দুলাল দে:
পাত্রী-পাত্রী পরিচয়
পাত্র-ঐশিক মুখোপাধ্যায়।
পিতা-অলোক মুখোপাধ্যায় (প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার, মোহনবাগান অধিনায়ক)।
নিবাস-টালিগঞ্জ।
পাত্রী-দেবশ্রুতি ঘোষ।
পাত্রীর বাবা-শিশির ঘোষ (প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার, মোহনবাগান অধিনায়ক)।
নিবাস-রিষড়া।
বিবাহের দিন-১৫ ডিসেম্বর।
দুই প্রখ্যাত জাতীয় ক্রীড়াবিদের সন্তান নিজেদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন, এই উদাহরণ ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে হাতে গুনলে খুব একটা পাওয়া যাবে না। একমাত্র প্রাক্তন ক্রিকেটার সৈয়দ কিরমানি আর আবিদ আলির ক্ষেত্রেই এরকম নিদর্শন ছিল। কিরমানির ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আবিদ আলির মেয়ের। কিন্তু ফুটবল সার্কিটে এরকম ঘটনা আগে কখনও ঘটেছে কি না, কেউ মনে করতে পারছেন না। সন্তানদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সূত্রে আত্মীয়তার বন্ধনে এবার নিজেদের বাঁধতে বসেছেন প্রাক্তন দুই তারকা ফুটবলার অলোক মুখোপাধ্যায় (Alok Mukherjee) এবং শিশির ঘোষ (Sisir Ghosh)। ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে অলোক মুখোপাধ্যায় আর শিশির ঘোষের আত্মীয়তার সম্পর্কের নাম হবে ‘বেয়াই।’
সবুজ-মেরুন জার্সি ছেড়ে ’৯৩-’৯৪ মরশুমে ‘হেড মাস্টার’ শিশির যখন ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরলেন, হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন তাঁর অগুনতি মোহনবাগান সমর্থক। সেই সময় অলোক মুখোপাধ্যায় অবশ্য সবুজ-মেরুন জার্সিতেই। সেই বছরের কথা উঠলেই এখনও শিশির বলেন, ‘‘অলোকদার বাঁ পায়ের স্লাইডিংয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেঁপে উঠত।’’ আর টপ বক্সের মাথায় শিশির ঘোষের হেড? যার জন্য নাম হয়ে গিয়েছিল ‘হেড মাস্টার।’ অলোক বলছেন, ‘‘উলটোদিকে শিশির থাকা মানেই তো টেনশন।’ এখন সব টেনশন শেষ। প্রবল প্রতাপশালী ডিফেন্ডার-স্ট্রাইকার সব এখন এক দলে। আর তা সম্ভব হয়েছে নিজেদের সন্তানদের জন্য। অলোক মুখোপাধ্যায়ের ছেলে ঐশিক মুখোপাধ্যায় এবং শিশির ঘোষের মেয়ে দেবশ্রুতি ঘোষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন ১৫ ডিসেম্বর। এমনকী দু’বাড়ির একসঙ্গে রিসেপশনের জায়গাও বুকিং হয়ে গিয়েছে। আলিপুরে রেলের ক্লাবেই হবে সেই মহার্ঘ্য অনুষ্ঠান।
শিশির যখন মোহনবাগানের অধিনায়ক, তখনও ম্যাচের দিন মাঠে নামার সময় বল নিয়ে কিছুতেই সবার সামনে দাঁড়াতেন না। এগিয়ে দিতেন সিনিয়র অলোক মুখোপাধ্যায়কে। সবার আগে বল নিয়ে অলোক। ঠিক পিছনে শিশির। জাতীয় দলের প্রাক্তন ডিফেন্ডার বলছিলেন, “শিশিরের অদ্ভুত কুসংস্কার ছিল। মাঠে নামার সময় কিছুতেই সবার আগে নামবে না। তাই আমাকে এগিয়ে দিত।’’ এবার অবশ্য দু’জনের সম্তানেরাই এগিয়ে এসেছেন ভারতীয় ফুটবলের দুই অতীত তারকাকে আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ করতে। কিন্তু কী করে সম্ভব হল ব্যাপারটা?
শিশির ঘোষ বলছিলেন, “কোনও কিছুই ঠিক ছিল না। হঠাৎ করেই হয়ে গেল ব্যাপারটা।” অলোক মুখোপাধ্যায় এবং শিশির ঘোষ দু’জনেই এই ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি না হলেও সম্পর্কের সূত্রপাত বছর খানেক আগে। পারিবারিক অনুষ্ঠানেই পরস্পরের ছেলে-মেয়েকে দেখা দুই পরিবারের। তারপর স্ট্রাইকার আর ডিফেন্ডার এক পথে। এক মতে। বন্ধুত্ব হয় ঐশিক আর দেবশ্রুতির মধ্যেও। আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে দু’জনেই বসতে চলেছেন বিয়ের পিঁড়িতে।
অলোক মুখোপাধ্যায়ের ছেলে ঐশিক এই মুহূর্তে তুতিকোরিনে ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত। আর শিশির ঘোষের মেয়ে দেবশ্রুতি ইংরেজিতে মাস্টার্স করে পড়াশোনা আরও এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। চার হাত এক হতে এখনও ৯ মাস বাকি। তবে দেবশ্রুতি অলোক মুখোপাধায়ের বাড়ির মেয়ে হয়ে গিয়েছেন অনেক আগে। এদিন মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘আগে শিশিরের মেয়ে ছিল। এখন আমার মেয়ে।’’ আর শিশির বলছিলেন, ‘‘অলোকদা ভীষণই ভাল মানুষ। ওর পরিবারও সেরকমই।’’ বিয়ের এখনও ঢের বাকি। কিন্তু বিয়ে বাড়ি বুক থেকে কাদের নেমন্তন্ন করা হবে, তার তালিকা তৈরি এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে দুই বাড়িতে। শিশির বলছিলেন, ‘‘নেমন্তন্নর তালিকায় দু’জনের তো প্রচুর কমন লোক থাকবে।’’ তাতে অলোকের বক্তব্য হল, ‘‘একদিকে ভালই। সব কিছুই চেনা-জানার মধ্যে।’’
অলোকের অধিনায়কত্বে গুয়াহাটিতে সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতেছিলেন শিশির। শুধুই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল নয়। একটা সময় ভারতীয় ফুটবলে এই দুই তারকার আলোর ছটায় আলোকিত ছিল ভারতীয় ফুটবল (Indian Football)। কোন দলের জার্সি পরবেন এই দুই তারকা, তা নিয়ে দলবদলের বাজারে কম নাটক হয়নি। আর ফুটবলার শিশির ঘোষের স্টাইল স্টেটমেন্ট তো সর্বজনবিদিত। একটা ম্যাচে মোজার উপর অ্যাঙ্কলেট পরলেন শিশির। তারপর থেকে সব ফুটবলারের মোজার উপর অ্যাঙ্কলেট। শর্টসটা একটু গুটিয়ে নিলেন একবার। তারপর থেকে সব ফুটবলার শর্টস গুটিয়ে পরা শুরু করলেন। তবে অলোক মুখোপাধ্যায় আর শিশির ঘোষ এখন পিছনের বেঞ্চে। সামনে তাঁদের সন্তানেরা। তাঁরাই না এই দুই তারকাকে এক সূত্রে বাঁধলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.