দুলাল দে: করোনা (Covid-19) আবহে এবার বাতিল হতে চলেছে ভারতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা বিশ্বকাপ (U-17 Women’s World Cup )। আপাতত যা পরিস্থিতি FIFA হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই ২০২১–এর বিশ্বকাপ বাতিল করে তা পরের বছর ২০২২–এ ফের ভারতেই করার ঘোষণা করতে পারে।
ছেলেদের অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের পর মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবল ফের ভারতে। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয় ফুটবল প্রেমীদের মতো মহিলা ফুটবলাররাও এই খবরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ মানে আয়োজক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। ফলে ফুটবলার জীবন বদলে যাওয়ার হাতছানি। আর চোখের সামনে ছেলেদের অনূর্ধ্ব–১৭ বিশ্বকাপ আয়োজন দেখার সুযাগ তো ছিলই। ফলে ফের ফুটবলকে ঘিরে একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হওয়ার সুযোগ ছিল। পর পর দুটো জুনিয়র বিশ্বকাপ ফিফার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসে ফেডারেশন (All India Football Federation) সভাপতি প্রফুল্ল প্যাটেলও দারুণ কাজ করেছিলেন। ফিফার তরফ থেকে ঘোষণা হয়েছিল, ২০২০–র নভেম্বরে হবে মহিলা বিশ্বকাপ। সেই মতো ফিফার কর্তারা এসে এখানকার ম্যাচ স্টেডিয়াম থেকে প্র্যাকটিস মাঠ সব কিছু খতিয়ে দেখে গিয়েছিল। এমনকি ম্যাচ ভেনুও ঘোষণা হয়ে যায়।
বিশ্বকাপকে লক্ষ্য রেখে যে মুহূর্তে ভারতীয় দলের প্রস্তুতি তুঙ্গে, ঠিত তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো নেমে আসে করোনা ভাইরাস। ফলে শুধু খেলার প্রস্তুতিই নয়, এর সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়, বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতিও। বিশ্বের যে দেশগুলি বিশ্বকাপ খেলবে, সেই দেশগুলিও করোনার প্রকোপে খেলতে পারছিল না যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচগুলি। এর উপর নভেম্বরে মাঠে দর্শক হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। ফলে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা করে ফিফা থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নভেম্বরের বদলে মহিলা বিশ্বকাপ হবে ফেব্রুয়ারিতে। ফলে একটা সময় ভারতীয় দলের বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি ফের শুরু হয়ে যায় ফেব্রুয়ারিকে লক্ষ্য করে।
এদিকে, সেপ্টেম্বর মাস শেষ হতে চলল, অথচ করোনা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি নেই। এই অবস্থায় ফ্রেব্রুয়ারি মাসে কী ভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করা সম্ভব, ভারতীয় ফুটবল কর্তারা কেউ বুঝে উঠতেই পারছেন না। এখনও পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, ফেব্রুয়ারি মাসে সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাবে। ফলে দেশে বিশ্বকাপ হবে, অথচ মাঠে দর্শক ঢোকার অনুমতি না থাকায় গ্যালারি শূন্য অবস্থায় ম্যাচ চলবে, বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য এটা কিছুতেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। ফেডারেশন কর্তারা চাইছিলেন, ছেলেদের মতো এই বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়েও বিশ্বের দরবারে ফের ভারতীয় ফুটবলের নাম উজ্জ্বল করতে। কিন্তু করোনা আবহে বিশ্বকাপের আয়োজন করলে, তা অত্যন্ত জৌলুসহীন ভাবেই হবে। ফলে ফিফার তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও আপত্তি না থাকলেও ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল প্যাটেল চাইছিলেন না, এরকম ভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করতে।
প্রফুল্ল প্যাটেল যেরকম ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি, সেরকম ফিফার কাউন্সিল সদস্যও। ভারত থেকে প্রফুল্ল প্যাটেলই প্রথম ফিফার কাউন্সিল সদস্য হওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন। ফলে ফিফার অন্য কাউন্সিল সদস্যদের পুরো ব্যাপারটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বোঝান, ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন কীভাবে মেয়েদের বিশ্বকাপটাকেও জাঁকজমক ভাবে আয়োজন করতে চাইছে। প্রফুল্ল প্যাটেল প্রস্তাব দেন, ২০২১–র ফেব্রুয়ারিতে মেয়েদের বিশ্বকাপ করোনার জন্য স্থগিত রেখে ২০২২ সালে তা আয়োজন করলে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন তা দারুণ ভাবে আয়োজন করতে সক্ষম হবে। প্রফুল্ল প্যাটেলের প্রস্তাব মোটামুটি ভাবে মেনে নিয়েছেন ফিফার কাউন্সিলের সদস্যরা। ফলে ফেডারেশন প্রেসিডেন্টর মতো ফেডারেশনের অন্যান্য কর্তারাও আশাবাদী, মেয়েদের অনূর্ধ্ব–১৭ বিশ্বকাপ আয়োজন করা থেকে ভারতকে বঞ্চিত করবে না ফিফা। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো ঘোষমা করে দেওয়া হবে, ২০২১ মহিলা বিশ্বকাপ বাতিল করে তা ২০২২এ ভারতেই হবে। একদিকে সমস্যা মিটবে। কিন্তু আরেকদিকে হয়তো বাড়বে। জাতীয় দলে যে মেয়েদের বয়স এখন প্রায় ১৭–র ঘরে। ২০২২এ গিয়ে তাঁদের বয়স ১৭ অতিক্রম করে যাবে। তাঁদের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.