Advertisement
Advertisement

Breaking News

FIFA World Cup 2022

শৈশবে গাড়ি পরিষ্কার করেছেন, ব্রাজিলের নায়ক রিচার্লিসন ফিরেছিলেন মৃত্যুমুখ থেকে

ড্রাগ-চোর ভেবে রিচার্লিসনের কপালে বন্দুকের নল ঠেকিয়েছিলেন এক মাদক পাচারকারী।

FIFA World Cup 2022: Here is a back story on Brazil star Richarlison | Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:November 26, 2022 1:52 pm
  • Updated:November 26, 2022 1:52 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গাণ্ডীবের মতো ঋজু ভঙ্গিমায় শূন্যে ছুড়ে দিয়েছেন শরীরটাকে। তারপর ১৮০ ডিগ্রির এক অবিশ্বাস্য মোচড়, আর অবিস্মরণীয় গোল। টাটকা-স্মৃতির মায়াজালে জীবন্ত এক সেলেকাও সৈনিকের বীরত্বব্যঞ্জক গোল। সার্বিয়া (Serbia) ম্যাচের সেই সুখস্মৃতি বারেবারে ঘোর জাগাচ্ছে সাম্বা প্রেমীদের মনে, দোল তুলছে হৃদয়ের ফুটবল আবেগে। সেই আবেগের নতুন নাম, রিচার্লিসন ডে আনদ্রাদে। ২৫ বছরের ব্রাজিলীয় ফরেওয়ার্ড সব দেখছেন, আর মুচকি হাসছেন। কারণ, জীবনধারার প্রতিপাতায় তার রুদ্ধশ্বাস জীবন যে ওই একটা অতিমানবিক গোলের চেয়ে আরও আকর্ষণীয়, আরও বেশি রোমহর্ষক।

দারিদ্রের সঙ্গে আশৈশব লড়াই করেছেন। চোখের সামনে দেখেছেন বাবা-মার দাম্পত্যজীবনকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বঞ্চনা আর উপেক্ষা। রিচার্লিসনের (Richarlison) এই ঘাতপ্রতিঘাতে মোড়া জীবন স্রোত থেমে যেতে পারত একটা বন্দুকের নলের গর্জনে। থামেনি। মৃত্যুভয় গ্রাস করেনি তাকে। কারণ রিচার্লিসন জানতেন, ঈশ্বর তার সহায়!

Advertisement

[আরও পড়ুন: এবার থেকে বিশ্বকাপে থাকবে ‘মারাদোনা দিবস’, ঘোষণা ফিফা প্রেসিডেন্টের]

নোভা ভেনেসিয়ার ভিয়া রুবিয়াতে বড় হয়ে ওঠা রিচার্লিসনের। ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বের এই অঞ্চলটা যত না প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, ততটাই কুখ্যাত স্মাগলিং, ড্রাগ পাচার, কোকেনের মতো মাদকচক্রের রমরমার কারণে। ঠাট্টার ছলে রিচার্লিসন নিজেই বলেছেন, ‘‘ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাকার কারণে বহুবার আমার জীবন খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।’’ তাকেই ড্রাগ-চোর ভেবে কপালে বন্দুকের নল ঠেকিয়েছিলেন এক মাদক পাচারকারী। বন্দুকের সেই শীতলস্পর্শ কপালে নিয়েও ‘রিচার্লি’র অনন্য জবাব ছুঁড়েছেন, ‘‘ট্রিগারটা টিপবেন না। মরে যাব।’’

FIFA World Cup 2022: Here is a back story on Brazil star Richarlison

বেঁচে ফিরেছিলেন রিচার্লিসন। ওই অকুতোভয় মানসিকতাই তার যাপিতজীবনে এক ছোট্ট স্বপ্ন বুনে দিয়েছিল, বড় ফুটবলার হতে হবে। হয়েছেন। সঙ্গে হয়েছেন ব্যতিক্রমী। নিভতে দেননি বন্দুকের নলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর স্পর্ধাকে। তাই তো ব্রাজিলীয় (Brazil) আদিবাসী ব্রুনো পেরেইরা আর ব্রিটিশ সাংবাদিক দোম ফিলিপ্স যখন নিখোঁজ হন, তখন রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধী স্বর শোনা যায় কেবল রিচার্লিসনের গলায়। বলে ওঠেন,‘‘খুঁজুন, ওদের খুঁজে বের করুন।’’ প্রশাসন সেই গর্জনে নড়েচড়ে বসে। খোঁজ মেলে আমাজনের বুকে ‘গুম’ হয়ে যাওয়া নিথর ব্রুনো আর ফিলিপ্সের।

রিচার্লিসন এমনই। ব্যতিক্রমী। অনন্য। ২০১৮-তে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল জার্সিতে গোলের পর নিজেই বিখ্যাত করেছেন পায়রার নাচখ্যাত ‘ডান্স ডো পোম্বো’। সতীর্থরা সেই অর্থেই তার ডাকনাম দিয়েছিলেন পোম্বো। সাম্বা ফুটবলের সেই ‘কবুতর’ রিচার্লিসনের বিশ্বকাপ খেলাটাও একসময় অনিশ্চিত দেখাচ্ছিল। কাফ মাসলে চোটের পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। একমনে ডেকেছিলেন ঈশ্বরকে। সেই প্রার্থনা বিফলে যায়নি। রিচার্লিসন ফিরেছেন। ফিরেছেন স্বমহিমায়। এমন এক ‘নাম্বার নাইনে’র অপেক্ষায় তো প্রহর গুনছিল গোটা সাম্বাজগৎ।

[আরও পড়ুন: দোষীদের শাস্তি দিতে হবে, ২৬/১১ হামলার বর্ষপূর্তিতে পাকিস্তানকে বার্তা জয়শংকরের ]

‘পেটকাঁটি চাদিয়াল মোমবাতি বগ্গা, আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা’, বাঙালির চিরপ্রিয় গানের সঙ্গে কতই না মিল ব্রাজিলীয় রিচার্লিসনের। ফুটবলের বাইরে আর যে জিনিসে সেলেকাও ফরোয়ার্ডের ঝোঁক তা হল, ঘুড়ি। রিচার্লিসন নিজেই বলেছেন, ‘‘যখন বাড়ি ফিরতাম। ছুটিতে একটাই কাজ থাকত ঘুড়ি ওড়ানো। ওই ঘুড়ি আর ফুটবল নিয়েই তো বড় হয়েছি। কতবার নেশার প্রলোভন এসেছে, আমার বন্ধুরা তাতে গা ভাসিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। আমি যাইনি। পেটের জ্বালা মেটাতে অন্যের গাড়ি পরিষ্কার করেছি। কিন্তু নেশার হাতছানিতে সাড়া দিইনি।’’

যন্ত্রণা সয়ে রিচার্লিসন নীলকণ্ঠ হয়েছেন। আর হয়েছেন বলেই আর অবিশ্বাস্য জীবনযুদ্ধের পাশে ম্লান হয়ে যায় সাফল্যের উপচে পড়া আলো, আবেগের সুনামি। থেকে যায় অনন্ত চাপের মুখে ওই গাণ্ডীবের মতো ঋজু ভঙ্গিমায় শূন্যে ছুড়ে দেওয়া শরীরটা। তারপর ১৮০ ডিগ্রির এক অবিশ্বাস্য মোচড়, আর অবিস্মরণীয় গোল। সেলেকাও সাম্রাজ্যের নতুন নায়ক হয়ে প্রতিভাত হয় শুধু নামটা রিচার্লিসন ডে আনদ্রাদে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement