কেতন সেনগুপ্ত: আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল দেখতে শনিবার সকালে দোহ এয়ারপোর্ট (Doha Airport) নেমে প্রথমেই নজরে পড়ল আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ভিড়। কাতারে কাতারে আর্জেন্টাইন এসে পৌঁছিয়েছেন কাতারে (Qatar)। বিমানবন্দরের ঠিক বাইরে মেসির (Leo Messi) এক কাটআউটের সামনে বিশাল ভিড়। যেখানে এক বিদেশি মুদ্রা বিনিয়োগকারী সংস্থার মডেল হয়ে দাঁড়িয়ে ফুটবলের বরপুত্র। সবাই ব্যস্ত মেসির কাটআউটের সঙ্গে সেলফি তোলায়। ওখান থেকেই অনুভব করলাম কাপ ফাইনালের উত্তেজনার ছোঁয়া।
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে প্রচলিত কথা ‘হায়া’। কাতার বিশ্বকাপে থিম সং ‘হায়া হায়া’ যার অর্থ বেটার টুগেদার। আবার কাতারে ঢোকার চাবিকাঠিও সেই হায়া কার্ড। যা ডাউনলোড করে রাখতে হবে মোবাইলে। এবারের বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারেও এগিয়ে রয়েছে আগের বিশ্বকাপগুলোর থেকে। সবকিছুই যেন যান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত।
রবিবাসরীয় লুসেইলে যেন সত্যি হতে চলেছে স্বপ্নে দেখা বিশ্বকাপ ফাইনাল। ইউরোপীয় মহাশক্তির মুখোমুখি লাতিন আমেরিকান উন্নয়নশীল দেশ। মুখোমুখি প্যারিস সাঁ জাঁ-র দুই সতীর্থও। সারা বিশ্ব মুখিয়ে এই দ্বৈরথের অপেক্ষায়। শেষ হাসি কার মুখে ফুটবে? মেসির পায়ের জাদু ফুল ফোটাবে ফরাসি ডিফেন্সে? না কি এমবাপের অবিশ্বাস্য গতি স্কিল ছারখার করবে আর্জেন্টাইন দূর্গ? তবে পরিস্কার হয়ে গিয়েছে যে, কাপ আসরে রবিবারই শেষবার নামবেন মেসি। যা বিশ্বকাপ ফাইনালের উত্তেজনার পারদ আরও বাড়াচ্ছে।
আর্জেন্টিনার সাম্প্রতিক আর্থিক বিপর্যয় এবং মুদ্রাস্ফীতি যেন এক অটুট মেলবন্ধনের সৃষ্টি করেছে সমর্থক ও খেলোয়াড়দের মধ্যে। সব যন্ত্রণার মুক্তি দিতে পারে একটাই ছবি। মেসির হাতে বিশ্বকাপ। হোটেলের লবিতে আলাপ হল চারজন আর্জেন্টাইন সমর্থকের সঙ্গে। আজ সকালে এসে পৌঁছেছেন বুয়েনেস আইরেস থেকে। বললেন, “আমাদের দেশ থেকে মাঠে থাকবে প্রায় ৫০ হাজার লোক। তোমরা কাদের সমর্থন করবে?” বললাম, চিন্তা নেই, পঞ্চাশ হাজারের সঙ্গে গলা মেলাবে কাতারে থাকা ভারতীয় ও বাংলাদেশিরা। এরসঙ্গে যোগ হবে আরব এবং ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আসা বহু ফুটবলপ্রেমী। যাঁরা অধিকাংশই মেসির ভক্ত। আর্জেন্টিনার সমর্থক। ঠিক হল, সৌক ওয়াকফে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উন্মাদনা দেখতে যাব বিকেলের দিকে।
তর সইল না। দুপুর দু’টো নাগাদ হাজির হলাম দোহার সেই বর্ণময় স্থান সৌক ওয়াকফে। সেখানে চলছে আনন্দ উৎসব, ফুটবলের আনন্দ উৎসব। চোখে পড়ল চার দেশের সমর্থকদের সমাগম, বিশেষ করে মরক্কোর। বিরাট বড় মরক্কো ফ্ল্যাগে সই করছে সবাই। শুধু মরক্কো নয়, আরব ও আর্জেন্টিনা সহ নানা দেশের লোক। প্রথম আফ্রিকান দেশ যারা সেমিফাইনালের মুখ দেখল। এই কীর্তি তাদের কাছে যেন বিশ্বজয়ের সমান।
তবু মনে হয় বেল পাকলে কাকের কী! আর্জেন্টিনা জিতুক বা ফ্রান্স, তা নিয়ে আমাদের, ভারতীয়দের এত মাথাব্যথা কেন?আমরা তো ক্রমশ নেমেই চলেছি ফুটবল র্যাঙ্কিংয়ে। ভারত বিশ্বকাপ খেলবে, এই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে যাবে। কিন্তু আমরা যে ফুটবল পাগল। আর ফুটবলের আরেক নামই তো মারাদোনা (Maradona)। মারাদোনা জন্মেছে যে দেশে, ফেলেছি যে সে দেশকে ভালবেসে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.