সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সতীর্থরা তাঁকে বলতেন ম্যান মার্কিংয়ের মাস্টার। লড়াকু ফুটবলার হিসেবে ময়দানে ছিল বিরাট নাম। জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ চিরিচ মিলোভানের অন্যতম প্রিয় ফুটবলার ছিলেন তিনি। সেই নরিন্দর থাপা (Narinder Thapa) বৃহস্পতিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন।
তিন প্রধানেই খেলেছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ কলকাতা ময়দান। একসময়ের সতীর্থ কৃষ্ণেন্দু রায় স্মৃতিচারণ করে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বলছিলেন, ”উচ্চতা বেশি ছিল না নরিন্দর থাপার। কিন্তু ওই উচ্চতা নিয়েও অসাধারণ খেলে গিয়েছে। রাইট উইং, মিডল হাফে খেলতে পারত। ম্যান মার্কিংয়ে ওস্তাদ ছিল।” পাঞ্জাবের বাসিন্দা হলেও তিনি বাংলায় চলে আসেন। তিন প্রধানের জার্সিতে, জাতীয় দলের হয়ে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স করেন। বলতে বলতেই পুরনো দিনগুলো ছবির মতো ভেসে উঠতে থাকে যেন।
সব সময়ে নরিন্দর থাপার মুখে লেগে থাকত হাসি। ১৯৯০ সালে কলকাতা লিগের ম্যাচে হেড করতে উঠে কৃষ্ণেন্দু রায়ের (Krishnendu Roy) মুখে হেড করে ফেলেছিলেন নরিন্দর। মাঠে রক্তারক্তি কাণ্ড। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায় বলছিলেন, ”লিগে মোহনবাগানের সঙ্গে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের খেলা ছিল। আমি সেবার মোহনবাগানে। নরিন্দর খেলছিল মহামেডানে। আমি আর নরিন্দর দু’ জনই মাঝমাঠে খেলছিলাম। একবার হেড দিতে দিয়ে নরিন্দর থাপা হেড করে বসল আমার মুখে। যেহেতু ওর উচ্চতা কম ছিল, তাই বল কানেক্ট করতে না পেরে আমার মুখে হেড করে ফেলেছিল। রক্তারক্তি কাণ্ড মাঠে। আমার মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছে। দাঁত ভেঙে গলায় আটকে গিয়েছিল। আমাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে পিকে ব্যানার্জি টেনে মাঠের বাইরে নিয়ে আসেন। মাঠে চলে আসে অ্যাম্বুল্যান্স। ওদিকে নরিন্দরেরও মাথায় চোট লাগে। ও মাঠে শুয়ে পড়ছিল। আমি কথা বলতে পারছিলাম না। ইশারায় পিকে ব্যানার্জিকে এক গ্লাস জল দিতে বলি। ওই অবস্থাতে আমি কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সে উঠিনি। মাঠে নেমে পড়েছিলাম।” কৃষ্ণেন্দু রায়ের কাছ থেকে বল পেয়ে সেই ম্যাচে গোল করেছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য।
ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ায় চাকরি করতেন নরিন্দর। বছর দুয়েকের মতো বাকি ছিল অবসরের। সেরিব্রাল স্ট্রোকে তাঁর ডান দিকটা অসাড় হয়ে গিয়েছিল। বাঁ হাতে লিখতেন। অফিসে আসতেন। মাঠে যেমন ছিলেন অত্যন্ত স্পিরিটেড, লড়াকু ফুটবলার। একই ভাবে বাস্তব জীবনেও ছিলেন দারুণ লড়াকু। হার না মানা জেদে ফুটবল খেলে বহু ম্যাচ দলকে জিতিয়েছেন। অথচ প্রকৃতির নিয়ম মেনে নিয়তির কাছে শেষ পর্যন্ত হারতেই হল নরিন্দর থাপাকে। তাঁর বিদায়বেলায় ময়দানের মনখারাপ। যোদ্ধাকে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.