দুলাল দে: ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) দৌড় থামার নির্ঘন্ট বোধহয় ঠিক হয়ে গেল। মানে, ভারতীয় অধিনায়ক নিজেই ঠিক করে ফেলেছেন, কবে শরীর থেকে বরাবরের জন্য খুলে ফেলবেন ভারতীয় দলের জার্সি।
২০২৩ সালে চিনে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান কাপ। সুনীলের আপাতত ভাবনা, চিনের এশিয়ান কাপটাই হবে, জাতীয় দল থেকে বরাবরের জন্য অবসর নেওয়ার ডেডলাইন। কিন্তু ভারতীয় দলের বর্তমান যা পারফরম্যান্স, তাতে চিনের এশিয়ান কাপে আদৌ খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে কি না, সেটা নিয়েই তো বিশাল সন্দেহর বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। আর সত্যিই বাস্তবটা যদি সেরকমই হয়, তাহলে এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডটাই হয়তো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সুনীলের শেষ প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে ২০২৩ নয়। ২০২২ এর শেষের দিকেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে, ভারতীয় ফুটবলের বড় একটা অধ্যায়।
২০১১ কাতার এশিয়ান কাপ খেলেই জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন আরেক ভারতীয় ফুটবল তারকা বাইচুং ভুটিয়া। বব হাউটনের কোচিংয়ে সেটাই ছিল বাইচুংয়ের একমাত্র এশিয়ান কাপ। কিন্তু কাতার ছাড়াও সুনীল ছেত্রী সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতেও এশিয়ান কাপ খেলেছেন। ফলে এশিয়ান কাপ খেলা তাঁর জীবনে নতুন কিছু ঘটনা নয়। তবুও থামতে যখন হবেই, তখন এশিয়ান কাপের মঞ্চটাই জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার জন্য সেরা মঞ্চ হিসেবে মনে করছেন ভারত অধিনায়ক। সেটা নাহলে, এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের শেষ ম্যাচ। এমনিতে এবারের সাফে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে মারাত্মক হতাশ হয়ে পড়েছেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। শুরুতে দশজনের বাংলাদেশকে হারাতে না পারা। দ্বিতীয় ম্যাচে অপেশাদার দল শ্রীলঙ্কাকেও হারাতে ব্যর্থ হওয়া। সব মিলিয়ে দলের পারফরম্যান্সে রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। মালদ্বীপে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এদিন ফুটবলারদের শুধু জিমে অনুশীলন রেখেছিলেন কোচ ইগর স্টিমাচ। অনুশীলন শেষ করে শুধুমাত্র লাঞ্চ আর ডিনারের সময়েই হোটেলের রুমের বাইরে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বাকি সময়টায় নিজের রুমেই ছিলেন।
কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? মালদ্বীপে ফোন করে জাতীয় শিবিরে খোঁজ নিয়ে যা বোঝা গেল, কেউই বুঝতে পারছেন না, এরকম জঘন্য পারফরম্যান্সের কারণটা কি? দিল্লিতে ফেডারেশন দপ্তরেও সাফে ভারতের প্রথম দুটি ম্যাচে ব্যর্থতা নিয়ে দিনভর আলোচনা। সাফ খেলতে মালদ্বীপ যাওয়ার আগে সুনীল, গুরপ্রীতের মতো সিনিয়র ফুটবলারদের পাশাপাশি কোচ ইগর স্টিমাচের সঙ্গেও আলোচনায় বসেছিল ফেডারেশন। শুধু যে এই সাফে গিয়েই দলটা মুখ থুবড়ে পড়েছে এরকম নয়। এর আগে নেপালে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে গিয়েও জঘন্য খেলে ভারতীয় দল। প্রি-ওয়ার্ল্ড কাপের ম্যাচেও আফগানিস্তান, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রীতিমতো খারাপ পারফরম্যান্স। ফলে সাফেও টানা ব্যর্থতায় কোচের দিকে আঙুল তো রয়েইছে।
কিন্তু ফুটবলাররা এতটা খারাপ খেলছে কেন, সেটাই কেউ বুঝতে পারছেন না। তাহলে কি আইএসএলে যোগ্যতার তুলনায় অতিরিক্ত অর্থপ্রাপ্তিই ফুটবলারদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে? এনিয়ে শুধু ফেডারেশন কর্তারাও নয়। আইএসএলের কর্তারাও ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। কারণ, জাতীয় দলে এমন ফুটবলাররাও রয়েছেন, আপাতত জাতীয় দলে তাঁর অবদান সব মিলিয়ে ২ ঘন্টা। কিন্তু দেড় কোটি টাকা ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাঁকে দলে নিয়েছে আইএসএলের একটি দল! তবুও এখনও যদি পর পর দুটো ম্যাচে নেপাল আর মালদ্বীপের বিরুদ্ধে সুনীলরা জিততে পারেন, তাহলে ফাইনালে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। কিন্তু সুনীলকে এসব আর কিছুই প্রভাবিত করছে না। এশিয়ান কাপটাই সুনীলের জীবনের ডেডলাইন হয়ে গেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.