শিলাজিৎ সরকার: পর্তুগাল বনাম উরুগুয়ে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে সবে মিনিট পাঁচেক খেলা হয়েছে। হঠাৎই দেখা গেল, মাঠে ঢুকে পড়েছেন এক যুবক। গায়ে সুপারম্যান টি-শার্ট। যার সামনে লেখা ইউক্রেনের সঙ্গে থাকার বার্তা, আর পিছনে ইরানের মহিলাদের সম্মান করার কথা। হাতে ধরা একটা ‘প্রাইড ফ্ল্যাগ’, যা সমকামী আন্দোলনের অংশ। মাঠে ঢুকে কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ছোটাছুটির পর ধরা পড়ে গেলেন নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে। টানতে টানকে নিয়ে যাওয়া হল মাঠের বাইরে।
কাতারের মাটিতে ‘প্রতিবাদী’ ওই যুবকের নাম মারিও ফেরি। ইতালির এই যুবক কোনও সাধারণ দর্শক নন, নিজে ফুটবলারও বটে। আর বছর পয়ত্রিশের মারিওর সঙ্গে যোগ রয়েছে বাংলার ফুটবলেরও। কারণ কয়েক মাস আগে কলকাতা ময়দানের ক্লাব ইউনাইটেড স্পোর্টসের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মারিও। কল্যাণীতে দলের ফুটবলারদের সঙ্গেই অনুশীলন করতেন তিনি।
ইউনাইটেড কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বললেন, “মারিও দুর্দান্ত মানুষ। অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসে। এদেশে এসেছিল ভারতীয় ফুটবল নিয়ে জানার লক্ষ্য নিয়ে। আসলে ও আমাদের কোচ স্টিভ হার্বটসের বন্ধু। সেই সূত্রেই গত জানুয়ারিতে আমাদের এখানে এসেছিল। দলের সঙ্গেই থাকত, অনুশীলনও করত।” মরশুম শেষ হয়ে যাওয়ার আর ইউনাইটেডে সই করা হয়নি মারিওর। তবে এই ক্লাবের হয়ে গঙ্গাসাগরে একটা প্রতিযোগিতায় খেলছেন তিনি।
ইতালিতে অপেশাদার ফুটবল খেললেও বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে মারিও-র সুসম্পর্ক রয়েছে। বিশেষত জুভেন্তাসের বহু কর্তা ও ফুটবলার মারিও-কে ভালভাবে চেনেন। ভারতেও এসেছিলেন, এদেশে ফুটবলের উন্নতিতে কীভাবে ইতালি থেকে সাহায্য করা যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে। সোমবার রাতে তাঁকে মাঠে নেমে প্রতিবাদ করতে দেখে অবাক হননি নবাব। তাঁর কথায়, “মারিও এমনই। ওর এমন কাজ আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত নয়। আগেও বিভিন্ন ম্যাচে নেমে ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।”
সোমবার টি-শার্টের সামনে ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মারিও। সেটা যে শুধু প্রচার পাওয়ার জন্য নয়, তাও জানিয়েছেন নবাব। “জানুয়ারির দিকে মারিও আমাদের এখানে আসে। এরপর রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর খবর শুনেই সোজা ইউক্রেন চলে যায়। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে ইউক্রেনেই ছিল ও।”- বলছিলেন ইউনাটেড কর্তা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও দেখা গিয়েছে, পোল্যান্ড সীমান্ত পার করার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের মানুষকে সাহায্য করছেন তিনি।
‘দ্য ফ্যালকন’ নামে পরিচিত মারিও মঙ্গলবার ইনস্টাগ্রামে লিখলেন, ‘ফিফা সবরকমভাবে প্রতিবাদ থামাতে চাইছে। আর্মব্যান্ড থেকে শুরু করে গ্যালারির ফ্ল্যাগ– সবই নিষিদ্ধের তালিকায়। তাই আমি ফিফাকে একটা বার্তা দিলাম মানুষের হয়ে। আমরা এমন একটা পৃথিবী চাই, যেখানে সব ধরনের মানুষকে স্বাগত জানানো হয়। আর ভাল কিছু করার জন্য আইন ভাঙা অপরাধ নয়।’এমন প্রতিবাদের জন্য মারিওকে রক্ষণশীল কাতারে বড় শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁকে মুচলেকা দিতে হয়েছে যে আর এমন কোনও কাজ করবেন না। কিন্তু ‘সুপার মারিও’-কে আটকানো কি এতই সোজা?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.