দুলাল দে, দোহা: রবিবার মাঠে নেমে ফ্রান্স কীভাবে মেসি-সহ আর্জেন্টিনাকে সামলাবে, সেসব এখন হঠাৎই গৌণ। এই মুহূর্তে ফ্রান্স শিবিরে মুখ্য ব্যাপার হল, কীভাবে ‘ক্যামেল ভাইরাস’-এর মোকাবিলা করা হবে। যার জেরে মেসিদের বিরুদ্ধে ফাইনালে নামার আগে দলের পাঁচজন ফুটবলার প্র্যাকটিসেই আসতে পারলেন না। শুধু ফুটবলার কেন, দলের কোচ দিদিয়ের দেশঁও অজানা ক্যামেল ভাইরাসের আক্রমণে। কোচ-সহ পুরো শিবির জুড়ে ফুটবলারদের জ্বর, গলা ব্যথা। ফলে মেসিদের আটকানোর পরিকল্পনা করবে কী, ফরাসি শিবিরের ডাক্তাররা এখন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, পুরো দলটা যেন রবিবার লুসেইল স্টেডিয়ামে অন্তত ভালভাবে নামানো যায়। খেলা তো পরের বিষয়।
কাতার বিশ্বকাপে ভাইরাল ফিভারের সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। দর্শক, সাংবাদিক, ফুটবলার কেউ ছাড় পাননি এই ভাইরাল ফিভার থেকে। ব্রাজিল দোহাতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবার আগে এই জ্বরটা এসেছিল নেইমারের। তারপর ধীরে ধীরে অন্য ফুটবলারদের। কিন্তু একটাই আশার আলো, জ্বরটা বেশিদিন থাকছে না। দু’-তিন দিনেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই দু’তিন দিনটাই যদি ধরি, তাহলে ফাইনালের জন্য ফুটবলারদের ফিট করে তুলতে দিদিয়ের দেঁশর হাতে সেই সময়টাই বা কোথায়?
বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) শুরুর সময় পর্যন্ত একটা সময় চোট-আঘাতে বিপর্যস্ত ছিল ফ্রান্স শিবির। আর এখন অজানা জ্বরে। উপামেকোনা, রেবিয়ট তো ক্যামেল ভাইরাসের কারণে এই অজানা জ্বর নিয়ে খেলতেই পারলেন না সেমিফাইনালে মরক্কোর বিরুদ্ধে। শুক্রবার ফ্রান্সের প্র্যাকটিসে শুরুতে দেখা গেল আরও তিনজন ফুটবলার অনুপস্থিত। কোম্যান, ভারানে এবং কন্দে। এঁদের সঙ্গে প্র্যাকটিসে নামলেন না চুয়ামেনি এবং থিও হার্নান্দেজ। এই দুই ফুটবলারের প্র্যাকটিসে না নামার কারণ নিতম্ব আর হাঁটুতে চোট। তবে শুরুতে প্র্যাকটিসে দেখা না গেলেও পরের দিকে মাঠে নেমে পড়েন কন্দে। যা দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেখা যায় ফরাসি সংবাদ মাধ্যমের মুখে।
একের পর এক চোটের জন্য প্রথম দলের একাধিক ফুটবলারকে হারিয়েও শেষ পর্যন্ত দলটাকে সামলে তুলেছিলেন দেশঁ। কিন্তু শেষ পর্বে এসে জ্বরের কারণে এভাবে ফুটবলাররা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি কী করবেন? সেমিফাইনাল ম্যাচের ঠিক আগে ফরাসি শিবিরের (France Football team) জ্বরে আক্রান্ত প্রথম ফুটবলারের নাম উপামেকোনা। সোম-মঙ্গল পর পর দু’দিন প্র্যাকটিসই করতে পারলেন না তিনি। ফলে মরক্কোর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগই পেলেন না বায়ার্ন মিউনিখের মিডফিল্ডার। একই অবস্থা হয় জুভেন্টাসের মিডফিল্ডার রেবিয়টেরও। কিন্তু যেটা এতদিন জানা ছিল না, সেটাই এদিন প্রকাশিত হয়েছে ফরাসি শিবির থেকে। কোচ দেশঁ নাকি জ্বর থাকা অবস্থাতেই মরক্কোর বিরুদ্ধে ডাগআউটে ছিলেন। আর ম্যাচের পর এতটা অসুস্থ বোধ করেন যে, পরের দিন রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের নিয়ে প্র্যাকটিসেই উপস্থিত হতে পারেননি। তবে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে খেলার জন্য গতকাল প্র্যাকটিসে দেশঁকে দেখে মনে হয়নি, তাঁর কোনও সমস্যা রয়েছে। কিন্তু যে মুহূর্তে শুরুতেই প্র্যাকটিসে ভারানে আর কন্দেকে না দেখতে পেয়ে ফরাসি মিডিয়ার কপালে চিন্তার ছাপ দেখা গিয়েছিল, তা মেসিদের মোকাবিলা করার আগে সত্যিই খারাপ খবর। যদিও কিছুক্ষণ পরেই প্র্যাকটিসে চলে আসেন কন্দে। কিন্তু ভারানে আর আসেননি।
তাহলে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে এরকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দলটা দাঁড় করাবেন কী করে দেশঁ? কিন্তু এই জ্বরের সঙ্গে কি কোনও কোভিড সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে? দেশঁ অবশ্য বলছেন, ‘হালকা জ্বর নিয়ে এই শরীর খারাপের সঙ্গে কোভিডের কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে মাঠের এয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে হঠাৎ করে কাতারের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ঠান্ডা-গরম থেকেই অসুস্থতা। অত চিন্তার কিছু নেই।’
এদিন প্র্যাকটিস শুরুর আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন ডেম্বেলে। সাংবাদিক সম্মেলনে বসে তিনি যা বললেন, তাতে ফরাসি শিবিরের এই খারাপ খবরের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে পারেন ফ্রান্সের সমর্থকরা। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘অত চিন্তার কিছু নেই। আমরা এই ভাইরাস নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই। আক্রান্ত ফুটবলারদের সামান্য মাথা ব্যথা আর পেটের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়ার মতো কিছু হয়নি। আশা করছি, রবিবার ফাইনালের আগেই সবাই সুস্থ হয়ে যাবে।’ যা জানা যাচ্ছে, তাতে আক্রান্ত ফুটবলারদের আপাতত একটু দূরেই রাখা হচ্ছে সুস্থ ফুটবলারদের থেকে। যাতে এই জ্বর সংক্রমিত হতে না পারে। তবে একটাই স্বস্তির খবর, এমবাপে বা গ্রিজম্যান এখনও পর্যন্ত এই অজানা জ্বরে আক্রান্ত নন। আর তাতেই দেশঁর মুখেও হাসি। এত চোট আঘাত সামলে দলটাকে চাঙ্গা করে ফেললেন, আর মেসিদের বিরুদ্ধে ফাইনালের আগে সামান্য জ্বরকে মোকাবিলা করতে পারবেন না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.