আর্জেন্টিনা: ২ (৪) (মলিনা, মেসি)
নেদারল্যান্ডস: ২ (৩) (ওয়েগহ্রস্ট ২)
দুলাল দে, দোহা: কাতারের (Qatar) মাটিতে আর্জেন্টিনার স্বপ্নের দৌড় অব্যাহত। নীল-সাদা ব্রিগেডের এই স্বপ্নের কারিগর লিও মেসি (Leo Messi) এবং এমি মার্টিনেজ। মেসি গোল করালেন, নিজে করলেনও। আর মার্টিনেজ পেনাল্টি শুট আউটে জোড়া সেভ করে জিতিয়ে দিলেন নিজের দেশকে। দুই তারকার রূপকথার পারফরম্যান্সে ব্রাজিলের বিদায়ের দিনই সেমিফাইনালে চলে গেল আর্জেন্টিনা (Argentina)।
All of the emotions… pic.twitter.com/55zBVmMf9h
Advertisement— FIFA World Cup (@FIFAWorldCup) December 9, 2022
তাঁর পায়ে বল আসা মানেই তিনজন কমলা জার্সি কোথা থেকে হাজির হয়ে যাওয়া। তাঁর পায়ে বল আসা মানেই চারিদিক থেকে তাঁকে ঘিরে ফেলা। তাঁর কাছে বল আসার আগেই নিশ্চিত করে ফেলা যাতে তিনি এক ইঞ্চিও ফাঁকা জমি না পান। লিওনেল মেসি নামক এক ঐশ্বরিক ফুটবল প্রতিভাকে রুখে দিতে এমনই পরিকল্পনা ফেঁদেছিলেন ডাচদের বিশ্বখ্যাত কোচ লুই ভ্যান গল। কারণটা খুব পরিষ্কার। ভ্যান গল খুব ভাল করেই জানতেন, ১০ নম্বর জার্সির ওই ভদ্রলোককে আটকে দিতে পারলেই অর্ধেক আর্জেন্টিনা বোতলবন্দি হয়ে যাবে।
কিন্তু তিনি যে লিওনেল মেসি। যার বাঁ পায়ে বল এলে মুহূর্তের জন্য ঘড়ির কাঁটাও যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। যার ফুটবল প্রতিভা চরম নিন্দুককেও মুহূর্তে প্রেমিক বানিয়ে দিতে পারে। তাঁকে আটকে রাখাটা কি এতটাই সহজ! হাজারও মার্কিং, হাজারও রক্ষণের বেড়াজাল ভেঙে তিনি দিয়ে দিতে পারেন ডিফেন্স চেরা পাস। তিন অতন্ত্র প্রহরীর সতর্ক প্রহরা এড়িয়েও তিনি বাড়িয়ে দিতে পারেন গোলের ঠিকানা লেখা পাস। ডাচদের বিরুদ্ধে সেটাই করলেন কিং লিও। গোটা প্রথমার্ধ ভ্যান গলের নেদারল্যান্ডসের (Netherlands) রক্ষণভাগ শুধুই মেসিকে আটকানোর চেষ্টা করে গেল। আর আর্জেন্টিনা চেষ্টা করে গেল মেসির মার্কারদের ছেড়ে আসা ফাঁকফোকর দিয়ে ডাচ জালে বল জড়ানোর। কিন্তু সেই সুযোগ করে উঠতে পারছিলেন না ডি পল বা অ্যাকুনারা। যতক্ষণ না ম্যাচের ৩৫ মিনিটে মেসি নামক ওই নক্ষত্রের পা থেকে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা পাসটি বেরিয়ে এল। তিন জন ডিফেন্ডারের ঘেরটোপের মাঝখান থেকে আরও দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে লিও সতীর্থ মলিনার পায়ে যখন বলটি সাজিয়ে দিলেন, তখন তাঁর সামনে শুধু প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। আর্জেন্টিনার ওই তরুণ তুর্কি ডাচ গোলরক্ষককে ধরাশায়ী করে জালে বল জড়িয়ে দিতে ভুল করলেন না। সেই সঙ্গেই বিশ্বকাপ (FIFA World Cup) ফুটবলে নিজের সপ্তম অ্যাসিস্টটি পেয়ে গেলেন লিও। বিশ্বকাপে তাঁর থেকে বেশি অ্যাসিস্ট রয়েছে আর একজনের। তিনি দিয়েগো মারাদোনা।
মেসির ম্যাজিক সেখানেই শেষ হয়নি। গোটা ম্যাচে যখনই তিনি বল পেয়েছেন। তখনই কোনও না কোনও সম্ভাবনাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যখনই তিনি বল পেয়েছেন লুসাইল স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শক সমস্বরে চিৎকার করে উঠেছেন। এ হেন মায়াবি রাতে লিওর নাম স্কোরশিটে থাকবে না, তাও কি হয়! বিপক্ষের জালে বল জড়ানোর সুযোগ মেসি পেলেন ম্যাচের ৭৩ মিনিটে। যখন পেনাল্টি বক্সের মধ্যে অ্যাকুনাকে ফাউল করে বসলেন ডাচ ডিফেন্ডার ডামফ্রিস। বিশ্বকাপে নিজের শেষ পেনাল্টিটি মিস করেছিলেন মেসি। কিন্তু এদিন আর স্পট কিক থেকে ভুল করলেন না তিনি। বল জড়িয়ে দিলেন ডাচদের জালে। বিশ্বকাপে এটি মেসির দশম গোল। মারাদোনাকে টপকে গিয়েছেন তিনি।
তবে আসল নাটক শুরু হয় এর পর থেকে। দু’গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হার মানতে রাজি ছিল না ইউরোপীয় ফুটবলের অন্যতম শক্তি নেদারল্যান্ডস। গোল শোধ করতে নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণে নেমে পড়ে ডাচরা। একের পর এক আক্রমণে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে তছনছ করে দেয় তারা। সাফল্য আসে মিনিট দশেকের মধ্যেই। ৮৩ মিনিটে ওয়েগহ্রস্টের গোলে ব্যবধান কমিয়ে ফেলে নেদারল্যান্ডস। ম্যাচের শেষদিকে গোল শোধ করার জন্য আরও মরিয়া ভুমিকায় দেখা যায় ডাচদের। খেলা থেকে কার্যত হারিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মাঠের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলারও। একের পর এক হলুদ কার্ড দেখাতে থাকেন রেফারি। গোটা ম্যাচে তিনি মোট ১৬টি হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। কার্যত গোটা ম্যাচেই প্রশ্নের মুখে পড়ে জঘন্য রেফারিং। সেই বিশৃঙ্খলার জেরে ১০ মিনিটের ইনজুরি টাইম দেওয়া হয়। আর তাতেই বিপত্তি আর্জেন্টিনার। ইনজুরি টাইমের দশম মিনিটে এসে অনবদ্য বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিক থেকে গোল শোধ করে দেয় নেদারল্যান্ডস। ডি বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিকটি পায় নেদারল্যান্ড। সেই ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি গোলে শট না নিয়ে বুদ্ধিদীপ্তভাবে বল বক্সের ভিতর বাড়িয়ে দেয় ডাচরা। সেই বাড়ানো বল থেকেই গোল পায় নেদারল্যান্ডস। খেলা শেষের বাঁশি পড়ার কয়েক মিনিট আগে সমতায় চলে আসে দুই দল। ফলে খেলা গড়ায় এক্সট্রা টাইমে।
অতিরিক্ত সময়ে কমবেশি সুযোগ পায় দু’দলই। কিন্তু কোনও দলই সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। যার ফলে খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে। পেনাল্টি শুট আউটের প্রথম দুটি শটই বাঁচিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজ। উলটোদিকে গোল করেন মেসি এবং তাঁর সতীর্থরা। পেনাল্টি থেকে মেসি করেন বিশ্বকাপে নিজের ১১তম গোলটি। মার্টিনেজের নায়কোচিত পারফরম্যান্স সেমিফাইনালে পৌঁছে দেয় নীল-সাদা ব্রিগেডকে। জয়ের ফলে ঠিক যেদিন বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিল বিদায় নিল, সেদিনই আর্জেন্টিনা চলে গেল শেষ চারে। শেষ চারে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রোয়েশিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.