দুলাল দে: স্ত্রী মারা গিয়েছেন প্রায় দু’ বছর হয়ে গেল। তারপর থেকে কলকাতার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন সৈয়দ নইমুদ্দিন। কিন্তু ক্রমে গ্রাস করছিল একাকীত্ব। তার উপর আর্থিক দৈন্যতা। ইদানীং যাঁর সঙ্গেই দেখা হত, আর্থিক সমস্যার কথা বলতেন অর্জুন এবং দ্রোণাচার্য সম্মানে ভূষিত এই প্রাক্তন ফুটবলার। শুধু অর্জুন কিংবা দ্রোণাচার্যর মতো রাষ্ট্রীয় সম্মানেই তিনি ভূষিত হননি। পেয়েছেন মোহনবাগান (Mohun Bagan) রত্ন, ইস্টবেঙ্গলের লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, মহামেডানের শান-এ-মহামেডান। পেয়েছেন রাজ্য সরকারের সম্মানও। এরপরেও বাংলার মায়া কাটিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করে পাকাপাকিভাবে হায়দরাবাদ চলে গেলেন এশিয়াডের ব্রোঞ্জ পদকজয়ী ফুটবলার।
স্ত্রী মারা যাওয়া পর বেশ কয়েকমাস হায়দরাবাদে মেয়ের কাছে গিয়ে ছিলেন নইমুদ্দিন। তখন অবশ্য দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাসের ধারে ফ্ল্যাটটি তালা বন্ধ অবস্থাতেই পড়েছিল। মাঝে মধ্যে কলকাতাতেও আসতেন। কিন্তু এখানে একা থেকে করবেনটা কী? এদিন হায়দরাবাদ থেকে ফোনে বলছিলেন, “অনেকের কাছে গিয়েছি। কিন্তু আর্থিকভাবে সত্যিই খুব খারাপ জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। কোনও কাজ নেই। চলবে কী করে? অথচ ফুটবলে এশিয়াডে শেষ ব্রোঞ্জ আমার ক্যাপ্টেন্সিতেই ভারত পেয়েছিল। তারপর থেকে এশিয়াডে আর কিন্তু কোনও পদক নেই। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডান ক্লাবের (Mohamedan) হয়েও ফুটবলার এবং কোচ দুটো ভূমিকায় আমার অবদান নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বাংলার মানুষের থেকে সম্মান কিছু কম পাইনি। কিন্তু এগুলো দিয়ে তো আর্থিক সমস্যা মিটবে না। ফলে ফ্ল্যাট বিক্রি করে বাংলা ছেড়ে চলে আসা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।”
নইমুদ্দিন (Sayed Naimuddin) যখন কলকাতার ফ্ল্যাট বিক্রি করে বাংলা ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে হায়দরাবাদ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বাংলার আরেক প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার রহিম নবি। এদিন হায়দরাবাদ থেকে সেই কথাও বলছিলেন নইম। “অনেককেই বলেছিলাম। কিন্তু একা নবিই এসেছিল দেখা করতে। হয়তো সবাই খুব ব্যস্ত ছিল। তাই আসার সময় পায়নি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এত দূর থেকে কলকাতাকে খুব মিস করছি। আমার যাবতীয় আবেগ-অনুভূতি সব কিছুই তো জড়িয়ে রয়েছে কলকাতার সঙ্গে। কী করে ভুলব সেই দিনগুলি? যখন ট্রফি জিতেছি, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহামেডানের সমর্থকরা কাঁধে নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। সেই কলকাতা ছেড়ে আসতে সত্যিই খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমি নিরুপায়। আগে বাঁচতে তো হবে।”
হায়দরাবাদে (Hydrabad) অনেকদিন ধরেই রয়েছে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়ি। এখন তাঁর মেয়েও থাকেন। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর কলকাতার ফ্ল্যাটে এতটাই একাকী হয়ে পড়েন, ছেলে-মেয়েরাও বলছিলেন, হায়দরাবাদে গিয়ে থাকতে। এখানে তাঁকে দেখবে কে? তার উপর আর্থিক দৈন্যতা। এদিন হায়দরাবাদ থেকে ফোনে নইমুদ্দিন বলছিলেন, “অর্জুন, দ্রোণাচার্য সহ পুরস্কারগুলো নিয়ে এসেছি। এই মুহূর্তে এগুলিই তো আমার সম্বল। তবে ভীষণ ভাবে মনে পড়ে বাংলার তিন প্রধানের সেই দিনগুলি।”
তাহলে কি আর কলকাতা ফিরবেন না? “মাঝে-মধ্যে হয়তো যাব। কিন্তু ফ্ল্যাট বিক্রি করে চলে আসায় পাকাপাকি ভাবে আর থাকা হবে না। তবে এখনও আশায় আছি, কোনও সহৃদয় ব্যক্তি যদি একটা মাসিক হাতখরচের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে হয়তো শেষ জীবনটা কাটানোর জন্য ফের কলকাতায় চলে যাব। দেশের পাশাপাশি, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডানে খেলেছি। কোচিং করিয়েছি। কেউ কি এগিয়ে আসবেন না?”, প্রশ্ন নইমের। আপাতত এরকম কোনও সহৃদয় ব্যক্তির ফোনের অপেক্ষাতেই হায়দরাবাদে দিন গুজরান করছেন সৈয়দ নইমুদ্দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.