কৃশানু মজুমদার: ব্রাজিল কোচ তিতের (Tite) আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন ফ্রেড। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ব্রাজিল (Brazil) কোচ বলেছিলেন, “সামটাইমস উই সি ইট ইন দ্য মুভিজ হোয়্যার সামওয়ান হু ইজ নট দ্য স্টার স্টিলস দ্য সিন।” তিতে যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা হল, পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেও নায়ককে ছাপিয়ে যাওয়া সম্ভব। ফ্রেড হলেন সেইরকমই একজন ফুটবলার।
নেইমার, রিশার্লিশন, ভিনিসিয়াস জুনিয়রদের মতো প্রচারের সার্চলাইট তাঁর উপরে সবসময়ে পড়ে না। তাঁদের মতো বন্দিতও নন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার। কিন্তু সবুজ গালচেতে তাঁর ছায়াই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে। অনেকের অভাব তিনি ঢেকে দিতে পারেন একাই। সবার অলক্ষ্যে কাজ করে নির্ভরতা জোগাতে পারেন দলকে।সুইসদের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে তাই ব্রাজিল কোচ ভাল সার্টিফিকেটই দিয়েছিলেন ফ্রেডকে।
আজ ভারতীয় সময় মধ্যরাতে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে নামছে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)। সেই ম্যাচের বল গড়ানোর আগে ফ্রেডের মামা রোজেরিও বলছেন, ”ফ্রেডের মা আমার বোন। কিন্তু ফ্রেড তো পরিবারের খোঁজখবরই নেয় না। ওর উত্থানের পিছনে যে পরিবারের বড় অবদান রয়েছে, তা স্বীকারই করতে চায় না।” রোজেরিওর কথা শুনে বিস্ময় জাগে। সাফল্য এসে ধরা দিলে কেউ কি ভুলে যেতে পারে নিজের অতীতকে!
মোহনবাগান অ্যাকাডেমির প্রাক্তন কোচ লুইস গ্রেকোর ছাত্র ফ্রেডের মামা। ছাত্র রোজেরিও সম্পর্কে গ্রেকো বলছেন, ”আমেরিকা এফসি ক্লাবের যুব দলে রোজেরিও খেলত। সেই সময়ে আমি ছিলাম ওর কোচ। সে অবশ্য ৩৮-৪০ বছর আগের কথা।”
তিতের দলের দানিলো, রডরিগো, ফ্রেড, ওয়েভারটনদের কোনও না কোনও সময়ে আবিষ্কার করেছিলেন মোহনবাগান অ্যাকাডেমির প্রাক্তন কোচ। ফ্রেডকে ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার প্রধান কারিগরও গুরু গ্রেকো। অভিজ্ঞ কোচ বলছেন, ”আমি ফ্রেডকে স্কাউট করে ইউক্রেনের ক্লাব শাখতার ডনেস্কে নিয়ে যাই।”
তার পর থেকে ফ্রেড উড়ছেন।ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে খেলেছেন। এখন তিতের সংসারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে নামানো হতে পারে ফ্রেডকে, এমনই ধারণা দেশবাসীর।
রোজেরিও অবশ্য টাইমমেশিনের সাহায্য না নিয়ে পিছনের দিকে হাঁটছেন। ফিরে যাচ্ছেন ফ্রেডের শুরুর দিনগুলোয়। স্মৃতিরোমন্থন করে তিনি বলছেন, ”সাইকেলের পিছনে বসিয়ে ফ্রেডকে খেলতে নিয়ে যেতাম। আমাদের পরিবারের প্রথম পেশাদার ফুটবলার আমি। ফ্রেড আমাদের পরিবারের দ্বিতীয় পেশাদার ফুটবলার। ঈশ্বরের অনেক আশীর্বাদে ফ্রেড আজ ভাল জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু দুঃখের কথা কী জানেন, ফ্রেড ওর পরিবারের অবদানের কথা ভুলে গিয়েছে।”
ফ্রেডের মামা নাগাড়ে বলে চলেন, ”ওর এখন নতুন পরিবার হয়েছে।স্ত্রীর কথা শুনে চলে। অনেকেই হয়তো সেটা জানে না।কিন্তু শিকড়কে কি কেউ ভুলে যেতে পারে!” রোজেরিওর কথায়, ফুটবল খেলে ফ্রেড এখন টাকাপয়সা করেছেন। কিন্তু পরিবার যে একটা প্রতিষ্ঠান, সেই সারসত্যটাই বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছেন ব্রাজিলের জাতীয় দলের ফুটবলার।
রোজেরিওর হোয়াটসঅ্যাপের ডিসপ্লে পিকচারে একই ফ্রেমে তিনজনের ছবি। ফ্রেড, একজন বৃদ্ধা এবং রোজেরিও। ফ্রেডের মামা বলছেন, ”ওই বৃদ্ধা আমার মা। ফ্রেডের দিদিমা। কাঠের উনুনে আমার মায়ের হাতে তৈরি ভাত, বিনস, বিফ স্টেক এবং ফ্রাই খুব পছন্দ করত ফ্রেড।” ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে ব্রাজিলের দক্ষিণ প্রান্তে রিও গ্রান্দে দে সলে চলে যান ফ্রেড। শুরু হয়েছিল ফুটবলার হওয়ার সাধনা। রোজেরিও বলছিলেন, ”ফ্রেড যখন খুব ছোট তখনই বুঝেছিলাম ওর মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।”
কাতারে (Qatar World Cup 2022) দুদ্দাড়িয়ে অভিযান শুরু করেছে ব্রাজিল। সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ডকে হেলায় হারিয়েছে তিতের দল। গ্রুপের শেষ ম্যাচে অবশ্য ক্যামেরুনের কাছে হার মানতে হয়েছে ব্রাজিলকে। তাতে কি দেশের মানুষের বিশ্বাসে চিড় ধরেছে? ফ্রেডের মামা বলছেন, ”দল হিসেবে ব্রাজিল যে খুব ভাল সেটা কিন্তু বলা যাবে না। এই দলে একাধিক তারকা নেই। একজনের উপরে নির্ভরশীল একটা দলকে কখনওই দুর্দান্ত টিম বলা যায় না।” নাম না করে রোজেরিও যে নেইমারের কথা বলছেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
কিন্তু তিতে যে বলছেন তাঁর ভাগ্নে অনেকের অভাব ঢেকে দিতে পারেন। মুখ্যচরিত্র না হয়েও দক্ষতা দিয়ে কখনও কখনও ছাপিয়ে যেতে পারেন নায়ককেও! রোজেরিও বলছেন, ”এটা মনে রাখতে হবে ফ্রেড কিন্তু স্ট্রাইকার নয়। ও মিডফিল্ডার। সৃজনশীলতা ওর কম। রক্ষণাত্মক সত্তাই বেশি।”
অতীত ভুলে যাওয়া এক ফুটবলারের ছবি তুলে ধরছেন রোজেরিও। তিতের এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? হেক্সার লক্ষ্যে যে অবিচল ব্রাজিল কোচ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.