Advertisement
Advertisement

Breaking News

Euro Cup 2024

হিটলার নির্মিত স্টেডিয়ামে ইউরোর ফাইনাল, স্পেন-ইংল্যান্ড লড়াইয়ে প্রকৃত জয় ফুটবলের

ইংল্যান্ড ফুটবলারদের খোঁচা স্পেনের। অন্যদিকে ইউরো জিতে অমরত্বের খোঁজে সাউথগেট।

Euro Cup 2024: Spain will face England for Euro Cup glory
Published by: Arpan Das
  • Posted:July 14, 2024 11:55 am
  • Updated:July 14, 2024 11:55 am  

স্টাফ রিপোর্টার: বার্লিনের অলিম্পিয়াস্তাদিও স্টেডিয়ামের ইতিহাসের সঙ্গে একটা প্রত‌্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। একাত্তর হাজার দর্শকাসনের যে বিশাল ফুটবল গর্ভগৃহ রবিবাসরীয় ইউরো ফাইনালে আলভারো মোরাতার স্পেন (Spain Football Team) এবং হ‌্যারি কেনের ইংল‌্যান্ডকে (England Football Team) ইউরো ফাইনালে স্বাগত জানাবে, সে স্টেডিয়াম এমন এক চরিত্র সৃষ্ট, যিনি মৃত‌্যুর ৭৯ বছর পরেও একই রকম ঘৃণ‌্য। এক রকম নিন্দিত।
ভদ্রলোকের নাম?
অ‌্যাডলফ হিটলার!
ঠিকই পড়েছেন। ১৯৩৬ সালে হিটলারের নির্দেশেই বার্লিনের অলিম্পিয়াস্তাদিও-র জন্ম। অলিম্পিক আয়োজনকে কেন্দ্র করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলার সৃষ্ট বিভিন্ন সৌধ যেমন ধুলিস‌্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে, তেমন বার্লিন স্টেডিয়ামও গুঁড়িয়ে দিতে পারতেন জার্মানরা। পারতেন, কিন্তু দেননি। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর জার্মান সমাজে একটা বিশ্বাস খুব প্রচলিত। তা হল, কলঙ্কের ইতিহাস থেকে পালিয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি হও। তার চোখে চোখ রেখে তাকাও!
কী অদ্ভুত সমাপতন দেখুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের জার্মানির সঙ্গে যে দেশের সবচেয়ে বেশি হানাহানি বেঁধেছিল, পাকেচক্রে সেই দেশই আজ হিটলার-সৃষ্ট মাঠে এক ফুটবল গরিমার সামনে দাঁড়িয়ে! ব্রিটেন তো ইংল‌্যান্ড নামেই ফুটবলটা খেলে! ১৯৬৬ সালের পর আজ পর্যন্ত কখনও ফুটবলের বড় টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি ইংল‌্যান্ড। বিশ্বকাপ। ইউরো। কিস‌্যু না। ‘থ্রি লায়ন্স’-এর এক এবং একমাত্র প্রাপ্তি ’৬৬ বিশ্বকাপ। সে দিক থেকে দেখলে, রবিবার ইউরো (Euro Cup 2024) জিতলে বিলিতি ফুটবলের সোনার ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলতে পারেন গ‌্যারেথ সাউথগেট। নাইট উপাধিও বাঁধা!

[আরও পড়ুন: বদলে গেল শ্রীলঙ্কা সফরের সূচি, কবে পরীক্ষা শুরু কোচ গম্ভীরের?]

সাউথগেটের একটা মস্ত স্বস্তি হল, তাঁর টিমে কোনও চোট-আঘাত নেই। কেভিন ট্রিপিয়ার আর হ‌্যারি কেনের চোট নিয়ে সামান‌্য উড়ো খবর ছিল। কিন্তু ইংল‌্যান্ড কোচ শনিবার বলে দিয়েছেন, ‘‘যতদূর আমি জানি, দু’জনেই খেলার মতো জায়গায় রয়েছে।’’ সাউথগেটের আবার বড় অস্বস্তি, ফাইনালের প্রতিপক্ষের টিমটার নাম স্পেন। যারা অনিন্দ‌্যসুন্দর ফুটবল খেলে গোটা গ্রহকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মাঝমাঠ। ফরোয়ার্ড লাইন। সব যেন সোনায় মোড়ানো। লামিন ইয়ামাল। নিকো উইলিয়ামস। আলভারো মোরাতা। ড‌্যানি অলমো। ডিফেন্সেও বা কম কী? ডানি কার্ভাহাল নামের এক প্রাচীর রয়েছেন সেখানে। খোঁচা দেওয়াও চলছে বিস্তর। স্পেনের আয়মেরিক লাপোর্তে বলে দিয়েছেন, ‘‘ইংল‌্যান্ড টিমটা দারুণ। ওদের প্রত‌্যেক প্লেয়ার ভালো। কিন্তু সেই অসম্ভব দক্ষতাসম্পন্ন প্লেয়াররা ইউরোয় মোটেও ভালো খেলছে না!’’
অর্থাৎ, যতই ইংল‌্যান্ড ফাইনালে উঠুক, দারুণ কোনও সমীহ স্পেনের থেকে সাউথগেটের টিম পাচ্ছে না। বিলিতি মিডিয়া জবাবি-অস্ত্র হিসেবে একটা প্রতিবেদন লিখে দিয়েছে। স্পেনের পাঁচ দফা দুর্বলতা বার করে। যেমন, ভঙ্গুর ডিফেন্স। সেন্টার ব‌্যাক নিয়ে অনিশ্চয়তা। অমুক। তমুক। এর বাইরে রড্রি এবং ফোডেন–ম‌্যাঞ্চেস্টার সিটির দুই সতীর্থের সম্মুখসমর রয়েছে। আছে আশাবাদ, আছে হুঙ্কার। সাউথগেট যেমন জানেন, রবিবারের ইউরো ফাইনাল কোচ হিসেবে তাঁকে উচ্চবর্ণ প্রজাতিতে তুলে দিতে পারে। ইংল‌্যান্ড কোচ বলেওছেন, ‘‘আমি জানি, রবিবার যদি জিততে পারি, জীবনটাই বদলে যেতে পারে আমার। কিন্তু আমি যে কোনও রেজাল্টের জন‌্যই তৈরি। বলতে যন্ত্রণা হচ্ছে। তবু বলছি।’’ নেদারল‌্যান্ডসের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোল করা অলি ওয়াটকিন্স আবারও শুনিয়ে রেখেছেন, ‘‘যা বুঝছি, রিয়াল মাদ্রিদ আর আমাদের ডিএনএ একই। হারার আগে আমরা হারি না!’’

Advertisement

[আরও পড়ুন: ফের ভারতের ‘বিশ্বজয়’! লেজেন্ডসদের ফাইনালে পাকিস্তানকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন যুবরাজরা]

কিন্তু তার পরেও এর একটাও নয়। রোববার ইউরো ফাইনালে যে-ই জিতুক, শাপমুক্ত হবে বার্লিনের অলিম্পিয়াস্তাদিও। শোনা যায়, ’৩৬-এর অলিম্পিকের সবচেয়ে সফল ক্রীড়াবিদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেসি ওয়েন্সের জয়-জয়কার (চার-চারটে সোনা জিতেছিলেন ওয়েন্স) নিয়ে প্রবল নাক সিঁটকেছিলেন হিটলার। কারণ, জেসি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ! তাঁর শরীরে আর্যরক্ত ছিল না যে! মানুষকে যে নিকৃষ্ট মানদণ্ড দিয়ে দেখতেন হিটলার। কিন্তু ওই যে, ইতহাস ঠিক শোধ নিয়ে নেয়। দরকারে অষ্টাশি বছর পরেও! রোববার বার্লিনের অলিম্পিয়াস্তাদিওয় যুযুধান হবে যে দুই টিম, তারা শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গে বিশ্বাসী নয়। তারা বিবিধ বর্ণ, বিবিধ সংস্কৃতির সমন্বয়ে বিশ্বাসী। যাহা ইংল‌্যান্ডে, তাহাই স্পেনে।
অত ভাবতে হবে না। ইউরো ফাইনালের সম্ভাব‌্য শ্রেষ্ঠ আকর্ষণের দিকে তাকালেই তো হয়। লামিন ইয়ামালের বাবা মরক্কোর। মা ইকোয়েটোরিয়াল গায়নার। এবং তাঁর ধমনী দিয়ে মোটেও হিটলারের অতীব প্রিয় আর্যরক্ত বইছে না!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement