সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবার শহরের সব রাজপথ এসে মিশেছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। গ্যালারিতে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল চিরআবেগের ডার্বিতে (East Bengal vs Mohun Bagan)।আগের ছ’টা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। সপ্তম সাক্ষাতে লাল-হলুদ শিবির সমানে যুঝে গিয়েছে মোহনবাগানের সঙ্গে। প্রথমার্ধে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ম্যাচ হয়ে উঠেছিল জমজমাট।কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে হুগো বুমোর (Hugo Bumos) গোল লক্ষ্য করে শটটা বদলে দিল চিত্রনাট্য।বুমোর দূরপাল্লার শটটা ঠিকমতো ধরতেই পারলেন না ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক কমলজিৎ। সেই গোলের পরই কি ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নিলেন হুগো বুমো-জনি কাউকোরা? লড়াই থেকে ছিটকে গেল ইস্টবেঙ্গল?
প্রশ্নটা করা হয়েছিল এশিয়ান অল স্টার খ্যাত গোলকিপার অতনু ভট্টাচার্যকে (Atanu Bhattyacharya)। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তিনি বলেন, ”অবশ্যই। বলটা কালেক্ট করতেই পারত কমলজিৎ। আমার দেখে মনে হল, কমলজিৎ আগেই কমিট করে ফেলেছিল। ও যেন স্থির করেই ফেলেছিল বলটা কিছুতেই ধরবে না। বলের লাইনে শরীরটাও রাখা উচিত ছিল। সেটাও করেনি। কোনওভাবে কিছু একটা করে বলটা বের করে দিতে পারলেই যেন ও বেঁচে যায়। বলটা কমলজিতের হাতের কাছেই ড্রপ পড়েছিল।আমরা যখন খেলতাম তখন বলের লাইনে গিয়ে কালেক্ট করতাম। তার মধ্যে একটা আলাদা মজা ছিল। ওর উচিত ছিল যেভাবে হোক বলের লাইনে শরীর নিয়ে যাওয়া। যাতে বলটা ধরতে না পারলেও শরীরে এসে তা বাধা পায়।”
অতনু আরও বলছেন, ”বাঙালি গোলকিপার থাকলে অনেক অ্যাডভান্টেজ থাকে। বাঙালি গোলকিপারদের শরীর নমনীয় হয়। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায় বাঙালি গোলকিপাররাই আধিপত্য দেখিয়ে এসেছে। আজকে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের গোল আগলানোর দায়িত্বে ছিল অবাঙালি গোলকিপার। এটা আমার কাছে পীড়াদায়ক।” মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কাইথ অবশ্য একাধিকবার দলকে বিপন্মুক্ত করেছেন।
প্রাক্তন গোলকিপার সন্দীপ নন্দী (Sandip Nandy) বলছেন, ”ইস্টবেঙ্গল দলটাকে প্রথমার্ধে দেখে বেশ ভাল লাগছিল। এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ছিল না। আগের ডুরান্ড কাপের ডার্বির সঙ্গে আজকের ম্যাচের আকাশপাতাল পার্থক্য ছিল। প্রথমার্ধের খেলা যদি দেখা যায় তাহলে মোহনবাগানকে বেশি সুযোগ দেয়নি ইস্টবেঙ্গল। কমলজিৎ ওই ভুলটা না করলে মোহনবাগান সহজে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারত না। টেকনিক্যালি খুব দক্ষ না হলে এই ধরনের বলের মোকাবিলা করা কঠিন। গোলকিপারের সামনে ড্রপ পড়া বল সবসময়েই বিপজ্জনক। বুমোর শটে জোর ছিল, গোলকিপারের সামনে ড্রপ পড়ল। কমলজিতের শরীর বলের লাইনে ছিল না। বলের লাইনে যদি কমলজিৎ শরীর নিয়ে যেতে পারত, তাহলেও বলটাও জালে জড়াত না। আমার দেখে মনে হল, বলটা যখনই ওর সামনে ড্রপ পড়েছে, তখন ওর মাথা আর কাজ করেনি।”
সন্দীপের মতে ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপিং পজিশনে রক্তাল্পতা আছে। তাই পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ম্যাচে একটা গোল মোহনবাগানকে অনেকটাই এগিয়ে দিল। সন্দীপ বলছেন, ”প্রথমার্ধে দুটো দলই সমানে লড়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এরকম ম্যাচে একটা ভুল হয়ে গেলে খেলোয়াড়দের মনোবল ভেঙে যায়। ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেটাই ঘটেছিল। প্রথম গোল পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল করে ফেলে মোহনবাগান।” লড়াই করেও পরিণতি সেই একই হল ইস্টবেঙ্গলের। হার মানতেই হল। ডার্বিতে সাতে সাত করল মোহনবাগান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.