গৌতম ব্রহ্ম: শেষবেলাতেও গায়ে জড়ানো ছিল সবুজ-মেরুন পতাকা। আসলে আজন্ম মোহনবাগানই ধ্যান-জ্ঞান ছিল টিংকু দাসের। টিংকুর পা নেই। বছর ছ’য়েক আগে ট্রেনে কাটা পড়ে। সেই থেকে ট্রাই-সাইকেলেই যেতেন প্রিয় দলের খেলা দেখতে। জীবনটা ছিল অনেকটা যুদ্ধের মতো। প্রতি মুহূর্তে লড়াই করতে হত মানসিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। শেষপর্যন্ত সেই যুদ্ধে হার মানলেন বেলতলার বাসিন্দা টিংকু দাস। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনে আত্মহত্যা করলেন তিনি।
মোহনবাগানের (Mohun Bagan A.C.) ম্যাচ থাকলেই তিনচাকার পিছনে মোহনবাগানের ফ্ল্যাগ উড়িয়ে ‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলে যাত্রা শুরু করতেন এই কট্টর মোহনবাগানি। ডার্বি থাকলে তো কথাই নেই। শেষবার ডার্বি দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। ভেঙে যায় তাঁর ট্রাই-সাইকেল। পরে ক্লাবের তরফেই তাঁকে নতুন ট্রাই-সাইকেল কিনে দেওয়া হয়। তিনচাকার ছোট্ট দুনিয়ায় রং-রস-আনন্দ-আবেগ বলতে ছিল শুধু মোহনবাগান। শহরে মোহনবাগানের ম্যাচ থাকলে একটাও তাঁর মিস হত না। মোহনবাগানের খেলা মানেই টিংকু গ্যালারিতে হাজির। আফশোস ছিল, শারীরিক এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতার জন্য দূরের মাঠে যেতে পারতেন না। নিজের প্রিয় দলের খেলা চাক্ষুস করতে না পারার সেই বেদনা তাঁকে কুরে কুরে খেত।
পড়শিরা বলছেন, দূরের মাঠে খেলা দেখতে না পাওয়ার বেদনা দিন দিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছিল টিংকু দাসকে। সেই সঙ্গে আর্থিক অনটন তো ছিলই। বেলতলায় এক কুঁড়েঘরে বাস ছিল তাঁর। স্ত্রী অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। টিংকুর নিজের একটা ছোট দোকান ছিল। কিন্তু, তাতে দিন গুজরান হচ্ছিল শুধু। তাঁর খেলা দেখতে যাওয়ার শখ পূরণ হচ্ছিল না। সেই অকৃত্রিম বেদনা নিয়েই পৃথিবীকে বিদায় জানালেন টিংকু। শনিবার সকালে ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। টিঙ্কুর জামাইবাবু অজয় হাজরা জানিয়েছেন, আজ সকাল আটটা নাগাদ হেস্টিংস থানা টিংকুর স্ত্রী নমিতাকে ফোন করে এই খবর জানানো হয়।ঠিক কী কারণে টিংকু এত বড় পদক্ষেপ করল, তা জানেন না অজয়ও।
অন্যদিকে, একইদিনে প্রয়াত হয়েছেন মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা অশোক চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুতে ক্লাবের তরফে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে।
ছবি: পিন্টু প্রধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.