফেলার দিকে এগিয়ে গিয়েছে শ্রাচি। অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে আইএফএ-র সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছিল শ্রাচি স্পোর্টস। কিন্তু বছর শেষে শ্রাচির পক্ষে দাবি হল, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আইএফএ তাদের শর্ত মানেনি। এমনকী দু’পক্ষই আইএফএ শিল্ড বড় করে করার জন্য আগ্রহী হলেও, মোহনবাগান ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা শিল্ড খেলবে না। ফলে শ্রাচিও আইএফএ নিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে। তারমধ্যে ইস্টবেঙ্গলকে পয়েন্ট দেওয়া নিয়ে মহামেডান এবং ডায়মন্ডহারবারকে কেন্দ্র করে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটাও ভালভাবে দেখছে না শ্রাচি। লিগ ও শিল্ডের পরিবর্তে নতুন প্রতিযোগিতা চালু করতে চায় শ্রাচি। এমনকী, কলকাতা লিগের জন্য এখন পর্যন্ত ৭৫ লক্ষ টাকাই দিয়েছে তারা। বাকি টাকা আদৌ দেবে কি না ঠিক নেই। বলা যায় আইএফএ নিয়ে মোহভঙ্গ ঘটেছে। আইএফএ কর্তারা যদিও চেষ্টা করে যাচ্ছেন, শ্রাচির মানভঞ্জনের। তবে জল এতদূর গড়িয়ে গিয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত শ্রাচি আইএফএর সঙ্গে থাকবে বলে মনে হচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.