দুলাল দে: আচ্ছা মেসি (Lionel Messi) বা রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) কি তাঁদের মতো করে খোঁজ নেন, কে এই সুনীল ছেত্রী?
একদিন মেসির গোল সংখ্যা টপকে যাচ্ছেন। একদিন পুসকাসকে ধরে ফেলছেন। স্বাভাবিকভাবেই আপামর ভারতীয় জনতার মনের কৌতুহল, যেদিন ফিফার সাইটে দেখা যায়, তাঁকে গোল সংখ্যায় টপকে গেলেন একজন ভারতীয় স্ট্রাইকার, আদৌ কি লিওনেল মেসি খোঁজ নিয়ে দেখেন, বিশ্বফুটবলের কোন গ্রহের বাসিন্দা এই সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)?
তবে এরপর থেকে বোধহয় ফুটবল বিশ্বের আর কাউকেই আর আলাদা করে খোঁজখবর করতে হবে না। কারণ, সুনীলকে ফুটবলবিশ্বে পরিচিত করার দায়িত্ব নিয়েছে খোদ ফিফা। ফুটবলবিশ্বে ভারতের মতো পিছিয়ে থাকা একটি ফুটবল দেশ থেকে কীভাবে সুনীলের মতো স্ট্রাইকার উঠে এসেছেন, সেটারই সন্ধান করতে চাইছেন ফিফা কর্তারা। সুনীল ছেত্রী নামক সেই বিস্ময়কে সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে চাইছে ফিফা। আর তাই সুনীল ছেত্রীর উপর তথ্যচিত্রর কাজও শুরু করে দিয়েছে তারা।
[আরও পড়ুন: বহরে বাড়ছে ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ, আয়োজিত হবে ৩ দেশের ১৬টি শহরে]
প্রথম যখন ফিফার (FIFA) তরফে সুনীলের কাছে তথ্যচিত্র করার প্রস্তাব আসে, বিশ্বাস করতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। কারণ, ফিফা সেই ফুটবলারদের উপরেই তথ্যচিত্র বানায়, যাঁরা হয় বিশ্বকাপ জিতেছেন, নাহলে বিশ্বকাপ ফুটবলে অসাধারণ খেলেছেন। সেখানে বিশ্বকাপ খেলা তো দূর অস্ত। এশিয়ান কাপে খেলার জন্যই প্রতি চার বছর অন্তর লড়াই চালাতে হয়। কিন্তু দিনের পর দিন গোল করে বিশ্বফুটবল তারকাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া সুনীলের অন্দরমহল বিশ্বের সামনে খুলে দিতে চায় ফিফা। আর তাই সুনীলের উপর তথ্যচিত্র শুরু।
সুনীলের উপর এই তথ্যচিত্রের বিষয়ে ফিফার তরফে যে চুক্তি করা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার শর্ত রয়েছে, যতক্ষণ না এই তথ্যচিত্র ফিফার তরফে প্রকাশ না করা হবে, ততক্ষণ যেন সুনীলের তরফ থেকে কোনওকিছু প্রকাশ না হয়। তাই তথ্যচিত্রর প্রসঙ্গে উঠলেই মুখে কুলপ আঁটছেন সুনীল।
আপাতত যা জানা গিয়েছে, এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের জন্য জাতীয় শিবিরে যোগ দেওয়ার আগেই বেঙ্গালুরুতে সুনীলের বাড়ি গিয়েছিল ফিফার পুরো দল। তথ্যচিত্র তোলার জন্য ফিফা বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসেছে সুইজারল্যান্ড থেকে। কিন্তু ক্রুরা সবাই মুম্বইয়ের। জাতীয় শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে বেঙ্গালুরুতে সুনীলের বাড়িতে একপ্রস্থ শুটিং হয়ে গিয়েছে তথ্যচিত্রটির। এরপর এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ড চলা পর্যন্ত ফিফার তরফে এই তথ্যচিত্রটা যাঁরা করছে, সেই পুরো দলটা ছিল কলকাতায়। আপাতত এরা সুনীলের সঙ্গেই কিছুদিন কাটাবেন।
সুনীলের সঙ্গে কথা বলার পর ফিফার কর্তারা বুঝেছেন, ভারত অধিনায়কের এই বদলে যাওয়ার পিছনে রয়েছে প্রাক্তন জাতীয় কোচ বব হাউটনের অবদান। হাউটনের সঙ্গে কথা বলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় যোগাযোগ করেন ফিফা কর্তারা। জানানো হয়, একটি দল দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবে সুনীলের উপর হাউটনের সাক্ষাৎকার নিতে। তবে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে বাইপাস হয়েছে বব হাউটনের। ফলে তাঁর ইন্টারভিউ নেওয়ার পরিকল্পনা কিছুটা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রাক্তন জাতীয় কোচের ইন্টারভিউ নেওয়া সম্ভব না হলেও, আপাতত ভারতে সেই সব ব্যক্তির সঙ্গে তথ্যচিত্রর প্রয়োজনে কথা বলতে চান তাঁরা। যাঁরা সুনীলের এই উঠে আসার পিছনে কোনও না কোনওভাবে জড়িত। সুনীলের প্রথম স্কুল, দিল্লিতে প্রথম খেলার মাঠ, সব কিছুর শ্যুট করছেন তাঁরা।
বেঙ্গালুরুতে সুনীলের বাড়িতে যেদিন শ্যুট হয়েছে, সেদিন মূলত সুনীল আর সোনমের উপরেই শ্যুট হয়েছে। খেলা না থাকলে বেঙ্গালুরুর বাড়িতে সারাদিন দু’জনে কীভাবে কাটান, সেটাই মূলত শ্যুট হয়েছে। প্রথমে ঠিক ছিল, তথ্যচিত্রর জন্য বৃহস্পতিবার সকালেই শহর ছাড়বেন সুনীল। কিন্তু মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যই সুনীল শহর ছাড়বেন শুক্রবার সকালে।
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের (Aroop Biswas) সঙ্গে অনেক আগেই ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে ফোনে কথা হয়েছিল সুনীলের। কিন্তু খেলার জন্য কলকাতায় আসতে পারছিলেন না বলেই, দু’জনের মিটিং হচ্ছিল না। এদিকে, কলকাতায় আসার পর দু’জনের মধ্যে আবার ফোনে কথা হলেও, সুনীল যেহেতু টিম হোটেলে বায়োবাবলের মধ্যে ছিলেন, তাই ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারছিলেন না। অবশেষে এদিন দু’জনের সময় হওয়ায়, বিকেলে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের অফিসে স্ত্রী সোনমকে নিয়ে চলে যান ভারত অধিনায়ক। দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত আলোচনার পর সুনীলের হাতে মিষ্টির হাঁড়ি তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
রাজ্য সরকার যে একটি ফুটবল অ্যাকাডেমি চালাচ্ছে জানতেন না সুনীল। অরূপ বিশ্বাস যখন অ্যাকাডেমির ব্যাপারে সবিস্তারে বলেন, রীতিমতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ভারত অধিনায়ক। পরের বার যখন কলকাতায় আসবেন, সেই সময় যাতে বাংলার অ্যাকাডেমি একবার ঘুরে আসেন, সুনীলকে অনুরোধ করেন অরূপ বিশ্বাস। ভারত অধিনায়কও অ্যাকাডেমি ঘুরে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। দু’জনের কথার মাঝেই প্রসঙ্গ ওঠে মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারিকে নিয়ে। পর পর দুটো রনজি ম্যাচে মনোজ তিওয়ারির শতরান নিয়ে অবাক হয়ে যান ভারত অধিনায়ক। ক্রীড়ামন্ত্রী সুনীলকে বলেন, “দেশে আর কোনও মন্ত্রী কিন্তু রনজিতে শতরান করেননি। এটাও কিন্তু বাংলার জন্য একটা রেকর্ড।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.