দুলাল দে: এই জন্যই বোধহয় তিনি আর সবার থেকে একটু আলাদা। তিনি বলতে, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, একদা ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে। খেলা ছাড়ার পর ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, সেটাও তিন বছর হয়ে গেল। কিন্তু, রয়ে গিয়েছেন একই রকম মানবিক। একই রকম ভাবে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দানের অভ্যাস। করোনা ভাইরাসের জেরে সাধারণ মানুষ যখন বিপন্ন, তখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মনোরঞ্জনও। শুধু চিকিৎসার সমস্যার জন্যই নয়, লকডাউনের জেরে যখন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে। তখন কিছুটা হলেও তাঁদের জন্য সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করলেন তাঁর একমাসের পেনশন। সঙ্গে আবেদন করলেন, ‘সবাইকে বিশালভাবে সাহায্য করতে হবে এরকম নয়। সামান্য সামান্য দিয়েও বড় সাহায্য করা সম্ভব। এটাই তো সেই সময়, যখন দরিদ্রদের পাশে সাহায্যর হাত নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’
খেলোয়াড়ি জীবনেও সবসময় এভাবেই বরবার এগিয়ে এসেছেন তিনি। সহ-ফুটবলারদের দাবিদাওয়া হোক বা সুযোগ সুবিধা। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য সবার আগে। সহ-ফুটবলারদের পেমেন্ট দেওয়ার পর ক্লাবের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন নিজের পেমেন্ট নিয়ে। বরাবর এরকমই তিনি। তাই চারিদিকে যখন আলোচনা, এই লকডাউনে (lock down) ‘দিন আনি, দিন খাই’ মানুষের চলবে কী করে, মন ভাল নেই মনোরঞ্জনেরও। তবে চুপ করে বসে না থেকে ঠিক করে ফেলেন, পাশে দাঁড়াতে হবে। আর তারপরই নিজের একমাসের পেনশন দান করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।
এপ্রসঙ্গে প্রাক্তন জাতীয় ফুটবল অধিনায়ক বলছিলেন, ‘ক্রীড়াবিদদের সমাজে সবাই অন্য চোখে দেখে। তাই দেশের এই বিপদে তাঁদেরই সবার আগে এগিয়ে আসতে হয়। আমরা যখন খেলতাম, এই সমর্থকরাই তো গ্যালারিতে বসে আমাদের উৎসাহিত করত। আজ এরাই যখন বিপন্ন, তখন আমাদেরও উচিত এদের পাশে দাঁড়ানো।’
মনোরঞ্জনের মতো সিনিয়র ফুটবলারই শুধু নয়। এই বিপদের দিনে আর্তের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন জুনিয়র ফুটবলার অভিজিৎ সরকারও। এই মরশুমে ইস্টবেঙ্গলে ছিলেন তিনি। মারাত্মক যে পেমেন্ট পেয়েছেন এরকমও নয়। কিন্তু তাঁর অনেক সিনিয়র ফুটবলার যা করতে পারেননি, এদিন সেটাই করে দেখালেন তিনি। নিজের টাকায় চাল, ডাল ও আলু কিনে ব্যান্ডেলের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করেন অভিজিৎ। জুনিয়র ফুটবলারের এই উদ্যোগ দেখে সকলেই প্রশংসা করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.