দুলাল দে, দোহা: মাঠের ভিতর ঠিক আছে। কিন্তু মাঠের বাইরে কিলিয়ান এমবাপের এভাবে স্কিল দেখানো সম্ভব? এদিনের পর তো এমবাপেকেই বিশ্বকাপের সেই ‘অক্টোপাস পল’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন সবাই। এমনকী এই নিয়ে সেমিফাইনালের আগে ফরাসি ফুটবলারদের মধ্যেও যথেষ্ট সাড়া পড়ে গিয়েছে। অনেকে তো ‘অ্যাস্ট্রোলজার এমবাপে’ বলতেও শুরু করে দিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুট পাওয়ার লক্ষ্যে দৌড়চ্ছেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে (Kylian Mbappe)। স্বাভাবিকভাবেই সেমিফাইনালে মরক্কো ম্যাচের প্রসঙ্গ এলেই সবার আগে চলে আসছে তাঁর নাম। কিন্তু ফ্রান্সের এই দলে এমবাপে ছাড়াও আরও দু’জন ফুটবলার রয়েছেন যাঁরা প্রথম ম্যাচ থেকে নিঃশব্দে দলকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। একজন ছত্রিশের জিরু। যাঁর গোল সংখ্যা ইতিমধ্যেই চার। আরেকজন মিডফিল্ডার গ্রিজম্যান। যাঁকে নিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনেও প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেঁশ, ‘‘আমার দলের আসল ফুটবলার,’’ বলে। বুধবার আল বায়াত স্টেডিয়ামে মরক্কোকে হারিয়ে পরপর দু’বার ফাইনালে ওঠার পথে এই ফরাসি ত্রয়ীই হচ্ছে আসল শক্তি। এই ত্রিমূর্তি দৌড়লে, ফ্রান্স দৌড়বে। আটকে গেলে, দলটাই থেমে যাবে। কিন্তু এমবাপে যে এভাবে ফুটবলের ‘আধুনিক নস্ট্রাদামুস’ হয়ে উঠবেন, কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন? প্রসঙ্গটা তাহলে খুলেই বলি।
এই বছরের মে মাসে দু’দিনের জন্য কাতারে এসেছিল পিএসজি (PSG)। দলের সঙ্গে এসেছিলেন এমবাপে। ছিলেন হাকিমিও। সেই সময়েই বিশ্বকাপ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘টিউনিশিয়াকে আমরা হারাবই। আর পরে খেলব মরক্কোর বিরুদ্ধে।’’ এরপরেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পিএসজি সতীর্থ হাকিমিকে দেখিয়ে এমবাপে মজা করে বলেন, ‘‘মরক্কো ম্যাচে ওকে আমি শেষ করে দেব।’’ দমে যাওয়ার পাত্র নন হাকিমিও। তিনিও তখন মজা করে বলছেন, ‘‘আমিও ছাড়ব না। দেখা যাবে।’’ সেই মে’মাসের ভিডিও ক্লিপিংস এদিন প্রকাশ করেছে ফরাসি টিভি চ্যানেল ‘বেইন’। আর তা নিয়েই ফ্রান্সের প্র্যাকটিসে হইহই কাণ্ড। সেই মে’মাসে এমবাপে বলে দিয়েছিলেন, মরক্কোর বিরুদ্ধে খেলবে ফ্রান্স! আর সত্যি সত্যিই তাই হতে চলেছে। টিউনিশিয়াকে হারাতে না পারলেও ফ্রান্স যে সেমিফাইনালে মরক্কোর মুখোমুখি হতে পারে, বিশ্বকাপের গ্রুপ স্টেজ শেষ হওয়ার পরেও কেউ ধারণা করতে পারেননি। মরক্কোর বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে এদিন আল সাদ স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করছিলেন এমবাপেরা। সেখানে ফরাসি সাংবাদিকদের মধ্যে তখন এমবাপের ইন্টারভিউর এই ক্লিপিংস নিয়ে জোর আলোচনা।
প্র্যাকটিস শুরু হল। দলের অন্যান্য ফুটবলারদের সঙ্গেই মাঠে এলেন এমবাপে। ওয়ার্মআপ শুরু হল। সংবাদমাধ্যমের জন্য দিদিয়ের দেশঁ বরাদ্দ রেখেছিলেন মিনিট ১৫। কিন্তু তার আগেই দেখা গেল, হঠাৎই প্র্যাকটিস ছেড়ে মাঠের বাইরে চলে গেলেন ফরাসি তারকা। সংবাদমাধ্যম মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এমবাপে ফিরে এলেও প্র্যাকটিসে আর দেখা গেল না উপামেকানো এবং র্যাবিয়টকে। উপামেকানোকে অবশ্য সোমবারের প্র্যাকটিসেও দেখা যায়নি। গলার ব্যাথার জন্য আগের দিনের মতো এদিনই প্র্যাকটিসে নামেননি তিনি। আর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার র্যাবিয়ট এদিন ছিলেন না ভাইরাল জ্বরের কারণে। এক চোট আঘাতে বিধ্বস্ত ফ্রান্স শিবিরে ফুটবলারের সংখ্যা ২৪। এর উপরে পরপর দু’দিন প্র্যাকটিসে উপস্থিত না থাকায় মনে হচ্ছে মরক্কোর বিরুদ্ধে ২২জন ফুটবলারকে নিয়েই দল সাজাতে হবে দিদিয়ের দেশঁকে। যা জানা গেল, পোল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের যে দলটা খেলেছিল, সেই দলটাই মরক্কোর বিরুদ্ধে খেলতে পারে। গোলে-লরিস। বকিরা হলেন, কুন্দে, ভারানে, উপামেকানো। একান্তই তিনি না পারলে কন্তে। থিও হার্নান্ডেজ, চুয়ামেনি, র্যাবিয়ট। জ্বর না কমলে তাঁর জায়গায় খেলবেন ফোফানা, গ্রিজম্যান, ডেম্বলে, এমবাপে এবং জিরু।
তবে এদিন প্র্যাকটিসে এমবাপের পাশাপাশি ফরাসি সাংবাদিকদের মধ্যে ভীষণভাবে উৎসাহ দেখলাম গ্রিজম্যানকে নিয়ে। মিডফিল্ডার হয়েও ফ্রান্সের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। এবং পরিসংখ্যান বলছে, ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা অ্যাসিস্ট হিসেবে এখন শুধুই তাঁর নাম। ইংল্যান্দের বিরুদ্ধে দুটো গোলেই তো অবদান গ্রিজম্যানের। এই বিশ্বকাপে এমবাপের পাঁচ গোল। জিরুর ৪ গোলের পরও দিদিয়ের দেশঁ বলছেন, ফ্রান্সের আসল লোকের নাম গ্রিজম্যান। ‘‘গ্রিজম্যান যেরকম পাস করে গোল করাতে ভালবাসে। সেরকম প্রতিপক্ষ যখন আক্রমণ করে, ডিফেন্সে নেমে এসে ট্যাকল করাতেও ওর সমান আনন্দ। আমার দলের ছোট্ট ইঞ্জিন।’’ শুনলাম ইংল্যান্ড যখন ওয়াকারকে দিয়ে পুরো এমবাপেকে আটকাচ্ছে, তখন নাকি বিরতির সময় ড্রেসিংরুমে গ্রিজম্যান ফুটবলারদের বলেন, ‘‘আমরা আজকে রাতেই ফ্রান্সে ফিরে যেতে চাই না। আর তোমরা যদি সবাই আরও কিছুদিন দোহাতেই থাকতে চাও, তাহলে আজ ইংল্যান্ডকে হারাতেই হবে।’’
আর এরপরেই গ্রিজম্যানের সেই বিখ্যাত ক্রস, আর জিরুর হেডে গোল। যে কারণে, জিরু বলছেন, ‘‘গ্রিজম্যান এখন আমাদের দলের নেতা। ও চালালে, আমরা চলি।’’ তবে মরক্কোকে হারাতে গেলে শুধু গ্রিজম্যান চললে হবে না। ফ্রান্সের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর মানে এমবাপে-জিরু-গ্রিজম্যান, তিনজনকেই চলতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.