অ্যাকাডেমির উঠতি প্রতিভাদের সঙ্গে সুব্রত পাল।
সব্যসাচী বাগচী: একুশ বছরের বর্ণময় ফুটবল জীবনের ইতি টেনেছিলেন সুব্রত পাল (Subrata Paul)। ফুটবল মাঠে সাফল্য, ব্যর্থতা তো ছিলই। ছিল গ্লানিও। সে সব পিছনে ফেলে রেখেই আর মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football Team) ‘স্পাইডারম্যান’। তবে গ্লাভসের সঙ্গে বুটজোড়া তুলে রাখলেও, ফুটবলকে একেবারে বিদায় জানাতে পারলেন না। কয়েক বছর ধরেই চলছে তাঁর অ্যাকাডেমি। এবার সম্পূর্ণ নিখরচায় চলা অ্যাকাডেমিতে খেলা ছেলে-মেয়েদের জন্য প্লেসমেন্টের সুযোগ করে দেবেন কিংবদন্তি গোলকিপার। গঠন করেছেন একটি ক্লাব। নাম দিয়েছেন এআইপিএল এফসি।
কেন এমন উদ্যোগ নিলেন তিনি? সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে টেলিফোনে সুব্রত বলেন, “বাংলা ফুটবলের স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনার একটা প্রচেষ্টা। অনেক বছর ধরেই আমার অ্যাকাডেমি চলছে। তবে অ্যাকাডেমি খুলে ফেললেই তো চলে না। বাচ্চা ছেলে-মেয়েগুলোকে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। তাই এবার থেকে আমার অ্যাকাডেমি প্লেসমেন্টের কাজও করবে। গত কয়েক বছর একাধিক ক্লাবের কাছে গিয়েছিলাম। যাতে আমার অ্যাকাডেমির ছেলে-মেয়েদের সুযোগ দেওয়া হয়। আশাকরি এবার থেকে আর সমস্যা হবে না।”
তবে এমন কর্মকাণ্ড কিন্তু রাতারাতি হয়নি। অ্যাকাডেমিকে আরও বড় আকারে নিয়ে যেতে তাঁর লেগে গিয়েছিল পাঁচ বছর। সঙ্গে রয়েছেন অন্যতম পার্টনার শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী। স্বভাবতই ভবিষ্যতে আরও বড় ভাবে এই অ্যাকাডেমি গড়ে তুলতে চাইছেন সুব্রত। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল খেলা প্রাক্তন গোলকিপার ফের যোগ করলেন, “আমাদের ছেলে-মেয়ে দুটি দলই রয়েছে। আমাদের অ্যাকাডেমি থেকে একটি দল ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ খেলবে। এছাড়া এফএসডিএল রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগের আয়োজন করে। সেখানে আমাদের দল খেলছে। এর পর ২১ মার্চ থেকে ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ ডু শুরু হবে। সেখানেও খেলবে আমাদের মহিলা দল। এছাড়া অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫ আই লিগে খেলার জন্যও দল গড়া হবে।”
প্রাথমিক ভাবে তাঁর লক্ষ্য ছিল রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমি গড়ার। তবে সেই স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি। যদিও থেমে থাকতে চাইছেন না প্রাক্তন ফুটবলার। তিনি ফের বলেন, “এখনও পর্যন্ত রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমি গড়তে পারিনি। এদিকে প্রায় ৩০০ ছেলে-মেয়ে এবং বাচ্চা আমাদের অ্যাকাডেমিতে এখানে অনুশীলন করে। সোদপুরের নাটাগড় ফ্রেন্ডস ক্লাব এবং সোদপুর ক্লাবে অনুশীলন হয়। এছাড়া আরও একটি মাঠ লিজ নিচ্ছি, যাতে ছেলে-মেয়েরা অনায়াসে অনুশীলন করতে পারে।”
রাজ্যের বুকে একাধিক ফুটবল অ্যাকাডেমি রয়েছে। সেগুলো একটা সময় পর নামমাত্র অ্যাকাডেমি হিসেবেই থেকে যায়। যদিও সুব্রতর দাবি তাঁর উদ্যোগ আলাদা দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। শেষে তিনি যোগ করেছেন, “এই অ্যাকাডেমি নিয়ে কতদূর ভাবছি সেটা এখনই বলতে চাই না। ভবিষ্যতে আমার কাজ সেটা বলবে। ফুটবল কেরিয়ারেও বেশি কথা বলতাম না। এখনও সেই নীতি বজায় রেখেই এগোতে চাই। আমি কর্ম করি। ফলের আশা করি না। আমাদের লক্ষ্য হল কিছু ছেলে-মেয়ের পাশে দাঁড়ানো। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।”
একটা সময় টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছিলেন সুব্রত। এর পর বাকিটা ইতিহাস। এহেন ‘স্পাইডারম্যান’ কি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন? সেটা অবশ্য সময় বলবে। তবে আপাতত নতুন প্রজন্মের ফুটবলার গড়াকেই পাখির চোখ করছেন সোদপুরের মিস্টু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.