দুলাল দে: সকাল সকাল ফোন জো পল আনচেরির। আগেরদিন মালয়ালাম ভাষায় ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে বারবার করে প্রশংসা করেছেন রেনেডির কোচিংয়ের। তাই সকাল হতেই ফোন, রেনেডির নম্বর দরকার। পরের ফোনটা দেবজিৎ ঘোষের। তার আগে অবশ্য বাইচুংয়ের ফোন পেয়ে গিয়েছেন রেনেডি। আর ম্যাচ শেষে সবার আগে যার শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছেন, তিনি আলভিটো ডি’কুনহা। রেনেডি সম্পর্কে বলা হয়, ভারতীয় ফুটবলের অজাতশত্রু। বিজয়ন টু সুনীল। সবার খুব পছন্দের। জাতীয় দলে খেলার সময় মজা করে বাইচুং বলতেন, “জার্নেল সিংয়ের পর আমাদের রেনেডি সিং।” শক্তিশালী মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে সেই রেনেডির কোচিং দেখে তাঁর একদা টিমমেটরা উচ্ছ্বসিত হয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
প্রশ্ন: সকাল থেকেই অভিনন্দন বার্তা এসেছে নিশ্চয়ই?
রেনেডি: সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, আমার হাতে অস্ত্রশস্ত্র খুবই সীমিত। তার মধ্যেই রণনীতি সাজাতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি কাউকে ফোন করেছিলেন?
রেনেডি: হুম। স্যাভিও মেডেরাকে। কৃতজ্ঞতা জানাতে। উনিই তো লাইসেন্স দিয়েছেন। বব স্যরের সময়েও স্যাভিও সহকারী ছিলেন।
প্রশ্ন: মনে হচ্ছিল, রেনেডি নন। লাল-হলুদের সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে কোচিং করছিলেন বব হাউটন। সেই শেপ, সেই ট্যাকটিক্যাল ডিসিপ্লিন।
রেনেডি: কার সঙ্গে কার তুলনা করছেন? আমাদের ব্যাচের সবাই জানেন, ববকে আমি ড্যাডি বলে ডাকতাম। আমার জীবনের সেরা কোচ। ভীষণ, ভীষণ শ্রদ্ধা করি। শুধু আমি নই, আমাদের ব্যাচের সবাই।
প্রশ্ন: ভারতীয় ফুটবলের মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলর ঠিক মরশুম শুরুর মুখেই অবশেষে বিয়েটা করলেন? মানে লেডি লাক কাজ করছে?
রেনেডি: আমার স্ত্রী প্রথমে আইপিএস ক্র্যাক করেছিল। পরে আইএএস হয়েছে। অত্যন্ত মেধাবী হলে কি হবে, ফুটবলেও সমান আগ্রহ। লেডি লাক কি না বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আচ্ছা হাউটন বলতেন, এই ‘শেপ’ ব্যাপারটা ঠিকভাবে তুলতে একটা দলের দু’বছর লাগতে পারে। সাতদিনে কীভাবে ফুটবলারদের বোঝালেন?
রেনেডি: হারানোর কিছু ছিল না। ফুটবলারদের বোঝালাম, কী ট্যাকটিক্সে খেলতে চাই। শুধু ডিফেন্স নয়। অ্যাটাকে যখন যাব, তখনও শেপ রাখতে হবে। ব্লকিংটা মোটামুটি হয়েছে। কিন্তু অ্যাটাকের সময় ট্যাকটিক্স থাকছে না। যেদিন পারব, সেদিন ঠিক গোল আসবে। তবে প্লিজ, দু’জনের নাম উল্লেখ করবেন। একজন অন্বীত বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের দলের ম্যাচ অ্যানালিস্ট। এবং অন্যজন, ফিজিও চিরঞ্জিত মালাকার। কম সময়ের মধ্যে পুরো ব্যপারটা বোঝানোর জন্য এই দু’জন দারুণ সাহায্য করেছেন।
প্রশ্ন: আপনার কোচিংয়ে আদিল খান, এত ভাল খেললেন, দিয়াজের সময় সুযোগ পেতেন না?
রেনেডি: সেটা দিয়াজ বলতে পারবেন।
প্রশ্ন: এই সিস্টেমে হাউটনের সময় আপনি খেলেছিলেন বলেই কি এত সহজে প্রয়োগ করতে পারলেন?
রেনেডি: সেই দলের সঙ্গে এই দলের তুলনা হয় না। সেই দলে প্রতিপক্ষর থেকে বল কাড়ার জন্য ফুটবলারদের নামগুলো ভাবুন। সবাই জানেন, কী নিয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। হাতে শুধু চিমা। উলটোদিকে আঙ্গুলো, জাহু, মোর্তাজা ফল, গ্যাব্রিয়েল। ভাবুন পরিস্থিতিটা। তার উপর চোট। জয়নার এত ভাল খেলছিল, চোট পেয়ে গেল। আমার যেটা ভাল লেগেছে, দলের প্রত্যেক ফুটবলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফাইট করেছে। মনে এই ইচ্ছেটা না থাকলে, কোনও সিস্টেমই কাজে লাগবে না। চেষ্টা করেছি, প্রতিপক্ষ যেন একটাও ফ্রি পাস না করতে পারে। মানে, আমার দলের কোনও ফুটবলার মুভ করলে, তার পিছনে যেন একটা কারণ থাকে।
প্রশ্ন: চিমা তো বাড়ি চলে গেলেন?
রেনেডি: হুম। হাতে সুস্থ বিদেশি শুধু, আমির। আর তো একটা ম্যাচে কোচিং করাব। দেখা যাক কী হয়।
প্রশ্ন: কোচ হিসেবে শেষ ম্যাচটায় কি, ১১জন ভারতীয় ফুটবলার খেলানোর কথা ভাবছেন?
রেনেডি: বিদেশিদের থেকে যদি এগারোজন ভারতীয় ফুটবলার ভাল হয়, তাহলে তারাই সুযোগ পাবে। কিন্তু দলে ঢোকার জন্য সেরা ফুটবলার হতে হবে। স্বদেশি, বিদেশি নয়।
প্রশ্ন: মানে জামশেদপুর ম্যাচের পর রেনেডি সিং আবার মারিওর সহকারী?
রেনেডি: মরশুম শেষ হলে প্রো লাইসেন্সটা করে ফেলতে হবে। ততদিন পর্যন্ত এটাই বাস্তব।
প্রশ্ন: বাইচুং কী বললেন?
রেনেডি: সব সময় পিছনে লাগছে। কিন্তু আমার ব্যাচের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ওরা সবাই মিলে যেভাবে আমাকে উদ্বুদ্ধ করল, মনে হচ্ছে, আমি নই, গতকাল এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচের চেয়ারে আমার বন্ধুরাই ছিলেন। একই সঙ্গে লাল-হলুদ ফ্যানরা। সবাইকে ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।
প্রশ্ন: কিন্তু এই ফ্যানরাই গত মরশুমে রবি ফাউলারের সহকারীর অনেক সমালোচনা করেছিলেন?
রেনেডি: আমি পিছনে তাকানোর মানুষ নই। জীবনে খারাপ, ভাল দুটো সময়ই আসবে। নিজেকে প্রমাণের জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.