দুলাল দে: অবশেষে অপেক্ষার অবসান। শুক্রবার মোহনবাগান-এটিকে (ATK-Mohun Bagan) কর্তাদের প্রথম ভারচুয়াল বোর্ড মিটিং। যেখানে জার্সির ডিজাইন ঠিক না হলেও ক্লাবের সরকারি রং থেকে লোগো সবই ঠিক হতে চলেছে। স্পনসর আসায় ক্লাবের নাম আগেও বদল হয়েছে। কিন্তু ক্লাবের রং, সবুজ-মেরুন কিংবা লোগো, পালতোলা নৌকো কোনওটাই আগে পরিবর্তন হয়নি মোহনবাগানে। ফলে শুক্রবারের প্রথম বোর্ড মিটিংয়ের দিকে তাকিয়ে মোহনবাগানের দুই শীর্ষ কর্তা সৃঞ্জয় বোস (Srinjoy Bose) এবং দেবাশিস দত্ত (Debashis Dutta)এটিকে কর্তাদের টানা বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, ঐতিহ্যশালী সবুজ-মেরুন রং এবং পালতোলা নৌকো যাতে অক্ষত থাকে। যাতে আইএসএলে রয় কৃষ্ণরা সবুজ-মেরুন জার্সি পড়ে মাঠে নামলেই মোহনবাগান সমর্থকরা এটিকের সমর্থকদের মতোই অনুভব করতে পারেন, নিজেদের দল মাঠে নেমেছে। যাতে সবুজ-মেরুন রং আর পালতোলা নৌকো দেখলেই সমর্থকরা বুঝতে পারেন, তাদের ভালবাসার মোহনবাগান দলই খেলছে।
তবে আগের পরিস্থিতির থেকে এবারের পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণই আলাদা। ছ’বছরের আইএসএলে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়, সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের নাম এটিকে। প্রতি বছর ন্যূনতম ৪০ কোটি টাকা খরচ করে এটিকে ব্র্যান্ডটিকে আইএসএলের বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা (Sanjeev Goenka)। তাই বোর্ড মিটিংয়ে ক্লাবের নাম বদলে নিজের তৈরি করা ব্র্যান্ডের তিনি ক্ষতি করে দেবেন, এরকমটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও সৃঞ্জয় বোস এবং দেবাশিস দত্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্লাবের রং এবং লোগোর মতো মোহনবাগানের নামেও যদি নতুন দলের নাম করা যায়। কিন্তু ঠিক এখানেই কিছু প্রশ্ন তুলছেন এটিকে কর্তারা।
এর আগে মাত্র ৪৯ শতাংশ শেয়ার এবং প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা দিয়ে মোহনবাগান ক্লাবের নাম ‘ম্যাকডাওয়েল মোহনবাগান’ করে দিয়েছিল ইউবি গ্রুপ। যা হয়েছিল কিংফিশার ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রেও। তাহলে এখন ৮০ শতাংশ শেয়ারের পাশাপাশি প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচের পর ক্লাবের নাম কেন ‘এটিকে মোহনবাগান’ করা যাবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন এটিকে কর্তারা। মাত্র ৪৯ শতাংশ শেয়ার থেকে যদি ম্যাকডাওয়েল মোহনবাগানের সময় সমর্থকরা কোনও আপত্তি, কোনও প্রতিবাদ না করেন, তাহলে এই সময় ‘এটিকে মোহনবাগান’-এর ক্ষেত্রে কেন প্রতিবাদ বা আপত্তি করা হবে? মোহনবাগান কর্তারা বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটিকে একটি ক্লাবের নাম। কিন্তু এটিকে কর্তারা বলেন, ৬ বছরে এটিকে একটি লাভজনক প্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হয়েছে। যদি প্রোডাক্ট হিসেবে ম্যাকডাওয়েলকে মোহনবাগানের আগে বসানো যায়, তাহলে ৮০ শতাংশ শেয়ার থাকায় ‘এটিকে’ প্রোডাক্টটিকে কেন মোহনবাগানের আগে বসানো যাবে না।
তবুও শুক্রবারের প্রথম বোর্ড মিটিং যেখানে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও থাকবেন, সেখানে ফের একবার সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন দুই কর্তা। তবে ‘ম্যাকডাওয়েল মোহনবাগানের’ যুক্তি দিয়ে এটিকে কর্তারা তা আদৌ মানবেন কি না সন্দেহ রয়েছে। তবে মোহনবাগান কর্তারা একটি ব্যাপারে গত একমাস ধরে টানা চেষ্টা করে এটিকে কর্তাদের বোঝানোর রাস্তায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন যে, কোনওভাবেই ক্লাবের সবুজ-মেরুন রং আর লোগো পরিবর্তন করা যাবে না। শুক্রবারের আলোচনায় এটিকের জার্সির লাল রঙের বিলুপ্তি ঘটানো যায় কী না, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জার্সির রং যেহেতু লাল-হলুদ, তাই লাল রংটা অবলুপ্ত করার পক্ষেই অনেকের মত।
ক্লাবের রং সবুজ-মেরুন হলেও শেষ আই লিগে ঘরের মাঠে বেশিরভাগ সময় সাদা জার্সি পড়েই ম্যাচ খেলেছে মোহনবাগান। প্র্যাকটিসে দেখা যেত নীল জার্সি। তাই আইএসএলের নতুন ক্লাবের রঙ সবুজ-মেরুন থাকলেও বিভিন্ন সময় ডিজাইনের জন্য জার্সিতে সবুজ-মেরুনের পাশাপাশি সাদা সহ অন্য রঙও হতে পারে। যেখানে সবুজ-মেরুন রঙের চিহ্নও থাকবে। সেরকম মোহনবাগানের লোগো, পাল তোলা নৌকো অক্ষত রাখার চেষ্টাতেও অনেকটাই সফল হতে চলেছেন সৃঞ্জয় বোস এবং দেবাশিস দত্ত। আর যাই হোক পাল তোলা নৌকোর মধ্যে এটিকের পাখা ওয়ালা সিংহ কিছুতেই ঢুকবে না। জার্সির রং ঠিক হলেও, জার্সির ডিজাইন ঠিক হতে এখনও দেরি আছে। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ক্লাবের রঙ সবুজ-মেরুন এবং লোগো অক্ষত রাখার লড়াইটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, গত একমাস ধরে লড়াইটা ততটা সহজ ছিল না। এমনকী, শুক্রবারের মিটিংয়েও পুরো ব্যাপারটা ফের যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে দু’জনকে। শুধু ম্যাকডাওয়েল মোহনবাগান নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে কীভাবে আটকানো যাবে জানা নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.