সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাপ অভিযান শেষ হতেই ব্রাজিল কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন তিতে। একইসঙ্গে দেশের জার্সিতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করে দিলেন নেইমার। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়ের পর আর তাঁকে ব্রাজিলের হয়ে খেলতে নাও দেখা যেতে পারে। এমন ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন।
টাইব্রেকারে হেরে হেক্সা জয়ের স্বপ্ন মরুভূমিতে চাপা পড়ে সেলেকাওদের (Brazil Football Team)। মরুদেশ সিক্ত নেইমার, থিয়েগো, ভিনিসিয়াসদের চোখের জলে। সাংবাদিক সম্মেলনে চোখা চোখা প্রশ্নের বাণ হাতে তৈরি মিডিয়াকুল। কিন্তু সেসব অস্ত্র প্রয়োগের আগেই দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা করে দেন তিতে। বলেন, “আমার বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে। দায়িত্ব ছাড়ছি।” এরপরই মনে করিয়ে দেন বছরের শুরুতেই করা নিজের ভবিষ্যৎবাণী। বলেন, “ফেব্রুয়ারিতেই বলে দিয়েছিলাম বিশ্বকাপের পর আর দায়িত্বে থাকব না। আমি এক কথার মানুষ।”
অবসরের ঘোষণায় অবশ্য চিঁড়ে পুরোপুরি ভেজাতে পারেননি ব্রাজিল বস। কেন এগিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ম্যাচে সমতা ফিরল? কেন মাত্র মিনিট তিনেক বাকি ও লিডে থাকা সত্ত্বেও ডিফেন্স খালি করে অলআউট চলে গেল প্রায় আস্ত দল? কেন দলের সেরা শুটার টাইব্রেকারে থাকবেন পাঁচ নম্বরে? হাজার চেষ্টা করেও এই বোমাবর্ষণ এড়াতে পারলেন না তিতে। অবশ্য নিজের মতো করে সাফাই গাওয়ার চেষ্টাও করে গেলেন। কিন্তু পারলেন কোথায়? বললেন, “পাঁচ নম্বর শট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ হয়। ওই সময় স্নায়ুর চাপ ধরে রাখা খুবই কঠিন কাজ। তাই নেইমারকে শেষে রাখা হয়েছিল।”
টাইব্রেকারে যাঁকে শেষে রেখে ক্রোয়েশিয়া হার্ডল টপকাতে চেয়েছিলেন তিতে (Tite), সেই নেইমারের অবশ্য বিশ্বকাপ কার্যত ‘শেষ’ই হয়ে গেল। এক বছর আগেই তাঁর উপর তৈরি হওয়া এক তথ্যচিত্রে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ২০২৬ বিশ্বকাপের সময় সম্ভবত তিনি মানসিক দিক থেকে আর হয়তো তাজা থাকবেন না। কাতার আসার আগে টিভি গ্লোবোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও মনে করিয়ে এসেছিলেন সেই কথা। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ যত সিদ্ধান্ত তিনি নেন, তার আগে বাবা নেইমার স্যান্টোস সিনিয়রের সঙ্গে আলোচনা করতে ভোলেন না। এবারও তার অন্যথা হয়নি। যদিও এদিন ম্যাচের পর যখন হাউহাউ করে কাঁদছেন নেইমার জুনিয়র (Neymar Jr.), তখন তাঁর বাবা বললেন, “তুমি আমাদের গর্বিত করেছ। কাঁদার কিছুই হয়নি।”
নেইমার বললেন, “গোটা বিষয়টা দুঃস্বপ্নের মতো। এখনও বুঝতে পারছি না কী হয়ে গেল। হারের ক্ষতটা দীর্ঘদিন থেকে যাবে। এটা ফুটবল। এখানে এগুলো হতেই পারে। বাড়ি ফিরে কাঁদব। দুঃখটা ভুলতে অনেকদিন সময় লাগবে। আমার মনে হয়, জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। বলছি না আর খেলবই না। তবে এটাও ঠিক, দলে অনেক নতুন ছেলে চলে এসেছে। আমায় ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।” চার বছর বাদে আমেরিকা, মেক্সিকো ও কানাডায় যখন বসবে বিশ্বকাপের আসর, তখন নেইমারের বয়স হবে ৩৪। মেসি, রোনাল্ডোর বয়স ৩৫ পার, দানি আলভেজ, পেপেরা কাতারে এসেছেন ৩৯ বছর বয়সে। তাহলে কেন হঠাৎ এত নিরাশ নেইমার?
নেইমার ২০২৬ বিশ্বমঞ্চে থাকবেনই না, এই কথা জোর দিয়ে বলা না গেলেও ৩৮ বছর বয়সি অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার যে এটাই শেষ বিশ্বকাপ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হতাশ শরীরটা টানতে টানতে মিক্সড জোন থেকে বার হওয়ার আগে বলে গেলেন, “জীবনে সবকিছু পাওয়া যায় না। ফুটবলার হিসাবে কাপটা ছোঁয়া হল না। কে জানে, হয়তো অন্য কোনও ভূমিকায় সেই স্বপ্ন সফল হবে!”
কয়েকদিন পর থেকে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করবে ব্রাজিল। আসবে নতুন কোনও স্বপ্নের সওদাগর। কিন্তু মার্কিন মুলুকে নেইমার নামক বাঁশিওয়ালা কি থাকবেন? নাকি সাম্বা সমুদ্রের গহ্বর থেকে উঠে আসবে নতুন কোনও মুক্তো? উত্তর দেবে সময়। তবে চোখ বন্ধ করে বলা যেতেই পারে সোনার পরী ঘরে নিয়ে যেতে ফের ঝাঁপাবে ব্রাজিল। ঝাঁপাবেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.